শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

চ্যালেঞ্জ যেন কাটছেই না নবীন আইনজীবীদের

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

Court
কোলাজ: ঢাকা মেইল

অক্লান্ত পরিশ্রম আর মেধা খাটিয়ে স্বপ্ন জয়ের দ্বারপ্রান্তে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়া নবীনরা। কেউ সাত বছর, কেউবা পাঁচ বছর আবার কেউ দুই/তিন বছর পরিশ্রমের পর ধাপে ধাপে উত্তীর্ণ হয়েছেন বার কাউন্সিলের সনদ প্রাপ্তির পরীক্ষায়। এমসিকিউ, লিখিত ও ভাইভা- এই তিন ধাপে উত্তীর্ণ হয়ে চূড়ান্তভাবে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরও প্রতিনিয়ত নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের।

নবীনদের ভাষ্য- পুঁথিগত বিদ্যার চেয়ে বাস্তবতা যে অনেক কঠিন, তা কোনোমতেই অস্বীকারের সুযোগ নেই। গুরুবিদ্যা প্রফেশনের ধরনটাই এরকম। পুস্তকে পড়ার চেয়ে বাস্তবের কাজগুলো অনেক কঠিন। আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরও এখনো নিয়মিত শিখতে হচ্ছে, কোর্টে যেতে হচ্ছে, ধারণা নিতে হচ্ছে সিনিয়রদের কাছে। অনেক সময় আবার প্রত্যাশা অনুযায়ী আর্থিক সচ্ছলতাও আসছে না।


বিজ্ঞাপন


Dhaka-Mail1

চলতি বছর আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে এমসিকিউ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী। পরপর তিনটি পরীক্ষা দিয়ে চূড়ান্তভাবে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে বর্তমানে নিয়মিত মামলা পরিচালনায় অংশ নিচ্ছেন পাঁচ হাজার আইনজীবী। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা বারের নবীন আইনজীবী হোসাইন আহমদ (জীবন)। এবারই আইনজীবী সনদ পেয়েছেন। তবে প্রাপ্তির শুরুতেই তাকে মুখোমুখি হতে হচ্ছে নানা চ্যালেঞ্জের।

বাস্তব অভিজ্ঞতা জানিয়ে হোসাইন আহমদ বলেন, এক থেকে দেড় বছর প্রত্যেক আইনজীবীর জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং সময়। আমরা নতুন আইনজীবী হয়ে কোর্টে আসি, তাই আমাদের কোর্ট প্র্যাকটিস সম্পর্কে বেশি জ্ঞান থাকে না। চাইলেও নিজে নিজে কোর্ট প্র্যাকটিস সম্ভব নয়। এই সময়ে সিনিয়রদের সঙ্গে থেকে কাজ শিখতে হয়, আমরাও তাই করছি।

Dhaka-Mail2.2


বিজ্ঞাপন


তবে এ ক্ষেত্রে আয়ের সুযোগ খুবই কম উল্লেখ করে নবীন এই আইনজীবী বলেন, শেখার সময়টা অতিবাহিত করার জন্য পারিবারিক সাপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধীরে ধীরে দুই/চার বছর পর কোর্টের বিষয় সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা হয়, পরে একজন আইনজীবী নিজে নিজেই মামলা ফাইলিং থেকে শুরু করে রায় পর্যন্ত সব কার্যক্রম নিজেই পরিচালনা করতে পারেন।

শেখার সময়েও আছে নানা চ্যালেঞ্জ- এমনটিই জানিয়েছেন আইনজীবী মেহেদী হাসান সোহেল সরকার। কুমিল্লা বারে প্র্যাকটিস করা এই আইনজীবী বলেন, শেখার সময়টা অনেক চ্যালেঞ্জিং। প্রাথমিকভাবে যে চিন্তা করে এসেছিলাম, বাস্তবে তার মিল নেই। চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে কিছু সিনিয়রের কাছ থেকে সহযোগিতা পেলেও অনেক সময় সিনিয়রদের কাছ থেকে তিরস্কারও আসে। তারপরও আমি খুশি, আলহামদুলিল্লাহ।

Dhaka-Mail4

তবে চ্যালেঞ্জের চেয়ে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণকেই লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ধরে রেখেছেন সিরাজগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য খাতুনে জান্নাত বন্যা। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির ৬ মাস পার করে আমি খুশি। কোর্টে যাচ্ছি নিয়মিত। কাজ শিখছি, আর্থিক বিষয়টা চিন্তা করছি না।

খাতুনে জান্নাত বন্যা বলেন, নবীন আইনজীবীরা যত ভালো সার্ভিসই দিক না কেন, মক্কেলকে খুশি করা কঠিন। তারা মনে করেন- নবীন আইনজীবীরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত প্রতিকার দিতে পারবে না। তাদের সন্দেহ যেন থেকেই যায়। এজন্য মামলা ধরে রাখাও বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, তারা সিনিয়রদের কাছে চলে যেতে চায়। আমার বিগত ৬ মাসের কাজটা শেখাই হচ্ছে মূল। তবে নবীন আইনজীবী হিসেবে আমি অনেক খুশি।

student-f

একই কথা জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জ বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, প্র্যাকটিক্যাল বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বইয়ে অনেক কিছুই পড়েছি, কিন্তু বাস্তবে কাজ না করলে সেগুলো অনেক কঠিন হয়ে যায়। সিনিয়রদের কাছে অনেক সহযোগিতা পাচ্ছি। তাদের সহযোগিতা ছাড়া এই প্রফেশনে ভালো করা সম্ভব নয়। অবশ্য কাজের মধ্যেও মজা পাচ্ছি। তবে আর্থিকভাবে কোনোমতে দিন পার হচ্ছে- এটা সত্য। কিন্তু লেগে থাকলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবেন- অন্যদের মতো এমন স্বপ্ন শফিকুল ইসলামেরও।

Dhaka-Mail5

এ বিষয়ে কথা হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সভাপতি মো. অজিউল্লাহ নবীনদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, উকালতি প্রফেশনের শুরুতে সিনিয়রদের কাছ থেকে আন্তরিক পরিবেশে কাজটা শেখা জরুরি। সিনিয়রদেরও উচিত তারা তাদের যোগ্য উত্তরসূরি করে জুনিয়রদের রেখে যেতে দরদ দিয়ে শেখাবেন। যোগ্য উত্তরসূরি রেখে যাবেন।

সিনিয়র এই আইনজীবী বলেন, যারা নবীন আইনজীবী, তাদের সুন্দর কর্মপরিবেশ থাকা দরকার। সে ক্ষেত্রে সিনিয়রদের একান্ত সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ তারা সিনিয়রদের কাছেই শিখবে। নবীন আইনজীবীদের সুন্দর করে উপযুক্ত করে গড়ো তোলার দায়িত্ব সিনিয়রদের। কারণ এটি অনেকটাই গুরুবিদ্যা পেশা।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৯ মার্চ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের পরীক্ষার সব ধাপ শেষ করে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন মোট ৫ হাজার ৩২৯ জন। বর্তমানে তারা দেশের সব আইনজীবী সমিতিগুলোয় প্র্যাকটিস করছেন।

এআইএম/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর