২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের পর থেকে এ পর্যন্ত ৮৩৭ এর অধিক হয়রানিমূলক গায়েবি মামলায় ২০ হাজার ৩২৬ জন বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে ৭৩ হাজার ১২৩ জন বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে। আহত হয়েছেন ৮ হাজার ২৪৯ জনের অধিক নেতা, আর ৩৫টি মামলায় গত ৩ তিন মাসে ৬৩৬ জন নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজারেরও অধিক মামলায় বিএনপি ও বিএনপির সহযোগী গণসংগঠন সমূহের ৫০ লক্ষের বেশি নেতাকর্মী-সমর্থকদের আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (২৯ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত আইনজীবীসহ সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহরের দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফোরামের সভাপতি ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আব্দুল জব্বার ভুইয়া, সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল, আইনজীবী মোহাম্মদ আলী, মো. আক্তারুজ্জামান, গাজী তৌহিদুল ইসলাম, আবদুল্লাহ আল মাহবুব, জহিরুল ইসলাম সুমন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিরোধী দল তথা জনগণের ন্যায্য আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস অব্যাহত রেখেছে। সাধারণ মানুষও রেহাই পাচ্ছে না। তারা হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা গায়েবী মামলাকে বিরোধী দল দমনের প্রধান অবলম্বনে পরিণত করেছে। এই কাজে তারা রাষ্ট্রের পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে দলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে যথেচ্ছ ব্যবহার করছে। সরকার ও সরকারি দল বিচার বিভাগকে তাদের অপতৎপরতার প্রধান বাহনে পরিণত করেছে। বিরোধী দলসমূহের নেতাকর্মীদের বিচারিক হয়রানি এবং উপযুক্ত তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে তড়িঘড়ি করে সাজা প্রদান সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের চলমান ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী এবং সকল শ্রেণীপেশার মানুষকে বর্তমান একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরশাসক কর্তৃক হয়রানি, গুম, খুন, মামলা, গ্রেফতার ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত সাজার শিকার হতে হচ্ছে। এমনকি সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও হয়রানি থেকে মুক্তি পাচ্ছে না দেশের আইনজীবী সমাজও। আইনজীবীদেরকে নজিরবিহীনভাবে আদালত প্রাঙ্গণ ও চেম্বার থেকেও গ্রেফতার করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যেই সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যারিষ্টার শাজাহান ওমর, পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাসুদুর রহমান, এডভোকেট নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ, এডভোকেট মাহমুদ হাসান মিলন, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য এডভোকেট সাইফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এডভোকেট মো. জাকির হোসেন, এডভোকেট আবু আল ইউসুফ টিপু ও এডভোকেট আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এডভোকেট আনোয়ার হোসেন, এডভোকেট দিদারুল আলম ও এডভোকেট লোকমান শাহ বর্তমানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়রানিমূলক জিঘাংসার শিকার হয়ে জেল হাজতে রয়েছেন। সরকারের এই নিপীড়ন চিত্রই প্রমাণ করে দেশে আজ কতটা ভয়াবহ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও বিরোধী মতকে নির্মূলের চেষ্টা চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল অভিযোগ করেন. জামিন প্রাপ্তির সকল বৈধ কারণ থাকলেও আইনজীবীসহ কারাবন্দি রাজনৈতিক কর্মীদের জামিন প্রদান করা হচ্ছে না। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় ইতোপূর্বে আগাম জামিন প্রদান করা হলেও বর্তমানে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অধিকাংশ ফৌজদারি আদালতসমূহ আগাম জামিনের দরখাস্ত শুনানি করতে অপারগতা প্রকাশ করছেন। ফলে রাজনৈতিক হয়রানির মাত্রা বেড়েই চলেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমরা আইনজীবী সমাজ বর্তমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান সংগ্রামে অংশ নেওয়া বিরোধীদল, বিরোধী মত ও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ওপর সরকারের জঘন্যতম ও নজিরবিহীন নিপীড়ন বন্ধ করে গ্রেফতারকৃত সকল আইনজীবীর মুক্তি দাবি করছি। আইনজীবী সমাজের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে আমরা চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গ্রেফতারকৃত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জনাব মির্জা আব্বাস ও জনাব আমির খসরু মাহমুদসহ সকল রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি ও সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
এআইএম/এমএইচএম