শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

‘সাগর-রুনি হত্যা মামলাটির এবার সমাপ্তি দরকার’

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
প্রকাশিত: ০৫ এপ্রিল ২০২২, ০১:৪৬ এএম

শেয়ার করুন:

‘সাগর-রুনি হত্যা মামলাটির এবার সমাপ্তি দরকার’
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ (ফাইল ছবি)

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও জমা হয়নি তদন্ত প্রতিবেদন। তদন্ত কর্মকর্তার পরিবর্তন হয়েছে বারবার, কিন্তু তেমন কোনো অগ্রগতি নেই আলোচিত এই মামলার। জনমনে প্রশ্ন রয়েছে, কেন দেওয়া হচ্ছে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন। আর আদালত কেনইবা তদন্ত কর্মকর্তাকে এত বার সময় দিচ্ছেন। এসব বিষয় নিয়ে ঢাকা মেইলের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন সুপ্রিম কোর্টে সাগর-রুনি হত্যা মামলায় আসামিদের শনাক্ত করতে আবেদনকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। 

ঢাকা মেইল: সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে কোনো ঘাপলা আছে বলে মনে করেন কি? 
মনজিল মোরসেদ: সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনি হত্যার পরেই কিন্তু পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছিল এটাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য জজ মিয়া নাটক সাজানো হচ্ছে। তখন আমরা জনস্বার্থ বিবেচনা করে হিউম্যান রাইডস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে একটি রিট আবেদন করেছিলাম। সেখানে শুনানি করে আদালত রুল জারি করেন। রুলে আদালত বলেছিলেন, এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত অপরাধী খুঁজে বের করে শনাক্ত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না। সেই রুল নিষ্পত্তি করতে আজ (৪ এপ্রিল) আবেদন করলাম। আগামীকাল থেকে এই মামলাটি শুনানির জন্য আদালতের তালিকায় থাকবে।


বিজ্ঞাপন


ঢাকা মেইল: আপনাদের আবেদনের ফলে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছিলেন কি? 
মনজিল মোরসেদ: হ্যাঁ, হয়েছিল। আমাদের আবেদনের কারণে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব) তদন্ত করেছিল। ডিএনএ টেস্টও হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন আসামি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সে বিষয়ে কোনো রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। এই দীর্ঘসূত্রিতা চলছে। এ কারণে আমরা চিন্তা করলাম এর একটা সমাধান দরকার। আমরা আমাদের যে রুল আছে, সেই রুলের শুনানি করতে আদালতে আবেদন করেছি। মেনশন করেছিলাম। শুনানি শেষে আদালত এই রুল শুনানি করতে তালিকায় রাখতে চেয়েছেন। আগামীকাল থেকে এটি আদালতের তালিকায় শুনানির জন্য থাকবে। আমরা আদালতকে বলবো, এটা যেহেতু দশ বছর হয়ে গেছে, যারা তদন্ত করছেন তারা তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। রুলের টার্ম ছিল প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না।

ঢাকা মেইল: প্রকৃত অপরাধী বের করতে এত সময় লাগছে। এতে কি বিচার বিভাগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না? 
মনজিল মোরসেদ: বিচার বিভাগের ওপর এর নেগেটিভ প্রভাব পড়বে না। কারণ এটি এখনও বিচারের জন্য আসেনি। তবে এটি নেগেটিভ প্রভাব ফেলবে অপরাধের প্রবণতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে। এজন্য তো একটা লেসন দিতে হয় অপরাধ কমাতে। লেসন না দিলে অপরাধীরা অপরাধ করেই যাবে। তারা উৎসাহিত হবে। এই কারণে কিন্তু আমাদের অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। অভিযোগ আসছে কিন্তু এমনিই না, কারণটা হচ্ছে আইনের শাসন ও বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা আছে। অতএব আমরা চাচ্ছি সেটা যেন আর না হয়। মানুষ যদি বিচারের প্রতি, লেসনের প্রতি অনাস্থা না আনে। এখন পর্যন্ত কিন্তু এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা বিস্তারিতভাবে অসেনি। তদন্ত চলছে, এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা চিন্তা করলাম যে, এর একটা সমাপ্তি দরকার। এজন্য আমাদের যে রুল আছে সেই রুল শুনানি করতে উদ্যোগ নিলাম। শুনানির জন্য গতকাল আদালতে মেনশন করেছিলাম। আজকে সেটি শুনানি করতে আদালতের তালিকায় রাখতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামীকাল থেকে শুনানির জন্য এটি লিস্টে আসবে। যেকোনো সময় এই আবেদনের শুনানি হতে পারে। 

ঢাকা মেইল: এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে অনেক সময় লাগছে, এজন্য আদালতে কী বলবেন? 
মনজিল মোরেসদ: আমি বলবো দ্রুত সময়ে এই ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়া দরকার। রিপোর্ট না দিলে এ ধরনের অপরাধের মতো আরও ঘটনা ঘটবে। অপরাধীরা আরও সাহস পাবে। অপরাধ করতে উৎসাহিত হবে। অপরাধ বাড়ছে এমনিতেই না। মানুষ যদি মনে করে অপরাধ করলে শাস্তি পাবে না, তাহলে কিন্তু চলবে না। অপরাধ বৃদ্ধি পাবে। সেটা কিন্তু আমাদের সমাজের জন্য ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। কারণ কোনো মানুষই তখন নিরাপত্তাবোধ করবে না। সেটা রাষ্ট্রের জন্য খুব খারাপ খবর। এই জন্য আমরা চাচ্ছি, অপরাধী যেই হোক তদন্ত করা দরকার। এখন পর্যন্ত কোনো নাম আসেনি। কারা আসামি, কারা এ অপরাধ করেছে, আসামিদের নাম আসুক। তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। তাহলে অন্য অপরাধীরা লেসন পাবে। 

ঢাকা মেইল: তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে কতবার সময় দেওয়া যায়, এ বিষয়ে আইনে কি লিমিটেশন আছে? 
মনজিল মোরেসদ: এটা হলো আইনের ফাঁক-ফোকর। অর্থাৎ সময় দেওয়ার বিষয়ে নির্দিষ্ট টাইম আছে, বলা আছে। আবার বলা হচ্ছে আদালত চাইলে যত খুশি সময় দিতে পারেন। যখন আবেদন করা হয় সে আবেদনের সঙ্গে সঙ্গে আদালত সময় দেন। এটাই হলো আদালতের ফাঁক-ফোঁকর। আদালতে টাইম চাইলেই টাইম দেওয়া হয়। আবার অনেক সময় বিভিন্ন মামলায় টাইম দেওয়া হয় না। বিশেষ করে রাজনৈতিক মামলায়। এটা ভেরি করে কোর্ট টু কোর্ট। আমি মনে করি এত সময় না দিয়ে দ্রুত একটা সমাধান করা উচিত। আদালত যদি কঠোর হয়ে বলেন, আগামীকালই তদন্ত রিপোর্ট দিতে হবে তাহলে কিন্তু এত সময় আবেদন করতে পারতো না তারা। তদন্ত করতে এত সময় দেওয়া সঠিক হয়নি। কারণ সাধারণ জনসাধারণের মনে একই কথা এখনও তো সাগর রুনি হত্যার বিচার হয়নি। 


বিজ্ঞাপন


sagor

ঢাকা মেইল: হাইকোর্ট চাইলে কি এই মামলা অন্য আদালতকে দিতে পারেন দ্রুতবিচারের জন্য? 
মনজিল মোরসেদ: প্রত্যেকটা কোর্টের একটি ইনহেয়ারেন্ট পাওয়ার আছে। কোর্ট চাইলে জনস্বার্থে সেই পাওয়ার কাজে লাগাতে পারে। এমনকি এসব জনস্বার্থের মামলা হাইকোর্ট নিজেও শুনানি করতে পারেন। আমরা ধানমন্ডির একটি বাড়ি নিয়ে মামলা করেছিলাম। সেটা কিন্তু হাইকোর্ট গুরুত্বপূর্ণ মনে করে নিজে শুনানি করেছেন। হাইকোর্টের এনহেয়ারেন্ট পাওয়ার (সহজাত ক্ষমতা) আছে। অথবা এ মামলার কোনো পক্ষ হাইকোর্টে আবেদন করলে হাইকোর্ট শুনানি করতে পারে। 

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করেন। প্রথমে মামলার তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার এক কর্মকর্তা। ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর। এরপর দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব)। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে মোট ৮৫ বার সময় নিয়েছে তদন্ত কর্মকর্তা। 

এআইএম/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর