দীর্ঘদিন যাবত উচ্চ আদালতে বাংলায় রায় প্রদান ও আইনগুলোকে বাংলা ভাষায় রায় দানের বিষয়টি আলোচিত হয়ে আসছে। নানা মহল থেকে বিভিন্ন সময় এদি বাস্তবায়নে কর্মসূচিও পালন করা হয়। এ অবস্থায় আইন বাংলায় অনুবাদ ও রায় প্রদানের বিষয়ে সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। একইসেঙ্গে কাজটি কঠিন না হলেও এত সহজও নয় বলে মন্তব্য করেছেন সদ্য দায়িত্ব নেওয়া প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি ঢাকার আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্য বক্তাদের এ সংক্রান্ত বক্তব্যের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলায় আইন তর্জমা করা কঠিন কাজ না, তবে এত সহজও নয়। আইনের ভাষাগুলো জটিল। বাংলা করলে দেখা যায়, এক-দুই লাইন পড়ার অবস্থাও নাই। এটি সাধারণ মানুষের বুঝেও আসে না। এ জন্য নতুন আইনগুলো বাংলা ভাষাতে করা হচ্ছে। আর আগের আইনগুলো ইংরেজিতে রয়েছে। এটাকে ভাষান্তর করতে হলে, আমাদের সেই মানের অনুবাদক লাগবে। এই দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। এখানে সরকারের মন্ত্রীরা আছেন। আশাকরি তারা সেই উদ্যোগ নেবেন।
বাংলায় রায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় বাংলায় রায় দেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। আমাদের অনেক জজ সাহেবেরা বাংলায় রায় দিয়েছেন। তারা চেষ্টা করে গেছেন এবং এখনও চেষ্টা করছেন বাংলায় রায় দিতে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সুপ্রিম কোর্টের ট্রান্সলেটর অ্যাপের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, সুপ্রিমকোর্টে একটি অ্যাপস রয়েছে। এখানে ইংরেজিতে রায় হলেও তা বাংলায় পড়া যায়। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো, এই অ্যাপসে যে ‘বাংলা’ তা পড়লে আপনি নিজের শ্রুতিমধুর বাংলা ভুলে যাবেন। এই বাংলা, যান্ত্রিক বাংলা।
এ সময় টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রী মহোদয় এখানে আছেন। তাকে বলবো আরও সহজ কোনো অ্যাপসের ব্যবস্থা করা যায় কিনা দেখবেন।’
বিজ্ঞাপন
বিচার বিভাগের মামলা জটের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ১৮ কোটি মানুষের দেশে মাত্র ১৮০০ জন বিচারক রয়েছেন। এতে করে প্রত্যেকের ভাগে কি পরিমাণ মামলা পড়ছে আপনারা চিন্তা করেন। প্রতিটা মামালা নিষ্পত্তিতে অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটা মামলা হলো। সেটা জেলা আদালতে থাকে। সেখান থেকে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ভোগান্তিতে ফেলার জন্য নানাবিধ প্রদক্ষেপ নেয়। নানা আবেদন নিয়ে উচ্চ আদালতে আসে। সেখান থেকে আবার তা নিম্ন আদালতে যায়। একের পর এক পক্ষ এই কাজ করে। এরপর যখন সেই মামলা শেষ হয়, তখন পরাজিত পক্ষ সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত আসে। এতে একটা মামলা শেষ হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়।
আইনজীবীদের পেশাদার হওয়ার আহ্বন জানিয়ে তিনি বলেন, মামলা জট সমাধানে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। আইনজীবীদের বুঝতে হবে যে, আইন একটা পেশা। এটা কোনো ব্যবসার জায়গা না। পেশার কাজ পেশাদারিত্বের সাথে করতে হবে। আমরা যারা বিচারক তাদের দায়িত্ব যত তারাতারি সম্ভব মামলা নিস্পত্তি করা।
এমএইচ/একে
