শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সিন্ডিকেটে আ.লীগের কেউ থাকলেও রেহাই পাবে না’

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০২২, ১১:০২ এএম

শেয়ার করুন:

‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সিন্ডিকেটে আ.লীগের কেউ থাকলেও রেহাই পাবে না’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। ছবি: ঢাকা মেইল
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কেউ কেউ ব্যবসা বাণিজ্য করছে। তবে বর্তমান অস্থির বাজার পরিস্থিতিতে তাদের কোনো হাত নেই। যদি আওয়ামী লীগের কেউ বাজার অস্থিরতার সিণ্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকে তবে তারাও রেহাই পাবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। ঢাকা মেইলকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক কাজী রফিক।

ঢাকা মেইল: বর্তমান বাজার পরিস্থিতি খুবই অস্থির। এ নিয়ে জনগণ ও বিএনপির নানা অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে কি বলবেন?


বিজ্ঞাপন


বাহাউদ্দিন নাছিম: বর্তমান সময়টা স্বাভাবিক সময়ের চাইতে ভিন্ন। রাশিয়া-ইউক্রেন যে যুদ্ধ চলছে তা নিয়ে সারাবিশ্বই একটা উদ্বেগের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশেও নিত্য প্রয়োজনীয় ও নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার যে ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেটা আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করেছে। দেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে। তা নিরসনের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এবং সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি কিভাবে মোকাবেলা করা যায় তা নিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কারণ এই পদক্ষেপের কারণে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আমরা আশা করি।

সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন ভ্যাট এবং শুল্ক-কর কমিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি বাজারকে নিয়মিতভাবে নজরদারি করা হচ্ছে এবং সেটা বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া টাস্কফোর্স গঠন করার বিষয়ে সরকার ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই আলোকে আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠ পর্যায়ে বাজারের দিকে সজাগ দৃষ্টিতে লক্ষ্য রাখছে। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গেও সহযোগিতা করার প্রয়োজন পড়ে তাদেরকে আমাদের নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করার জন্য নির্দেশনা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মেইল: রমজানের আগেই দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। এবার একটু আগে থেকেই এ অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর কারণ কি হতে পারে?

বাহাউদ্দিন নাছিম: আমরা আশা করতে চাই, সংকটে কেটে যাবে। কারণ প্রায় দুই বছর হলো করোনার। সারাবিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা দেশেরও মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা একটি বিষয়। এর পাশাপাশি সামনে রমজান মাস। সবসময়ই লক্ষ্য করা যায়, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী, একশ্রেণির মজুদদার জনভোগান্তি সৃষ্টি করে। নিজেদের ফায়দা হাসিল করার চেষ্টা করে। কিন্তু এবার আমরা একটু ভিন্নতা লক্ষ্য করলাম যে, এই বিষয়গুলোকে কিন্তু সব সময় সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাড্রেস করা হয়েছে। যে কারণে অতীতে কিন্তু এ ধরনের রমজানকে সামনে রেখে পাঁয়তারা থাকল তারা সফল হয়নি। দ্রব্যমূল্য মোটামুটি নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে। জনগণের দুর্ভোগ যার সৃষ্টি করে তারা আর যাই হোক জনগণের বন্ধু না। তারা কোনো ভালো ব্যবসায়ী না। সবচেয়ে দুঃখজনক ও লজ্জাজনক হলো কায়েমী স্বার্থবাদী রাজনৈতিক গোষ্ঠী, মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। এরা বিভিন্ন ভাবে দেশে পণ্যের দাম বাড়ার আগেই তারা নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে। কখনও কখনও অপপ্রচার করছে। কখনো কখনো সুবিধাবাদী ব্যবসায়ীদের অথবা মুনাফাখোর মজুদদারদেরকে উস্কে দেওয়ার জন্য তারা অপপ্রচার চালিয়েছে এবং নানাবিধ কথা বলে।
কখনও বলে দেশে দুর্ভিক্ষ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো সময় দুর্ভিক্ষ হয়ে যাবে। কখনো বলে দেশের খাদ্য খাদ্য সংকট। বাজারকে নিয়ন্ত্রণ বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের এ ধরনের অভিসন্ধিমূলক কথার ভিতরে বাজারের অস্থিরতা সৃষ্টি হলে মানুষের জনদুর্ভোগ বাড়বে। কিন্তু দেশবাসী জানে, আমরা সবাই জানি আপনারা সাংবাদিকরা জানেন কোনো সংকট বা কোনো সমস্যা নেই। সুতরাং দেশের মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করার পাঁয়তারায় যেসকল তথাকথিত দেশবিরোধী অপরাজনৈতিক শক্তি দেশের মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে, যারা রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়, তাদের ব্যাপারে আমরা সবসময়ই সচেষ্ট থাকার চেষ্টা করি। এবারও আমরা মাঠে ময়দানে আছি। যাতে মানুষের ভেতরে বিভ্রান্তি না ছড়ায়, দেশের জনগণ কষ্টে যাতে না পড়ে।


বিজ্ঞাপন


ঢাকা মেইল: বাজারের এ অস্থির পরিস্থিতির সঙ্গে আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ীরাও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত কি হবে?

বাহাউদ্দিন নাছিম: খুব পরিষ্কার ভাবে আমি বলতে চাই যে, আওয়ামী লীগের কোনো ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নেই। আওয়ামী লীগের হয়তো কেউ কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে। তাতে দোষের কিছু নেই। সেটা যদি সে কোনোভাবে কোনো ফায়দা লুটে কিংবা সে ধরনের কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আমাদের কাছে আনতে পারেন। তাদেরকে অবশ্যই আমরা বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাবো। এক্ষেত্রে কোন রেহাই নেই।

ঢাকা মেইল: বাজারদর থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপি নিয়মিত নানা অভিযোগ করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে কি বলবেন?

বাহাউদ্দিন নাছিম: আমি যে কথাটা বলছি, সেটা হল যারা মিথ্যাচার করে, যারা অপপ্রচার করে, যারা ইতিহাস বিকৃত করে, যারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে, যারা সহিংসতার রাজনীতি করে তারা কখনো কোনো ভালো সহ্য করতে পারে না। তারা অনেকটা চোখ থাকিতে অন্ধ। এই অন্ধ মানুষদেরকে নিয়ে আমরা খুব একটা চিন্তা করি না। কারণ বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়ন দেখতে পারে না, যারা অগ্রগতি দেখতে পারে না, দেখে না, যারা সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ যখন সারা বিশ্ববাসীর কাছে সমাদৃত হচ্ছে যখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। যখন শেখ হাসিনাকে পুরস্কৃত করে আন্তর্জাতিক বিশ্ব। তখন এরা সমালোচনা করে। এই সমালোচকদের সমালোচনা দিকে তাকিয়ে আমরা বসে থাকি না, আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশ পরিচালনা করছেন এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য মানুষের স্বার্থে কাজ করে।

আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে, বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার একটি দল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে এবং কাজ করে যাবে। আমরা অনেক বাধা-বিপত্তি, চড়াই-উৎরাই মোকাবেলা করে এসেছি। বিএনপি-জামায়াত সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক সন্ত্রাসের মাধ্যমে দুর্নীতি করে, যারা মানুষ মারে, মানুষ পুড়িয়ে রাজনীতির ফায়দা লুটার চেষ্টা করে তারা বাংলাদেশের জনস্বার্থে তারা কখনোই কাজ করে না। তারা কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে, সমৃদ্ধশালী বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে আমরা বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসাবে আমরা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ।

ঢাকা মেইল: নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হলো। এ কমিশনের থেকে কেমন নির্বাচন প্রত্যাশা করেন?

বাহাউদ্দিন নাছিম: আমি আশাবাদী মানুষ। আমরা সব সময় ভালো কিছু আশা করি এবং চেষ্টা করি। সেই চেষ্টার জায়গায় দাঁড়িয়ে, সেই আশা জাগানিয়া জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি বলতে চাই, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন করার দায়িত্ব, নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এবারই প্রথম সংবিধানের আলোকে, আইনে পরিণত আইনে মধ্য দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং যে প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে হয়েছে এটা সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়া। যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা অবশ্যই আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, দক্ষ ও যোগ্য। নির্বাচন পরিচালনা করার মধ্য দিয়ে তাদের দক্ষতার পরিচয় তারা দিবেন। এটা আমাদের প্রত্যাশা এবং তারা তাদের সফলতা প্রমাণ করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।

বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনে বিশ্বাস করে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এই নির্বাচন কমিশন আয়োজন করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে আরো শক্তিশালী করবে বলে আমি আশা করি।

(সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব আগামীকাল প্রকাশ করা হবে)

কারই/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর