শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪, ঢাকা

যেসব মৌলিক অধিকার দিয়েছে সংবিধান

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০২২, ০৯:৩৭ এএম

শেয়ার করুন:

যেসব মৌলিক অধিকার দিয়েছে সংবিধান
ফাইল ছবি

সংবিধানকে বলা হয় নাগরিক অধিকারের রক্ষাকবচ। কারণ সংবিধানে উল্লিখিত অধিকারগুলোই একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। অনেকেই অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি মৌলিক অধিকার বলে থাকেন। তবে এগুলো হচ্ছে জীবনধারণের মৌলিক উপকরণ। আমাদের সংবিধানের তৃতীয় ভাগে কতিপয় মৌলিক অধিকারের সংরক্ষণ বা স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যা নাগরিক হিসেবে আমি আপনি, আমরা সবাই সমানভাবে ভোগ করার অধিকার রাখি। কী সেসব মৌলিক অধিকার?

সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। সব নাগরিক সমান আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী। এ কথাগুলোর মাধ্যমে সব নাগরিকের মধ্যে আইনের সাম্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যখনই কেউ আইনের সাম্য বা সমতা নষ্ট করেন, তার প্রতিকার চাইতে এটিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

অনুচ্ছেদ ২৮-এ বলা হয়েছে, সকল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ও জন্মস্থান ভেদে রাষ্ট্র যেন বৈষম্য না করতে পারে তার বিধান করা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ২৯-এ সরকারি চাকরিতে নিয়োগ লাভে সকল নাগরিকের সমান সুযোগের কথা বলা হয়েছে।

অনুচ্ছেদ ৩১-এ সকল নাগরিকের আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আইনের আশ্রয় লাভ এবং আইন অনুযায়ী ও কেবল আইন অনুযায়ী ব্যবহার লাভ যেকোনো স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং বিশেষত আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোন ব্যাক্তির জীবন,স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে।

অনুচ্ছেদ ৩২-এ বলা হয়েছে, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া কোন নাগরিকের ব্যক্তি ও জীবনের স্বাধীনতা হরণ করা যাবে না।

অনুচ্ছেদ ৩৩-এ ব্যক্তির গ্রেফতার ও আটকের বিষয়ে রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের কারণ পুলিশ যথাশিগগির উল্লেখ না করে তাকে আটক রাখতে পারবে না এবং তাকে তার মনোনীত আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করার সুযোগ দিতে হবে। তাছাড়া আটকের পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আটককৃত ব্যক্তিকে আদালতে উপস্থাপন করতে হবে পরবর্তী নির্দেশনার জন্য।


বিজ্ঞাপন


তবে যদি তাকে কোনো নিবর্তনমূলক আইনে আটক করা হয় বা সেই ব্যক্তি বর্তমানে দেশের শত্রু হয় তবে তার ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য হবে না। এটি সংবিধানের মূল ধারার সাথে সাংঘর্ষিক হলেও নিবর্তনমূলক আইনের যথেষ্ট ব্যবহারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তোলে।

অনুচ্ছেদ ৩৪ এর মাধ্যমে জোর করে শ্রম আদায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ কেউ জোর করে কাউকে দিয়ে শ্রম আদায় করতে পারবেন না এবং এই বিধান লঙঘন হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। কেউ এই অনুচ্ছেদে দুটি ব্যতিক্রম আছে- যেমন শ্রম যদি কারাভোগের অংশ হয় তাহলে বাধ্যতামূলক শ্রম আদায় করা যাবে। আর দ্বিতীয়টি হলো যদি জনগণের উদ্দেশ্য সাধনকল্পে তা আবশ্যক মনে হয়। যদিও কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাষ্ট্র মনে করবে বাধ্যতামূলক শ্রম জনগণের উদ্দেশ্য সাধনকল্পে প্রয়োজন তা কোথাও উল্লেখ নেই। এখানে আইনের অস্পষ্টতা রয়েছে।

অনুচ্ছেদ ৩৫ এর মাধ্যমে ফৌজদারি অপরাধের বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সময়ে যদি কোনো কাজ অপরাধের পর্যায়ে না পড়ে তাহলে পরবর্তী সময়ে নতুন আইন করে সেই কাজকে অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে তাকে শাস্তি দেওয়া যাবে না।

একই অনুচ্ছেদের ২নং উপ-অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তিকে একই অপরাধের জন্য একাধিকবার অভিযোগের মাধ্যমে বিচার ও দণ্ড দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ কোনো অপরাধের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির একবারই বিচার হবে। এই অনুচ্ছেদের ৪নং উপ-অনুচ্ছেদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ- এতে বলা হয়েছে, কোনো অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না।

তাহলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারা অনুযায়ী পুলিশ ‘রিমান্ড’ নামক ভয়ানক পদ্ধতির মাধ্যমে যেসব স্বীকারোক্তি আদায় করে এবং সেসব স্বীকারোক্তি অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবহার করে তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু? আইনের এই সাংঘর্ষিক অবস্থান বজায় রেখেই চলছে আমাদের ফৌজদারি শাসনব্যবস্থা।

অনুচ্ছেদ ৩৬-এ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের আইনসঙ্গতভাবে বসবাস ও চলাফেরার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। ৩৭ অনুচ্ছেদে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সভাসমাবেশ করার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। ৩৮ অনুচ্ছেদে আইনসঙ্গত বিধিনিষেধ সাপেক্ষে সংগঠন করার অধিকার দেওয়া হয়েছে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বলা হয়েছে ৩৯ অনুচ্ছেদ-এ। এখানে বলা হয়েছে, নাগরিকের বাক-স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ৪০ এর মাধ্যমে পেশা বা বৃত্তি নির্বাচনের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সকল নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিধান করা হয়েছে সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদে।

৪২ এর মাধ্যমে সম্পত্তির ওপর নাগরিকের অধিকার এবং সেই সম্পত্তি রাষ্ট্র যেন বাধ্যতামূলক অধিগ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্তকরণ ও দখল করতে না পারে তার বিধান করা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ৪৩ এর মাধ্যমে আইনগত বিধিনিষেধ সাপেক্ষে নাগরিকের গৃহে প্রবেশ, তল্লাশি ও আটক থেকে নিরাপত্তাসহ চিঠিপত্র ও অন্যান্য ব্যক্তিগত যোগাযোগের গোপনীয়তার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।

এআইএম/জেবি 

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর