মানুষের জীবনের উন্নতির ধারা বুঝানোর জন্য ক্যারিয়ার শব্দটি ব্যবহৃত হয়। একটি নির্দিষ্ট কর্মের মাধ্যমে জীবন পরিচালনা করাকে ক্যারিয়ার বলা হয়ে থাকে। যেকোনো কাজ শুরু করার পূর্বে ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার কেমন হবে সেই সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা প্রয়োজন। সুনির্দিষ্ট প্ল্যানিং না থাকলে বেশিরভাগক্ষেত্রেই সফল ক্যারিয়ার গঠন সম্ভব হয় না।
প্রত্যেকেই চায় তার ক্যারিয়ার সুন্দর ও সফল হোক। অনেকেই চাকরির পেছনে ঘুরে ঘুরে জীবনের মূল্যবান সময় ব্যয় করেন। কিন্তু আশানুরূপ ফল পান না। আবার অনেকে চেষ্টা করার সাথে সাথেই পেয়ে যান ভালো চাকরি। আসলে এমনটি কেনো হয়? কখনও কি মনে প্রশ্ন জেগেছে? চলুন জেনে নিই সফল ক্যারিয়ার গঠনে করণীয়গুলো সম্পর্কে-
বিজ্ঞাপন

১। নিজের দক্ষতা শনাক্তকরণ
অনেকেই আছেন নির্দিষ্ট কিছু কাজে ছোট বেলা থেকেই দক্ষ থাকেন। ভবিষ্যতে সেই বিষয় নিয়ে কাজ করলে সফল হওয়া সম্ভব। প্রথমে নিজের প্রতিভাকে চিনতে হবে। তারপর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। ধরুন, ছোটবেলা থেকেই একজন কম্পিউটার সম্পর্কে খুব ভালো পারদর্শী, এটি তার একটি প্রতিভা। তিনি যদি ভবিষ্যতে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে লেখাপড়া করেন তাহলে তার ক্যারিয়ার সুন্দরভাবে সাজানো সম্ভব। কারণ তিনি এই বিষয়ে দক্ষ। তাই প্রথমে নিজের প্রতিভা ও দক্ষতা যাচাই করুন। এরপর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাজান।
২। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ
প্রতিভা ও দক্ষতা যাচাইয়ের পর লক্ষ্য নির্ধারণ করা আবশ্যক। অনেকেই আছেন পদার্থ বিজ্ঞান ভালো পারেন বা প্রোগ্রামিং ভাষায় দক্ষ। সেই অনুযায়ী লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নির্ধারণ করলে ভবিষ্যতে সফল ক্যারিয়ার গঠন সম্ভব। মানুষকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে অনেক ধরনের ত্যাগ ও তিতিক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। যিনি ধৈর্যধারণ করে তার লক্ষে অটুট থাকেন, দিনশেষে সফলতার সোনার হরিণ তাকে ধরা দিবেই।
বিজ্ঞাপন

৩। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ
লক্ষ নির্ধারণ করার পরের যে ধাপটি রয়েছে সেটি হলো স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা। অল্প দিনে বেশি কিছু আশা করা উচিৎ নয়। পরিকল্পনা হতে হবে দীর্ঘমেয়াদী। বিনা লক্ষ্যে কাজ করা শুরু করলে বেশি দূর যাওয়া সম্ভব হয় না। তাই নির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে এবং সেসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। কারণ কোন কিছু খুব তাড়াতাড়ি পাওয়া সম্ভব নয়। এর জন্য অপেক্ষার প্রয়োজন। এ পর্যন্ত যেসব ব্যক্তি তাদের জীবন সফলভাবে সাজিয়েছেন তাদের কাজের পেছনে ছিল দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং কাজ করার স্পৃহা।
৪। শিক্ষা অর্জন এবং মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার
শিক্ষা অর্জন করার পর নিজের মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অনেকসময় এমনটি মনে হতে পারে আপনার চাইতে যারা এগিয়ে আছে আপনি তাদের মেধার কাছে দুর্বল। এমনটি না ভেবে মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করুন। যে তার মেধার সঠিক ব্যবহার করতে পারে সে ই কিন্তু অনেক দূর যেতে পারে এবং সফল একজন ব্যক্তিত্বে পরিণত হতে পারে। চাকরি ক্ষেত্রে সিভি এবং কভার লেটার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই আছেন এটি বানাতে অন্যের সাহায্য নিয়ে থাকেন। এমনটা না করে মেধার বিকাশ ঘটানোর চেষ্টায় থাকুন। দেখবেন চাকরি আপনাকে খুঁজে নিবে।

৫। সময়ের সঠিক ব্যবহার
টাইম ম্যানেজমেন্ট খুব ভালোভাবে শেখা প্রয়োজন। কাজের সঠিক সময় নির্ধারণ এবং সেই অনুযায়ী কাজ করলে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। ক্যারিয়ার গঠন করার জন্য প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে সময় নির্ধারণ করুন। সেই সময়টুকু অন্য কোনো কাজে ব্যয় না করে নিজের কাজের প্রতি ব্যয় করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এই পৃথিবীতে সময়ের যে সঠিক ব্যবহার করতে পারে সেই মূলত সফল হয়।
৬। অগ্রাধিকার নির্ধারণ
সঠিক সময়ে নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করাকেই অগ্রাধিকার বলে। অনেকেই ক্যারিয়ারের সুবর্ণ সুযোগগুলো হারিয়ে ফেলেন কেবল নির্দিষ্ট সময়ে কাজ না করার কারণে। ধরুন কেউ ঠিক করল যে, সে ৮টা থেকে ১০টা অব্দি একটি কাজ করবেন। কিন্তু ঘুমের কারণে তা করলেন না। এর মানে কাজের জন্য নির্ধারিত সময়ে তিনি কাজ করতে পারলেন না। কাজের প্রতি অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে নিতে হবে। এতে ক্যারিয়ারে অনেক ভালো কিছু করা সম্ভব। সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

৭। হতাশাগ্রস্ত না হওয়া
পৃথিবীতে সেসব মানুষ তাদের সফলতার দ্বার প্রান্তে পৌঁছেছে তাদের প্রত্যেকের জীবনে একবার হলেও হতাশা দেখা দিয়েছে। তারা সেই হতাশাকে পেছনে ফেলে সমানের দিকে অগ্রসর হয়েছেন। ফলে আজ তারা সবার কাছে পরিচিত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানি অ্যাপেলের মালিক স্টিভ জবসকে তার প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি হতাশ না হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়েছেন। ফলে আজ তিনি বিশ্বের সবার কাছে পরিচিত। যেকোনো দীর্ঘমেয়াদি কাজ শুরু করলে প্রতিটি মানুষকে হতাশার সম্মুখীন হতে হয়। যে হতাশাকে পেছনে ফেলে সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারে সেই কিন্তু সফল হয়। তাই কিছুতেই হতাশাগ্রস্ত হওয়া যাবে না।
৮। ফলাফল চিন্তা না করে কাজে অটুট থাকা
ধরুন আপনি কোথাও চাকরি করছেন। অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থতা আসতে পারে। আপনি কোনো কাজ করে ব্যর্থ হলেন। প্রতিষ্ঠানটির বস দেখবেন যে অসফল হলেও আপনার চেষ্টাটি সৎ ছিল কি না এবং কাজটির পেছনে শ্রম কতটা ছিল। তাই ফলাফল চিন্তা না করে কাজে অটুট থাকুন। যা ক্যারিয়ারে সফলতা এনে দিবে। ভবিষ্যতে কী হতে যাচ্ছে তার একটি আগাম ধারণা রাখা জরুরি, কারণ সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে প্রযুক্তিও দ্রুত পাল্টাচ্ছে। নিজেকে তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াই সময়ের একমাত্র চাহিদা।

এছাড়াও ক্যারিয়ারে সফলতা আনতে চাইলে কিছু বিষয়ে দক্ষতা প্রয়োজন। বিষয়গুলো হলো-
১। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের ধারণা থাকা প্রয়োজন
২। সঠিক নিয়মে ই-মেইল লেখা এবং পাঠানোর দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
৩। স্প্রেডশিটের ব্যবহার জানা জরুরি। মাইক্রোসফটের সব প্রোগ্রাম, কম্পিউটার মাল্টিমিডিয়া এবং সফটওয়্যারের ব্যবহার জানা জরুরি।
৪। কমিউনিকেশন স্কিল অনেক ভালো থাকতে হবে। যে কারো সঙ্গে কথা বলতে যেন কোনো ধরনের জড়তা কাজ না করে।
৫। বিভিন্ন ধরনের রিপোর্ট লেখার ধারণা থাকতে হবে। কারণ কাজের ক্ষেত্রে অনেকসময় অনেক ধরনের রিপোর্ট জমা করে রাখার প্রয়োজন হয়।
৬। যেকোনো পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধান করার মতো ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
৭। নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।
একজন ব্যক্তি তখনই সফল হন যখন তিনি কাজের প্রতি একাগ্র, সৎ থাকেন। নিজের চেষ্টা অব্যাহত রাখুন, ছোটোখাটো বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন। ক্যারিয়ারে সফল হবেন নিশ্চয়ই।
এসবিএ/এনএম

