শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

‘আওয়ামী লীগকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে’

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০৪:২৮ পিএম

শেয়ার করুন:

‘আওয়ামী লীগকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করতে হবে। গণতান্ত্রিক সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে যারা নস্যাৎ করতে চায় সেই শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম করতে হবে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দি। ঢাকা মেইলকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা জানান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা মেইলের স্টাফ রিপোর্টার কাজী রফিক।

ঢাকা মেইল: প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হলেন। কি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবেন?


বিজ্ঞাপন


সুজিত রায় নন্দি: আওয়ামী লীগের সদস্য থাকাটাই সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমি মনে করি আমরা সবাই কর্মী। নেতা ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এখন আমাদের নেতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আমরা সবাই তার সহকর্মী। সেই মনোভাব নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করা, আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করা। মানবকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখা, গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অক্ষুণ্ণ রাখা আমাদের সবার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

ঢাকা মেইল: আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ কোন পথে এগোবে?

সুজিত রায় নন্দি: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অনেক চ্যালেঞ্জ আমাদেরকে মোকাবেলা করতে হবে। বিশেষ করে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতিকে যারা নস্যাৎ করতে চায় সেই শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম করতে হবে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। দেশের যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। যারা প্রতিহিংসার রাজনীতি করে তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে উন্নয়ন অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করা, স্তব্ধ করে দেওয়া। সেই কারণে আমাদের সবাইকে এক ও অভিন্ন থাকতে হবে।

এক্ষেত্রে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে শৃঙ্খলা ও একতা থাকা উচিত। একতা না থাকলে সমস্যার তৈরি হয়। বিশৃঙ্খলা হলে সেই সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান কখনো সফল হতে পারে না। সুতরাং আমাদের ডিসিপ্লিন ও ইউনিটির ওপর অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। এই বাংলাদেশ শেখ হাসিনার হাতে নিরাপদ, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার বিকল্প কেবল শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার হাতে ক্ষমতা না থাকলে বাংলাদেশকে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সিরিয়ার মতো ভাগ্য বরণ করতে হবে। সে কারণে আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দলকে ঐক্যবদ্ধ করে জনগণের সমর্থন নিয়ে আবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংগঠনের ভেতরে যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলোর সমাধান করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করা- এটা আমাদের মুখ্য কাজ।


বিজ্ঞাপন


আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যতদিন ঐক্যবদ্ধ থাকবে পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগের অভিযাত্রাকে ব্যাহত করে পারবে। আমাদের বিরোধী দল বা বিরোধী শক্তি সবসময় অপরাজনীতিতে বিশ্বাসী। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বাংলাদেশে সামরিক, স্বৈরাচার ও বেসামরিক সরকার যারা ক্ষমতায় ছিল জাতিকে তারা রিমার্কেবল কোনো উপহার দিতে পারেনি। বারবার ক্ষমতায় এসে তারা আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাৎ করে দিতে চেয়েছে। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করার পরপরই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘপথ পরিক্রমায় কঠিন সমস্যা সমাধান করে, মোকাবেলা করে সত্য ও সুন্দরের বিজয়ের লক্ষ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

ঢাকা মেইল: নির্বাচনে বিএনপি আসবে না বলে শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ কি ভাবছে?

সুজিত রায় নন্দি: আওয়ামী লীগ সবসময় সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার। জামায়াতের ব্যাপারে আদালত যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই হবে, এটা আদালতের এখতিয়ার। আওয়ামী লীগ একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ নীতি ও আদর্শের বাইরে কখনোই চিন্তা করে না। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ব্যাপারে বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিষয়ে আমাদের অবস্থান সবসময়ই সুদৃঢ়। সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস- এসব বিষয়ে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় নেই। এসবের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সবসময় কঠিন এবং আমরা বদ্ধপরিকর।

রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে আসার অধিকার আছে, না আসার অধিকারও আছে। আমরা আশা করব, আগামী সংসদ নির্বাচন সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু হবে। পৃথিবীর সব দেশে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় বাংলাদেশেও সেই পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। বাংলাদেশ পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। টাইম অ্যান্ড টাইড ওয়েট ফর নান।

ঢাকা মেইল: রংপুরে জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের একটি প্রভাব রয়েছে। সে দিক থেকে আওয়ামী লীগের অবস্থান কি এবং আপনার ভূমিকা কি হবে?

সুজিত রায় নন্দি: রংপুরে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী। সেখানে যেহেতু মহাজোটগতভাবে পূর্বে নির্বাচন হয়েছে, দেখা গেছে মহাজোটের স্বার্থে অনেক জায়গায় ছাড় দিতে হয়েছে। সেটা একটা বিষয়। কিন্তু সাংগঠনিক অবস্থার দিক দিয়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগ যথেষ্ট শক্ত অবস্থানে রয়েছে। এখন আমাদের কাজ হলো যে জায়গাগুলোতে সমস্যা, ত্রুটি আছে সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা। আওয়ামী লীগ একটা বড় দল। সেখানে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতেই পারে। অনেকের মধ্যে মতের অমিল থাকতে পারে, সেটা স্বাভাবিক। আমাদের নেতা-কর্মীরা সবাই যাতে এক ও অভিন্ন থাকে সেই চেষ্টা করব।

ঢাকা মেইল: যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করছে বা চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ করছে তাদের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত কি?

সুজিত রায় নন্দি: চেইন অব কমান্ড যারা ভঙ্গ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং সেটা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কর্মপরিকল্পনা হচ্ছে- নির্বাচনী প্রচারে দলকে সুসংগঠিত রাখা। দেশে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে সেটাকে ব্যাপকভাবে প্রচার করা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে- এটাকে মানুষের কাছে তুলে ধরা।

ঢাকা মেইল: আওয়ামী লীগ বলছে, ৫৪ দল সরকারবিরোধী। আওয়ামী লীগের জোটে রয়েছে ১৪ দল। নির্বাচন সামনে রেখে জোটের শরিক বাড়ছে কিনা?

সুজিত রায় নন্দি: ১৪ দল আদর্শিক জোট। ৫৪ দল অন্তঃসারশূন্য। বাকিটা সময়ই বলে দেবে।

ঢাকা মেইল: আওয়ামী লীগ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় জানাচ্ছে। কেমন হবে সেই স্মার্ট বাংলাদেশ?

সুজিত রায় নন্দি: ডিজিটাল বাংলাদেশের পরবর্তী ধাপে স্মার্ট বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের টার্গেটে জাতির সামনে স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য নিয়ে আসা হয়েছে। সেই স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা যখন আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া হয়েছিল তখন অনেকেই কটাক্ষ করেছিল। যারা অপরাজনীতি, প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে তারাই কটাক্ষ করেছে। তারাই পদ্মা সেতুকে নিয়ে কটাক্ষ করেছে, তারাই উন্নয়ন অগ্রগতির ধারাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। আজ তারাই সুবিধা ভোগ করছে।

স্মার্ট বাংলাদেশ হবে তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর। প্রতিটি নাগরিককে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট সোসাইটি- সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যেতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে- ক্ষুদ্র স্বার্থ পরিহার করে বৃহৎ স্বার্থের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

ঢাকা মেইল: দেশের দ্রব্যমূল্য অনেক বেশি। জনগণ কষ্টে আছে। এ বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখেন?

সুজিত রায় নন্দি: বিশ্বের উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে। আমি মনে করি জননেত্রী শেখ হাসিনার ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টে যে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা রয়েছে পৃথিবীর দ্বিতীয় কারও তা আছে কি-না আমার জানা নেই। করোনা মহামারিতে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো হিমশিম খেয়েছে। কিন্তু আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে করোনা মহামারি সহনশীল পর্যায়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি। লকডাউনে একটি লোকও না খেয়ে মারা যায়নি। এটা সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা। উন্নত দেশ ছাড়াও পৃথিবীর কোথায়ও বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দেয়নি। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিনা পয়সায় দিয়েছে। এটা একটি বিরল দৃষ্টান্ত পৃথিবীর বুকে।

ঢাকা মেইল: নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আপনার কোনো বার্তা আছে?

সুজিত রায় নন্দি: আমাদের সবাইকে দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে স্যাক্রিফাইস করতে হবে। দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে যারা পরীক্ষিত তারা দলের পিঠে আঘাত করে না। যারা অনুপ্রবেশকারী ও দলের ভিতরে ঢুকে সমস্যা সৃষ্টির চেষ্টা করছে সেই শক্তির বিরুদ্ধে আমদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে।

কারই/জেএম/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর