শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘নার্স হিসেবে রোগীর সেবায় মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পাই’

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ১২ মে ২০২৩, ০৩:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

‘নার্স হিসেবে রোগীর সেবায় মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পাই’

সাব্বির মাহমুদ তিহান। জন্ম বরিশালের পিরোজপুর জেলার নেছারবাদ উপজেলায়। ২০১২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর মানবসেবার লক্ষ্য নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ব্যাচেলর অব নার্সিং সায়েন্সে ভর্তি হন। ২০১৭ সালে সাফল্যের সঙ্গে বিএসসি ইন নার্সিং সম্পন্ন করেন তিনি। ২০১৯ সালে পাবলিক হেলথ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনের শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নার্সিং অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অধীনে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে যোগদান করেন। করোনাকালে দেশের নার্সদের পাশে থেকে তাদের দাবি-দাওয়া পূরণে কাজ শুরু করেন তিনি। করোনা মোকাবিলায় নার্সদের ভূমিকা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরতে কাজ করেছেন। তার তত্ত্বাবধানে নার্সদের নিয়ে সর্বপ্রথম গবেষণাপত্র 'Mental health symptoms among the nurses of Bangladesh during the COVID-19 pandemic' আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়।

সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন তিহান। এছাড়াও তিনি গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট নার্সেস সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ বেসিক গ্রাজুয়েট নার্সেস সোসাইটির যুগ্ম মহাসচিব এবং বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য। নার্সিং শিক্ষা ক্ষেত্রে তিনি কয়েকটি বই সম্পাদনা করেছেন।


বিজ্ঞাপন


বিশ্ব নার্স দিবসে পেশাসংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে সাব্বির মাহমুদ তিহান কথা বলেছেন ঢাকা মেইলের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার বোরহান উদ্দিন।

ঢাকা মেইল: পেশা হিসেবে নার্সিং কেন বেছে নিয়েছেন?

সাব্বির: মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পেশা হচ্ছে নার্সিং। অসুস্থ মানুষের জন্য উন্নত সেবা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই পেশা বেছে নিয়েছি।

ঢাকা মেইল: অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে নার্সিং পেশায় জড়িতদের সুযোগ-সুবিধা কেমন?


বিজ্ঞাপন


সাব্বির: বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের নার্সিং সেক্টর অনেক পেছানো। যেমন উন্নত দেশে নার্সিং পেশাকে অত্যন্ত সম্মান ও গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং সেসব দেশে প্রথম শ্রেণির পেশা নার্সিং।  আমেরিকার প্রথম পাঁচটি পেশার মধ্যে নার্সিং একটি। অন্যান্য দেশে নার্সদের বেতন-ভাতা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। অন্য দেশগুলোতে নার্সদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা অনেক বেশি। সেসব দেশে নার্স প্র্যাকটিশনার থাকলেও বাংলাদেশে নেই।

পুরুষ নার্সরা নারীদের তুলনায় অধিক কাজ করতে সক্ষম। তাছাড়া ৯০% মেয়ে হওয়ায় কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন নার্সরা। বর্তমানে অনেক ছেলে নার্সিং পেশায় আসতে চাচ্ছে। কিন্তু মাত্র ১০% ছেলে কোটা থাকায় তাদের ইচ্ছা থাকলেও নার্সিং পেশায় আসার সুযোগ নেই। অন্যদিকে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের আসন খালি থাকে। এক্ষেত্রে দ্রুত নার্সিংয়ে পুরুষ কোটা বাড়ানো জরুরি। এতে দেশের বেকার সংখ্যাও কমবে, সেবার মানও বাড়বে।

ঢাকা মেইল: নার্স সংকটের কথা বহু দিনের পুরানো। সংকট কাটাতে সরকারের উদ্যোগের কথাও শোনা যাচ্ছে। কেন নতুন নার্স নিয়োগ আলোর মুখ দেখছে না বলে আপনারা মনে করেন?

সাব্বির: বাংলাদেশে বর্তমানে তিন লাখের উপরে নার্সের সংকট রয়েছে। সরকার নার্স নিয়োগ দিলেও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। সরকারি হাসপাতালে মাত্র ৪২ হাজার নার্স কর্মরত। সরকারি হাসপাতালে কমপক্ষে জরুরি ভিত্তিতে এক লাখ নার্স প্রযোজন। অন্যথায় এই সংকট কাটবে না। কেন নার্স নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না-এটা সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে এক ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিশ্চয়ই আছে। রোগীদের স্বার্থেই দ্রুততার সঙ্গে আরও নার্স নিয়োগ দেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন: কষ্টে ভরা নার্সদের জীবন

ঢাকা মেইল: একজন রোগীর সবচেয়ে বেশি কাছাকাছি থাকেন নার্স। সে হিসেবে তাদের ঝুঁকিও বেশি। কিছু কিছু পেশায় ঝুঁকি ভাতা আছে। নার্সদেরও কি তেমন ভাতা আছে?

সাব্বির: নার্সদের দীর্ঘ দিনের দাবি ঝুঁকি ভাতা। নার্সরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের সবচেয়ে কাছে থেকে সেবা দিয়ে থাকেন। অনেক সময় তারা রোগীর মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে থাকেন। তাই দ্রুত ঝুঁকি ভাতা কার্যকর করা জরুরি। কোনো নার্স জটিল রোগে আক্রান্ত হলে তার সম্পূর্ণ খরচ সরকারের বহন করা উচিত।

ঢাকা মেইল: করোনাকালে অনেক নার্স আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকে মারা গেছেন। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়া হয়। সব নার্সরা কি সেই ভাতা পেয়েছেন?

সাব্বির: মৃত্যুবরণ করা অনেকেই প্রণোদনা পেয়েছেন। আক্রান্ত অনেকেই প্রণোদনা পাননি। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত নার্সদের ভাতা ঠিকমতো দেওয়া হয়নি। যাতায়াত ও খাওয়া দাওয়া বাবদ অতিরিক্ত টাকা অনেকেই পাননি। এটা দুঃখজনক। নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি দেখবেন- সেটা আমাদের প্রত্যাশা।

ঢাকা মেইল: নার্সিং পেশায় পুরুষরাও আসছেন। তুলনামূলক চিত্রে নারীদের চেয়ে বহুগুণ পিছিয়ে পুরুষরা। এটা এক ধরনের বৈষম্য কি না? পুরুষদের কম আসার কারণ কী?

সাব্বির: অবশ্যই নার্সিং পেশায় পুরুষরা বৈষম্যের শিকার। এটা সংবিধান পরিপন্থীও। ২০১৬ সালে এই সংক্রান্ত একটি মামলাও হাইকোর্টে হয়েছিল। মামলাটি চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায় আছে। পুরুষ নার্সরা নারীদের তুলনায় অধিক কাজ করতে সক্ষম। তাছাড়া ৯০% মেয়ে হওয়ায় কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন নার্সরা। বর্তমানে অনেক ছেলে নার্সিং পেশায় আসতে চাচ্ছে। কিন্তু মাত্র ১০% ছেলে কোটা থাকায় তাদের ইচ্ছা থাকলেও নার্সিং পেশায় আসার সুযোগ নেই। অন্যদিকে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের আসন খালি থাকে। এক্ষেত্রে দ্রুত নার্সিংয়ে পুরুষ কোটা বাড়ানো জরুরি। এতে দেশের বেকার সংখ্যাও কমবে, সেবার মানও বাড়বে।

আরও পড়ুন: কেমন আছেন বাংলাদেশের নার্সরা?

ঢাকা মেইল: অনেক সময় রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে নার্সদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য নার্সদের আলাদা প্রশিক্ষণ প্রয়োজন আছে কি না?

সাব্বির: রোগী বা স্বজনদের সাথে দুর্ব্যবহার এটা আমরাও অভিযোগ পেয়ে থাকি। আসলে একজন নার্স যখন অত্যধিক রোগীকে একসাথে সেবা দিয়ে থাকেন তখন তার পক্ষে রোগীর চাহিদা অনুযায়ী সবার জন্য সমান সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এজন্য এমন অভিযোগ আসে। নার্সরা খুবই আন্তরিক। কিন্তু নার্স সংকটের কারণেই এমন অভিযোগ আসে।

ঢাকা মেইল: একজন নার্স হিসেবে নিজের তৃপ্তির জায়গা কোথায়?

সাব্বির: একজন নার্স হিসেবে গর্ববোধ করি। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য এখানে কাজ করার অনেক সুযোগ। রোগীর সেবায় মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পাই। পাশাপাশি পেশাজীবী নেতা হিসেবে এই পেশা সংস্কারে অবদান রাখতে পারাটাই আনন্দের।

ঢাকা মেইল: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ

সাব্বির: ঢাকা মেইলকেও ধন্যবাদ

বিইউ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর