সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২: কতটা প্রত্যাশা পূরণ করল?

মো. শাহিন রেজা
প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২: কতটা প্রত্যাশা পূরণ করল?

বর্তমান সরকার বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের সকল ক্যাডার এবং সিভিল সার্ভিসের আওতাবহির্ভূত সকল সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ ১২ বছরের বেশি সময় ধরে চাকরিতে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ করার পক্ষে আন্দোলন চলছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সরকার একটি কমিটি গঠন করেন যারা সার্বিক দিক বিবেচনা করে চাকরিতে প্রবেশের বয়স পুরুষের জন্য ৩৫ এবং নারীদের জন্য ৩৭ বছর করার সুপারিশ করেছিলেন। 

কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী কেন এই সুপারিশ করেছেন তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর বলেছেন, ‘চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ সবার জন্য প্রযোজ্য হবে, তবে নারীদের জন্য আমরা দুই বছর বাড়িয়ে ৩৭ বছর সুপারিশ করেছি। এটা করেছি কারণ আরও বেশি সংখ্যক নারী অংশগ্রহণ করতে পারে, আসতে পারে, পরীক্ষা দিতে পারে, চাকরিতে আসতে পারে।’


বিজ্ঞাপন


কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা পাশের দেশগুলোও দেখেছি। বিভিন্ন দেশে যে বয়সসীমা আছে সেটার সঙ্গে আমাদের সুপারিশ সঙ্গতিপূর্ণ হয়েছে। কাজেই বাংলাদেশ পৃথিবী থেকে আলাদা কিছু নয়। 

কিন্তু গত ২৪ অক্টোবর হঠাৎ করেই উপদেষ্টা পরিষদ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ২ বছর বাড়িয়ে ৩২ বছর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এবং সংবাদ সম্মেলনে একজন উপদেষ্টা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা পরিবর্তন হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। 

এখন প্রশ্ন হলো ৩২ বছর বয়স কারা চেয়েছেন? দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন হচ্ছে ৩৫ এর। কিন্তু আমরা তো ৩২ বছরের পক্ষে সেভাবে কোনো আন্দোলন দেখেনি। তবে ৩২ বছর করার সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হলো? এমনকি কমিটি সুপারিশ করেছে পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৩৫ ও ৩৭ বছর । তাহলে গঠিত কমিটি কি বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে? আর সরকারই বা কি বিবেচনায় ৩২ করতে চাইছেন? এখন এটা বলা কি ভুল হবে যে, কমিটির সুপারিশ বা শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি মূল্যায়ন করা হলো না? অন্যদিকে, আলোচনা সমালোচনার প্রশ্নতো থেকেই গেল। 

চাকরির নিয়োগে দুর্নীতি, প্রশ্ন ফাঁস, স্বজনপ্রীতি, করোনা, সেশন জট, নিয়োগে দলীয়করণ, প্রার্থীর নিজের বা পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয়, করোনা পরবর্তী একই দিনে অনেকগুলো পরীক্ষা, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ নানা কারণে চাকরিতে বয়স বৃদ্ধির দাবি করা হয়েছে। বিশ্বের বহু দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বা তারও বেশি। এমনকি কোনো কোনো দেশে উন্মুক্ত। ফলে গেজেট প্রকাশের আগে আবারও বিষয়টি ভাবা প্রয়োজন। কারণ করোনার আগে যাদের বয়স ২৬/২৭ বছর ছিল তাদের বয়স এখন ৩২ বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু করোনাসহ সবকিছুতে তারাই বেশি ভুক্তভোগী। করোনাতে ২/৩ বছর চাকরি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও পরীক্ষা স্বাভাবিক ভাবে হয়নি। আবার এখন যখন ৩২ করা হচ্ছে তারা এই সুবিধা পাচ্ছে না। ফলে রাষ্ট্রকে ভাবা উচিত কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়। 


বিজ্ঞাপন


অন্যদিকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স বেসরকারি ব্যাংক ও অন্য প্রতিষ্ঠানও বিবেচনায় নেই। ফলে এইসব প্রতিষ্ঠানেও চাকরি পাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এতে গ্রামের কৃষক, খেটে খাওয়া মানুষ, দিনমজুরের ছেলে-মেয়েরা সব থেকে বেশি ভুক্তভোগী হবেন। কারণ একটা চাকরি তাদের কতটা প্রয়োজন একমাত্র তাদের পরিস্থিতিতে নিজেকে কল্পনা না করলে বোঝা যাবে না। 

সরকারের ৩২ বছর বয়স বৃদ্ধির বিষয়টি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মেনে নেননি। মনে রাখতে হবে বর্তমান সরকার ছাত্র জনতার সফল আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। ফলে শিক্ষার্থীদের চাওয়া পাওয়া অত্যন্ত সহানুভূতির সাথে দেখতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সিদ্ধান্ত যাতে বিভেদ তৈরি করতে না পারে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। একই সঙ্গে চাকরির বয়স ৩৫ হলে কি ধরনের অসুবিধা হবে সে বিষয়ে সরকারকেই বিস্তারিত জানাতে হবে। আর ৩২ বছর করলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সরকারের চিন্তা স্পষ্ট করতে হবে। 

প্রয়োজনে আন্দোলন শিক্ষার্থী, গঠিত কমিটি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে পুনরায় বসে একটি যৌক্তিক সমাধানে আসার পথ খোঁজা যায়। কারণ এসএসসি ২০০৭ থেকে ২০১০ সালের ব্যাচ সব থেকে বেশি ভুক্তভোগী ফলে সবকিছুর ঊর্ধ্বে শিক্ষার্থীদের কল্যাণের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। জোর করে কোনো কিছু চাপিয়ে দিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়বেন এবং বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। কারণ তারা কেও পরীক্ষা বিহীন চাকরি চায়নি, চেয়েছে বয়স বৃদ্ধি করার মাধ্যমে চাকরি পরীক্ষায় বসায় সুযোগ পেতে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে কোনভাবেই যেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এমন একটি যৌক্তিক সমাধানের পথে হাঁটতে সরকারেরই উদ্যোগ নেওয়া উচিত। 

লেখক: প্রাক্তন শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর