শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘আওয়ামী লীগ সরকারকে আর কেউ বিশ্বাস করে না’

আবু সাঈদ রনি
প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:০৩ এএম

শেয়ার করুন:

‘আওয়ামী লীগ সরকারকে আর কেউ বিশ্বাস করে না’

দেশের মানুষের ওপর নির্যাতন করে চাল-ডালসহ প্রতিটি জিনিসের দাম মাত্রাতিরিক্ত হারে বাড়ানো হয়েছে। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগ সরকারকে কেউ আর বিশ্বাস করে না বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি মিজানুর রহমান মিনু। বর্তমানে হত্যা, গুম, নির্যাতন ছাড়াও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, সরকার সর্বস্ব বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ও সমমনা সব দল এই ‘নিশিরাতের সরকার’ এবং বর্তমান ‘অবৈধ ও আজ্ঞাবহ’ নির্বাচন কমিশনের আওতায় কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না।

সম্প্রতি ঢাকা মেইলকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান সাবেক এমপি মিজানুর রহমান মিনু। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা মেইলের রাজশাহী প্রতিনিধি আবু সাঈদ রনি।


বিজ্ঞাপন


ঢাকা মেইল: আসন্ন পাঁচ সিটি নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের তৎপরতাকে কীভাবে দেখছেন?

মিজানুর রহমান মিনু: বর্তমান ‘অনির্বাচিত’ সরকারকে বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করে না। এই সরকার কোনো নির্বাচিত সরকার না, নিশিরাতের সরকারের যা কিছু কর্মকাণ্ড সবই অবৈধ। এই সরকার অতীতে যে কয়টি নির্বাচন করেছে প্রত্যেকটি নির্বাচনই অবৈধ, প্রতিটি নির্বাচন জনমানবশূন্য ছিল। এই সরকারের সময়ে সর্বোচ্চ হত্যা, খুন, গুম, সন্ত্রাস এবং প্রচণ্ড নির্যাতন চলছে। এছাড়াও অবৈধভাবে এ দেশের মানুষের ওপর নির্যাতন করে চাল-ডালসহ প্রত্যেকটি জিনিসের দাম ‘অগ্নিমূল্যে’ মাত্রাতিরিক্ত বাড়ানো হয়েছে। এই অবস্থায় এই সরকারকে আর কেউ বিশ্বাস করে না, সরকার সর্বস্ব বিচ্ছিন্ন হয়েছে। আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও সমমনা বাংলাদেশের সকল দলই এই নিশিরাতের সরকারের আওতায় এবং বর্তমান অবৈধ ও আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের আওতায় কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। অতীতে যেমন- ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় যে নির্বাচন হয়েছে, তা ছিল সমুজ্জিত ও বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য। সেসব নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছিল। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগও একবার জয়লাভ করেছিল। আমরা চাই এ ধরণের নির্বাচন।

ঢাকা মেইল: রাসিক নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ভাবনা কি?

মিজানুর রহমান মিনু: আমরা বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করছি, স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনেই অংশগ্রহণ করছি না। সেহেতু এই (রাসিক) নির্বাচনে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী অংশ নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমাদের কাছে আগে দেশ বড়, দল বড়; সেহেতু দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।


বিজ্ঞাপন


ঢাকা মেইল: বিএনপি থাকা না থাকা নিয়ে নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে কি?

মিজানুর রহমান মিনু: বিএনপি যেই নির্বাচনে নেই, সেই নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না- এটাই তো স্বাভাবিক। অতীতেও গ্রহণযোগ্য হয়নি।

ঢাকা মেইল: বর্তমান দ্রব্যমূল্য সম্পর্কে কি বলবেন?

মিজানুর রহমান মিনু: মানুষ তার ক্রয়ক্ষমতা হারিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিশেষ করে চাল, আটা, ডাল, তেল, চিনি, শিশুখাদ্য, দুধ সবকিছু ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। প্রতিটি ঘরে ঘরে নীরব দুর্ভিক্ষের হাহাকার চলছে। যারা অনেক কষ্ট করে সংসার চালাত, তাদের এখন মাসের ১০ দিনও সংসার চলে না। দেশের মানুষের অর্ধাহারে ও অনাহারে জীবন চালাতে হচ্ছে। মানুষ যদি কিছু দাবি করছে, তার ওপর নির্মম জুলুম-নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এ সমস্ত দাবি নিয়ে বিএনপিসহ সকল দল যখন রাজপথে নেমেছে, সে সময় নেতাদের ‍ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হচ্ছে।

ঢাকা মেইল: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কার্যকরে বিএনপি কতটা আশাবাদী?

মিজানুর রহমান মিনু: বিএনপি মাটি ও মানুষের দল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ দেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত বিশ্বস্ত একটি পদ্ধতি। এ ধরণের নির্বাচনের দাবি অতীতে আওয়ামী লীগেরই ছিল। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায়ই নির্বাচন করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ জনগণই আওয়ামী লীগ সরকারের বিপক্ষে। আমরা রাজপথে আছি, যেকোনো সময় জনগণ রাজপথে নামবে। গণবিস্ফোরণের মধ্যদিয়ে অতীতে যেমন হিটলার বিদায় হয়েছে, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, এরশাদের মতো অনেক স্বৈরাচারই বিদায় হয়েছে; ঠিক সেভাবে তারাও বিদায় হয়ে যাবে।

ঢাকা মেইল: তরুণ প্রজন্মের প্রতি বিএনপি কতটা আস্থাশীল?

মিজানুর রহমান মিনু: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমান একজন আদর্শবাদী নেতা। তিনি ছিলেন সৎ, কঠোর পরিশ্রমী, প্রবল আত্মবিশ্বাসী। এ দেশের মানুষ তাকে রাষ্ট্রনায়ক বানিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, এই মাটি আমাদের, এই কোদাল আমাদের। তিনি খাল খনন করে পানি ও জমি উর্বর করার ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি এক জমিতে চারবার ফসল উৎপাদনের ব্যবস্থা করে দেশের মানুষকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলেন। আজকের গার্মেন্টস শিল্প, বেকার যুবকদের বিদেশে কর্মক্ষেত্রে গমন- সবই শহীদ জিয়ার অবদান। উনি বাংলাদেশের খুবই জনপ্রিয় একজন নেতা। উনার কোনো প্রচার-প্রচারণা টেলিভিশনে নাই, কোনো ভাস্কর্য নাই, কোনো মূর্তিতে নাই; কিন্তু উনি আছেন মানুষের হৃদয় ও চোখের মধ্যে। এ জন্য নতুন প্রজন্ম সেই চোখ দিয়েই শহীদ জিয়াকে দেখবে। পরবর্তীতে বেগম খালেদা জিয়া দেশকে গড়ে তুলেছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে যে ব্যাপক অর্জন সেটাকে মূল্যায়ন করবে। এছাড়াও বর্তমান প্রজন্মকে তারেক রহমান নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি একজন আদর্শ। সবমিলিয়ে তরুণ প্রজন্মের সবাই বিএনপির প্রতি প্রবল বিশ্বাস, আত্মবিশ্বাস ও আস্থাশীল।

ঢাকা মেইল: আজকের সুন্দর রাজশাহীকে কীভাবে বর্ণনা করবেন?

মিজানুর রহমান মিনু: মেয়র এবং সরকার পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়, আবার চেঞ্জ হয়। আমি যেসময় মেয়র ছিলাম, সে সময় রাজশাহী ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্গন্ধময়, অপরিচ্ছন্ন, অন্ধকারময়, চলাচল অনুপযোগী, অস্বাস্থ্যকর ও পিছিয়ে পড়া ছোট্ট শহর। সেখান থেকে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করার মধ্যদিয়ে রাজশাহীকে একটি পরিচ্ছন্ন, শিক্ষানগরী, স্বাস্থ্যকর নগরী, সবুজ মহানগরী করে আমরা জনগণের আস্থা অর্জন করেছিলাম। রাজশাহীকে বলা হতো ‘হ্যাপিয়েস্ট সিটি ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড’। আমরা সহাবস্থান সৃষ্টি করেছিলাম। রাজশাহীর যা কিছু উন্নয়ন, রেলওয়ে স্টেশন, সিটি ভবন, প্রশস্ত রাস্তাগুলো, পদ্মা নদীর বাঁধ, নতুন নতুন সড়ক, রুয়েট, মহিলা পলিটেকনিক, নার্সিং কলেজ, বোর্ড মডেল স্কুলসহ শত শত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুরু হয় বিএনপির সময়। এই রাজশাহীতে শিল্পের উন্নয়নের জন্য গ্যাস আমরা নিয়ে আসছি। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকবে। কিন্তু বর্তমানে উন্নয়নের নামে রাজশাহীতে ‘বালু বাবার’ সৃষ্টি হয়েছে, ভূমিদস্যুর সৃষ্টি হয়েছে, দুর্নীতিবাজদের সৃষ্টি হয়েছে। একসময় এ সমস্ত অপকর্ম জনগণের সামনে প্রকাশ পাবে। জনগণের সমস্ত অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে মাত্র ১৫/১৬ জন ব্যক্তি ভূমিদস্যুতা করে, বালু ব্যবসা করে, দুর্নীতি করে আজকে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। আমার সময় এগুলো ছিল না। আমি মনে করি, জনগণকে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে।

ঢাকা মেইল: বর্তমানের রাজশাহীকে কীভাবে উপস্থাপন করবেন?

মিজানুর রহমান মিনু: আমাদের গর্ব এজন্য যে, অতীতের শত শত বছর থেকেই রাজশাহী সুপরিচিত। অবিভক্ত বাংলায় কলকাতার পরই রাজশাহীর অবস্থান ছিল। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের পরই রাজশাহী কলেজ। সে সময় রাজশাহী যেটা আজকে বলতো, সারা বাংলাদেশ সেটা পরেরদিন বলতো। রাজশাহীর পাবলিক ছিল পাইওনিয়র। রাজশাহীতে অনেক বড় বড় ও আন্তর্জাতিক মানের নেতার সৃষ্টি হয়েছে। রাজশাহী আমাদের সবচেয়ে বড় অহংকার। এখানকার মানুষ সবাই শান্তিপ্রিয়, জনদরদী, সহাবস্থান, সৎ এবং পরিশ্রমী।

ঢাকা মেইল: রাজশাহীর রাজনীতিতে সহাবস্থান কতটা ভূমিকা রাখছে?

মিজানুর রহমান মিনু: আমার সে সময় সৌভাগ্য হয়েছিল এমপিও হয়েছিলাম-মেয়রও হয়েছিলাম একসঙ্গে। আমি সে সময় প্রশাসনকে বলতাম, আমার দল যদি ঠিক থাকে বাকিগুলোও ঠিক থাকবে। অন্য দলের কেউ কোনো কাজে আসলে তাদের যথেষ্ট সম্মান করতে হবে। আমি সে সময় সবাইকে সার্কিট হাউজে ডেকে নিয়ে চা-চক্র করেছি, একে অপরের কথা শুনতাম, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাতায়াত করতাম। কেউ কারও বিরুদ্ধে অপমানমূলক কোনো কথা বলতাম না। এরকম অনেক কারণে ইউনেস্কো এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে ‘হ্যাপিয়েস্ট সিটি ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড’ হিসেবে রাজশাহী সেটি অর্জন করেছিল। ১৯৯৪ সালের জাতিসংঘ কনফারেন্সে আমি ছিলাম সারা পৃথিবীর সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র। নেতৃত্ব নেতার ওপরই নির্ভর করে, কাউকে ঘৃণা না করা, অবহেলা না করা, সম্মানের চোখে দেখা, নিজে ধৈর্য ধরে কথা শোনা, কেউ অন্যায়মূলক কথা বললে তাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা, প্রতিহিংসাপরায়ণ না হওয়ার মতো মহৎ গুণগুলো অর্জন করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সেই অর্জনের সুযোগ দিয়েছিলেন।

ঢাকা মেইল: দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের প্রাপ্তি কি?

মিজানুর রহমান মিনু: আমাদের নেতা শহীদ জিয়াউর রহমান খুব ত্যাগী ছিলেন। আমি তার হাত ধরেই ছাত্ররাজনীতি করেছি। বেগম খালেদা জিয়া আজকের এই দায়িত্বে নিয়ে আসছেন। আমি সেজন্য খুবই হ্যাপি। শহরের সর্বস্তরের মানুষ আমাকে ভালোবাসে, মুরব্বিরা নিজ সন্তানের মতোই স্নেহ করে, মায়েরা নিজ সন্তান মনে করে নাম ধরে ডাকে, ছোট বোনেরা প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসে, আর ছোট ভাইয়েরা তো আমার জন্য জীবন উৎসর্গ করে। একটা নেতার এর চেয়ে পাওয়ার আর কিছুই নাই। আল্লাহ আমাকে সেসব সম্মান দিয়েছেন।

প্রতিনিধি/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর