রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সাইকোলজিস্ট: পড়াশোনা, চাকরি ও বেতন সম্পর্কে জানুন

চাকরি ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২৩, ০৩:৩৬ পিএম

শেয়ার করুন:

সাইকোলজিস্ট: পড়াশোনা, চাকরি ও বেতন সম্পর্কে জানুন

বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে সাইকোলজিস্ট বা মনোবিদ পেশাটি আমদের সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন সাইকোলজিস্ট কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে মানুষের চিন্তা, আবেগ, অনুপ্রেরণা, অনুভূতি, ইচ্ছা প্রভৃতি পর্যালোচনা করেন। বিভিন্ন মানসিক সমস্যা সমাধানে পরামর্শ প্রদান করেন। সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা করে সফলভাবে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। চাকরির দুর্দান্ত সুযোগও রয়েছে এতে। 

সাইকোলজি বা মনোবিজ্ঞান কী?


বিজ্ঞাপন


সাইকোলজি বা মনোবিজ্ঞান হলো মানসিক প্রক্রিয়া ও আচরণ সম্পর্কিত বিদ্যা ও অধ্যয়ন। এটি বিজ্ঞানের একটি তাত্ত্বিক বা ফলিত শাখা। মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করে যে বিজ্ঞান তাকে মনোবিজ্ঞান বা সাইকোলজি বলে। মনোবিজ্ঞানের কর্মক্ষেত্রে, একজন পেশাগত প্রশিক্ষণার্থী বা গবেষককে মনোবিজ্ঞানী বা সাইকোলজিস্ট বলা হয়। একজন মনোবিজ্ঞানী ব্যক্তিগত বা সামাজিক আচরণের ক্ষেত্রে মানসিক কর্মপ্রক্রিয়ার ভূমিকাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন।

psycologist

সাইকোলজিস্ট ও সাইকিয়াট্রিসের মধ্যে পার্থক্য কী? 

অনেকেই মনে করেন এই দুটি পেশা এক। কিন্তু না সাইকোলজিস্ট ও সাইকিয়াট্রিস দুটি আলাদা পেশা। দুটোই মানসিক রোগ, আবেগ ইত্যাদি বিষয়ে চিকিৎসা করে থাকেন। সাইকিয়াট্রিস হওয়ার জন্য এমবিবিএস ডিগ্রি প্রয়োজন। এই পেশায় যুক্ত ব্যক্তিরা মেডিসিন প্রেসক্রাইব করতে পারেন। কিন্তু সাইকোলজিস্টরা মেডিসিন প্রেসক্রাইব করতে পারেন না। একজন সাইকোলজিস্ট কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে মানুষের চিন্তা, আবেগ, অনুপ্রেরণা, অনুভূতি, ইচ্ছা প্রভৃতি পর্যালোচনা করেন এবং বিভিন্ন মানসিক সমস্যা সমাধানে পরামর্শ প্রদান করেন।


বিজ্ঞাপন


সাইকোলজিস্টের কাজ কী? 

বর্তমানে মানসিক রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যার ফলশ্রুতিতে এর চিকিৎসাক্ষেত্রও বাড়ছে। শুধু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরাই যে এই ক্ষেত্রগুলোতে কাজ করেন তা কিন্তু নয়। চিকিৎসকদের পাশাপাশি বর্তমানে সাইকোলজিস্টরাও কাজ করে থাকেন। একজন সাইকোলজিস্ট মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সমস্যার কথা ভালোভাবে শোনেন এবং রোগীকে মানসিক চাপ সামলে তার আচরণে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন। 

psycologist

তিনি কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে রোগীর মানসিক প্রশান্তি আনার চেষ্টা করেন। ভালোভাবে কথা শোনার পর সেই অনুযায়ী রোগীকে মানসিকভাবে চাপ সামলিয়ে থাকার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি শিখান। তার চিন্তা, অনুভূতি ও আচরণ পরিবর্তন করার চেষ্টা করেন। মানসিক ভাবে যাতে সব স্তরের মানুষেরা উৎফুল্ল থাকতে পারে সেই বিষয়ে গবেষণা করে থাকেন। উল্লেখিত কাজগুলো ছাড়াও সাইকোলজিস্টরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজনে আরও নানা ধরণের কাজ করে থাকেন।

ক্যারিয়ার হিসেবে সাইকোলজিস্ট পেশাটি কেন বেছে নেবেন?

আমাদের দেশে বর্তমানে প্রতি ১০ জনে ১ জন মানুষ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। যার হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাদের সেবা প্রদানের জন্য সেই পরিমাণে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা সাইকোলজিস্ট নেই। কর্মক্ষেত্রে এখনো প্রচুর পরিমাণে সাইকোলজিস্টের প্রয়োজন রয়েছে। ভালো ও অভিজ্ঞ একজন সাইকোলজিস্ট হতে পারলে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও কাজ বা চাকরি পাওয়া সম্ভব। তাছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোরোগ বিভাগে শিক্ষকতার পেশায়ও জড়িত হওয়া যেতে পারে। বর্তমানে এটি একটি সফল পেশা।

psycologist

কীভাবে বুঝবেন এই বিষয়টি নিয়ে পড়লে আপনার সফলতা সম্ভব?

প্রথমত নিজেকে চেনার মাধ্যমে। মানুষ কেন একে অপরকে ভালোবাসে? একজন মানুষ কেন অন্যকে খুন করে? অথবা আপনার ছোটবেলা যদি একটার পর একটা মিসির আলি পড়ে কাটে, মিসির আলীর মতো জটিল মনস্তত্ব নিয়ে চিন্তা করতে যদি আপনি ভালোবাসেন তবে সাইকোলজি বিষয়টি আপনার জন্য। এছাড়াও সাইকোলজি বিষয়ে পড়াশোনা সম্পর্কে, পড়াশোনা শেষে ক্যারিয়ার সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা নেওয়া উচিত। সবকিছু জানার পরে যদি আপনার মনে হয় এ বিষয়ে আপনার আগ্রহ রয়েছে। এ বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়লে আপনি ভালো করবেন। তবে সাইকোলজি বিষয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

সাইকোলজিস্ট হতে গেলে যে ধারণাগুলো থাকতে হবে

 পদবি: সাইকোলজিস্ট/মনোবিজ্ঞানী।
 
বিভাগ: মনোবিজ্ঞান

psycologist

শিক্ষাগত যোগ্যতা: মনোবিজ্ঞানে ও মনোবিজ্ঞান সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বা প্রতিষ্ঠান ও পদ অনুযায়ী আরও উচ্চতর ডিগ্রীধারী হতে হবে।

প্রতিষ্ঠান: সরকারি-বেসরকারি, প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি।

 চাকরীর ধরন: পার্ট-টাইম, ফুল-টাইম।

চাকরীর শুরুতে বয়সসীমা: ২৫-৩০ বছর। 

অভিজ্ঞতা: কাজ ও প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়ে থাকে। তবে ১-৩ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে অগ্রাধিকার পাওয়া যেতে পারে।

psycologist

স্কিল: গবেষণায় পারদর্শিতা, অন্যের কথা ধৈর্য ধরে শোনার অভিজ্ঞতা, বিশ্লেষণী দক্ষতা, পর্যবেক্ষণে সক্ষমতা, পরিশ্রমী, রোগীর যেকোনো তথ্য গোপন রাখায় দক্ষতা, যোগাযোগে দক্ষতা, ধৈর্য ইত্যাদি।

বেতন: প্রাথমিক অবস্থায় ১৫-২৫ হাজার টাকা। 

একজন সাইকোলজিস্ট কোথায় কাজ করেন? 

১. ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বা রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি
একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হিসেবে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, এনজিও, বেসরকারি ক্লিনিক, বা ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ করে থাকেন।

২. ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাইকোলজি অ্যান্ড অর্গানাইজেশনাল বিহেভিয়ার
ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্গানাইজেশনাল সাইকোলজিস্ট হিসাবে কোনো সংস্থায় কর্মী নির্বাচন এবং নিয়োগের পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করে থাকেন।

psycologist

৩. ফরেনসিক সাইকোলজি
এই ক্ষেত্রের পুলিশ বিভাগ, অপরাধ শাখা, প্রতিরক্ষা বা সেনা, আইনি সংস্থা, ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের মতো জায়গায় পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করেন।

৪. এডুকেশন সাইকোলজি
সরকারি এবং বেসরকারি স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, আবাসিক ক্লিনিক এবং হাসপাতাল, কিশোর-কিশোরীদের বিচার-আদালতে, বেসরকারি ক্লিনিকে এডুকেশন সাইকোলজিস্ট হিসাবে কাজ করা যেতে পারে।

৫. স্পোর্টস সাইকোলজি
স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া দল, পেশাদার ক্রীড়া দল, ক্রীড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এবং ক্রীড়া গবেষণা কেন্দ্রে ক্রীড়া মনোবিজ্ঞান উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করেন।

৬. সাইকোমেট্রি

সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা, উপদেষ্টা এবং গবেষকদের জন্য একজন পেশাদার টেস্ট ডেভেলপার এবং সাইকোমেট্রিশিয়ান হিসাবে কাজ করেন।

psycologist

সাইকোলজিস্ট হতে চাইলে কোথায় পড়বেন?

বাংলাদেশের অনেক স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকোলজি বিষয়টি পড়ানো হয়। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (গোপালগঞ্জ) ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ডিপার্টমেন্টটি রয়েছে। উল্লেখিত বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেগুলো থেকে মনোবিজ্ঞানে ও মনোবিজ্ঞান সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক-স্নাতকোত্তর এবং আরও উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া যায়।

সাইকোলজি নিয়ে রিসার্চের বা বাইরের দেশগুলোতে যাওয়ার সুযোগ কেমন?

বাংলাদেশে গবেষণার সুযোগগুলো এখনও ডেভেলপ হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রিসার্চ পেপার, কম্পিউটার ল্যাব, ইন্টারনেট ইত্যাদির মতো কিছু প্রাথমিক সুবিধা দিয়ে থাকে কিন্তু বাংলাদেশে এখনও রিসার্চের ব্যাপারটি প্রসারিত হয়নি। কিন্তু বিশ্বের প্রায় সব দেশেই সাইকোলজির বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন প্রোগ্রাম অফার করা হয়। 

কেউ চাইলে বিদেশে যেয়ে এই বিষয়ের ওপর গবেষণা করেতে পারেন। আমেরিকা, ইউকে, কানাডা, জার্মানি এই দেশগুলো শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় প্রথম দিকে থাকে। কারণ এ দেশগুলোতে সাইকোলজিক্যাল ডিগ্রির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা অফার করা হয়।

এসবিএ/এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর