শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘প্রতিবন্ধীদের আইনি সহায়তা দিয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি’

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০৬:১৬ এএম

শেয়ার করুন:

‘প্রতিবন্ধীদের আইনি সহায়তা দিয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি’

ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল, আইনজীবী হয়ে মানুষের সেবা করার। অর্তমানবতার সেবায় কাজ করার। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই লেখাপড়া করেন আইন নিয়ে। হন আইনজীবী। জজকোর্টের পর উচ্চ আদালতে অনেক ভুক্তভোগীর পক্ষে মামলায় লড়েন। কাজ করছেন অসহায় দুস্থদের পক্ষে। সুযোগ হলে আইনি সেবার বাইরে সমাজসেবাও করে যাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মাদ ছিদ্দিক উল্যাহ মিয়া। বিশেষ করে প্রতিবন্ধী শিক্ষক ও শিক্ষা নিয়ে কাজ করার আগ্রহ তার বেশি। এজন্য হাজারো মামলা করে লক্ষ বেকারের চাকরির আদেশ পাইয়ে দিয়েছেন আদালত থেকে। বাকি জীবনেও এভাবেই পরিচালিত হতে চান এই আইনজ্ঞ। প্রতিবন্ধীদের  বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দিয়ে নিজেকে ভাগ্যাবান বলে মনে করছেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী। ঢাকা মেইলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তার নানা ইচ্ছার কথা উঠে এসেছে।

ঢাকা মেইল: শুধু শিক্ষকদের নাকি অন্যদের ক্ষেত্রেও সহায়তা করে থাকেন?


বিজ্ঞাপন


ছিদ্দিক উল্যাহ মিয়া: আমি শুধু শিক্ষকতা পেশায় না। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যেকোনো পেশায় ঝামেলা হলে আইনি সহায়তা দিয়ে থাকি। সম্প্রতি ১১৪ জন রিটকারী ছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তারা প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সর্বশেষ ৩৭ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছেন। এখানে ১১৪ জনের বাইরে প্রায় ৩০০ প্রতিবন্ধীর কাগজ আমার হাতে জমা হয়েছে। উনারা সবাই লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। কোটার কথায় পরে আসি। এই ৩০০ জনের মধ্যে ভাইভায় একজনও চাকরি পান নাই। আপনারা জানেন আমি সব সময়ই চাকরি সংক্রান্ত মামলার সঙ্গে যুক্ত থাকি। আমি কম-বেশি মামলা করে থাকি।

ঢাকা মেইল: গুরুত্বপূর্ণ কাদেরকে সহায়তা করেছেন?

ছিদ্দিক উল্যাহ মিয়া: নরমাল প্রতিবন্ধী ছাড়াও আমি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করাদেরও সহযোগিতা করেছি। আমার কাছে ইনফরমেশন আসে কিছু কিছু লোক আমাকে বলে শারীরিক প্রতিবন্ধী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাস করেছে। তাদেরকেও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তখন আমি বিষয়টি আমলে নিলাম। সিরাজদিখানের রাসেল ঢালীকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আন্ডারে চাকরির মামলা করে তাকে নিয়োগের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সে এখন চাকরিতে যোগদান করেছে। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু সমিতি আছে। কিছু ব্যক্তি আছে, এরা সব সময়ই আমার সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। যারা চাকরি পায় না, অন্য কাজ করে তাদের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আমি কাজ করি।

ঢাকা মেইল: কত বছর ধরে এমন আইনি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন?


বিজ্ঞাপন


ছিদ্দিক উল্যাহ মিয়া: ২০১৩ সাল থেকে প্রতিবন্ধিদের আইনি সহায়তাগুলো দিয়ে আসছি। আইনের মাধ্যমে হোক অথবা ব্যক্তি পর্যায়ে হোক তাদেরকে আমি সহযোগিতা দিয়ে থাকি। আমি এসব ভুক্তভোগীদের কথা শুনে তাদেরকে বললাম তোমরা ভালোভাবে দেখ প্রতিবন্ধীদের কোটা তারা পূরণ করেছে কি না।

২০২২ সালে সর্বশেষ যে নিয়োগটা দিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সেখানে কিন্তু নারী কোটা আছে। সংবিধানে নারীদের সুবিধার কথা বলা আছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের অন্ধ এক নারী আছে। পারুল। সে তার ভাই তাকে হাত ধরে নিয়ে আসে। আমি তার কষ্ট দেখে আশ্চর্য হয়ে গেছি। তার অবস্থা খুবই খারাপ। যদিও আমি বিগত দিনে প্রতিবন্ধীদের কাজ নিয়ে জড়িত ছিলাম।

আরেকজন পার্থ প্রতিম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা। ইসলামিক ইউনির্ভাসিটি, খুলনা ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইউনির্ভাসিটির আছে। স্বাভাবিকভাবে একজন সন্তানকে এমএ পাস করানো অনেক কঠিন। চাকরি তো পরের কথা। এখন কথা হলো যারা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী এমএ পাস করেছে। সর্বোচ্চ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তারা রিটেনে উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও আর চাকরিটা পেল না। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের ভাইভায় তাদেরকে সুযোগ দেওয়া হলো না। কিন্তু কেন?

যেসব বাবা মা প্রতিবন্ধী সন্তানদের লালন পালন করে পড়াশোনা করিয়ে মানুষ করলো, তারা এখন বোঝা হয়ে যাবে? আমি বলবো এরকম যেসব ভুক্তভোগী আছেন, তাদরে সবাইকে পূর্ব থেকে আমি সহায়তা দিয়ে আসছি। এটা আমি প্রচার করতে চাই না। কারণ আমি যে আইনি সহায়তা দেই, তা গোপন রাখার চেষ্টা করি। আমি বিসিএসএর মামলায় অনেককেই সহায়তা দিয়েছি। আমি কারও নাম প্রকাশ করতে চাই না। এটাকে সাহায্য করা বলা যাবে না। শুধু আমি তার পাশে থাকলাম। সে আমাকে তার পাশে থাকার সুযোগ দিয়েছে। আমি এটা এভাবে নিয়েছি। আমি প্রাইমারিতে পুলের মামলা করেছি। ৫ শতাধিক মানুষকে আইনি সহায়তা দিয়েছি। আমি অনেক মামলা করি, অনেককেই বিনা ফিতে করে দেই। তাদের নাম মেনশন করতে চাই না। আজ পর্যন্ত  এটা আমি ফলাও করে প্রচার করিনি। শারীরিক প্রতিবন্ধী যরা আছেন, তাদের সবাইকে আমি বিনা ফিতে সহায়তা দিয়ে আসছি।

ঢাকা মেইল: এসব অসহায় মানুষদের সহায়তায় আপনার অনুভূতি জানতে চাই

ছিদ্দিক উল্যাহ মিয়া: আমি মানুষের জন্মের স্বার্থকতা দেখি। আমি আইনজীবী হয়েছি, এটা আমার বড় স্বার্থকতা। আইনজীবী হয়েছি, সার্ভিস ম্যাটারে মামলা করে আমি মানুষকে সহায়তা করেছি। এটা আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সার্থকতা মনে করি। প্রতিবন্ধীদের আইনি সহায়তা করে নিজেকে অনেক গর্বিত মনে করি। নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। সৃষ্টিকর্তা আমাকে সুযোগ দিয়েছেন তাদের পাশে থাকার। আমি এদের বিষয়ে কোর্টে গেলে কোর্ট আমার পক্ষে আদেশ দিয়েছে। আদালত ও সরকার এটা ভালোভাবে নিয়েছে।

ঢাকা মেইল: এসব মামলা কোর্ট কীভাবে নেন?

ছিদ্দিক উল্যাহ মিয়া: মাননীয় বিচারপতিরা এটাকে ভালোভাবে নিয়েছেন। তারা বলেছেন প্রতিবন্ধীদের যদি আমরা ভালোভাবে নিতে না পারি তাহলে তারা আমাদের বোঝা হয়ে যাবে। তাদেরকে সম্পদে পরিণত করতে হবে। ঢাকা ইউনির্ভাসিটি থেকে পড়ালেখা করেছে তাদেরকে কেন আপনি বোঝা মনে করবেন। সে নিজেকে বোঝা মনে করলে এটা কী সে পড়তো পারতো নাকি। অতএব আমি মনে করি যে যেখানে আছেন সেই অবস্থানে থেকে এদেরকে সম্পদে পরিণত করা উচিত। এদের জন্য সরকার কোটা মানলে কোন ক্ষতি হতো না, তারা বাবা মায়ের কাছে বোঝা হয়ে যেত না। প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে প্রতিবন্ধীদের বাবা মা কষ্ট করে লেখাপড়া করিয়েছেন এটা কী তাহলে ভুল করেছেন? না। ভুল করেন নাই। এই পারুল অন্ধ হওয়ার কারণে তার ভাই তাকে নিয়ে আসে। একজন সুস্থ্য মানুষের পড়াশোনা করাই কষ্ট, আর পারুলের জন্য তো বেশি কষ্ট। তার ভাইকে সঙ্গে করে নিয়ে আসতে হয়। কী অমানবিক! শুধু প্রাইমারির চাকরির জন্য না, প্রতিবন্ধীরা সারা দেশের যেকোনো জায়গার চাকরিতে বাধাপ্রাপ্ত হবে সেখানেই আমি তাদেরকে আইনি সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

উল্লেখ্য, অ্যাডভোকেট ছিদ্দিক উল্যাহ মিয়া সুপ্রিম কোর্টের একজন নিয়মিত আইনজীবী। তিনি শিক্ষকদের মামলা করে গণমাধ্যমের বদৌলতে দেশব্যাপী পরিচিতি পেয়েছেন।

এআইএম/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর