শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘সন্ত্রাস করে জনসমর্থন পাওয়া যায় না, ভালোবাসা দিতে হবে’

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০৭:১৮ এএম

শেয়ার করুন:

‘সন্ত্রাস করে জনসমর্থন পাওয়া যায় না, ভালোবাসা দিতে হবে’

বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেছেন, আগুন সন্ত্রাস করে, গাড়ি ভাঙচুর করে, মানুষ হত্যা করে জনসমর্থন পাওয়া যায় না। প্রেম দিতে হবে, ভালোবাসা দিতে হবে। তাহলে মানুষ আপনাকে গ্রহণ করবে।

সম্প্রতি ঢাকা মেইলকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন


বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিলে কতটি আসন পেতে পারে, জানতে চাইলে বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, আমি কি গণক নাকি? আমি তো বলতে পারব না তারা কতগুলো আসন পাবে। তবে তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন।

আওয়ামী লীগের এই নেতা বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, তারা নির্বাচনে যায় না, তারা অপকর্ম করছে। আগুন সন্ত্রাস করে, গাড়ি ভাঙচুর করে, মানুষ হত্যা করে জনসমর্থন পাওয়া যায় না। প্রেম দিতে হবে, ভালোবাসা দিতে হবে। তাহলে মানুষ আপনাকে একসেপ্ট (গ্রহণ) করবে। মানুষ আপনার চোখ তাড়ানিতে ভয় পাবে না। একটা পর্যায় পর্যন্ত ভয় পাবে।

বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, মানুষের যখন দুর্দশা চলবে, তখন থাকতে পারবে না। খালেদা জিয়া থাকতে পারে নাই, এরশাদ থাকতে পারে নাই, জিয়াউর রহমান তো মারা গেছেন। উনারও ওই পথে যেতে হতো। মানুষ বসে থাকে না।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই যে আজকে খালেদা জিয়ার বিএনপি, তারেকের বিএনপি, ওরা কারা? এই খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বাংলাদেশের। আমি রেসপেক্ট করি। তাই বলে তিনি এতিমের টাকা চুরি করবেন? দুর্নীতি করবেন? ওই টাকা দিয়েছে এতিমদের জন্য, ওই টাকা উঠিয়ে দলের একজনের একাউন্টে দিয়ে দিবেন?


বিজ্ঞাপন


বি এম মোজাম্মেল বলেন, এখন চিৎকার করে। আইন মানে না, আদালত মানে না, কিছু মানে না। আইনের শাসন মানে না।

বিএনপির ২৭ দফা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল বলেন, বিএনপি-জামায়াতের ২৭ দফা দাবি ভিত্তিহীন এবং মনগড়া কথাবার্তা। তারা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের যে গালগল্প দিয়েছে- এসব জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য কোনো বিষয়বস্তু না।

তিনি বলেন, এই যে আপনি দেখেন, বিএনপির ২৭ দফা দিয়েছে, তারা দেশকে মেরামত করবে। দেশটা ধ্বংস করেছে কারা? এই দেশের মেরামতটা কি? দেশ কিভাবে চলে? একটা সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দেশ চলে। নির্লজ্জ বেহায়ার মতো তারা বলে দেশ মেরামত করবে। দেশের সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে বিএনপি। তাদের নেতা জিয়াউর রহমান, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে খুনি মোশতাক, খুনি জিয়া মিলে ষড়যন্ত্র করে একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে এই সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। দেশটাকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে, মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের যে লক্ষ্য, মুক্তিযুদ্ধের যে মূল্যবোধ তারা ক্ষত-বিক্ষত করেছে, ভূলুণ্ঠিত করেছে, আমাদের জাতীয় চার মূলনীতিকে ভেঙেচুরে ফেলেছে। সেটি শুধু তারা ক্ষত-বিক্ষতই করেই ক্ষান্ত হয়নি, যাতে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার না হয় সেজন্য সংবিধান সংশোধন করেছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা সময় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম খুব ঢিলেঢালভাবে চলে। সম্মেলন কাছাকাছি চলে আসায় বেগবান হয়। তৃণমূল থেকে শুরু করে জেলা পর্যন্ত আমরা অধিকাংশ জেলায় সম্মেলন, কমিটি গঠন শেষ করেছি। এখন প্রয়োজন কেন্দ্রীয় ও জাতীয়ভাবে আরও চাঙা করা, আরও বেশি গণমুখী করে তোলা। যদিও আওয়ামী লীগ গণমুখী দল। তৃণমূল পর্যন্ত আমরা সেভাবেই সম্পন্ন করেছি।

বি এম মোজাম্মেল বলেন, দলের কাউন্সিল আওয়ামী লীগের জন্য নতুন কিছু বিষয় না। আওয়ামী একটি প্রাচীন দল এবং সবচেয়ে আধুনিক দল। আওয়ামী লীগ প্রতি তিন বছর পর পর কাউন্সিল করে। এবং কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে জনগণের প্রত্যাশা, জনগণের আশা আকাঙক্ষা প্রত্যাশা পূরণে আমরা আমাদের কর্মসূচি পরিবর্তন করি। আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্র সেভাবেই তৈরি করা যাতে করে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়, সরকারও সেভাবেই কাজ করে।

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, খুনি জিয়া ক্যান্টনমেন্টে বসে যেসব বিধিবিধান লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা খরচ করে সামরিক উর্দি পরে রাজনৈতিক দল গঠন করে, এটা তো আমাদের সংবিধানে নাই। সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করে তারা হ্যাঁ-না ভোট করে। আওয়ামী লীগের সাধারণ ওবায়দুল কাদের যথার্থই বলেছেন, দেশ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা আওয়ামী লীগ করেছে এবং আওয়ামী লীগ দেশ মেরামত করেছে- এটাই তো সত্য।

বিএম মোজাম্মেল বলেন, দীর্ঘ একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে, দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়ে পুনরায় হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছি, সংবিধান পুনর্বিন্যাস করেছি। এইভাবেই আমরা সংবিধান ও দেশটা মেরামত করেছি। ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি চালু করে বিএনপি, দেশ বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। তারা দেশ মেরামতের কথা বললে হাসি পায়, এটা হাস্যকর ব্যাপার। বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, নির্বাচনে বিশ্বাস করে না। বিএনপি নির্বাচন ঠেকানোর জন্য আগুন সন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করে। সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি করে। পাঁচ শতাধিক মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন, বিগত দিনেও ওদের বয়কট করেছে, এবারও করবে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশ শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করবেন- এটাই মোদ্দাকথা।

আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, বিএনপির কথা, আমরা ভোট করব না, ক্ষমতায় যাব। ২০১৪ সালে ভোটে আসেনি, ভোট ঠেকাতে পারেনি। জনতার রুদ্ররোষে বিএনপি পিছু হটতে বাধ্য হবে। আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল, মানুষের হৃদস্পন্দন নিয়েই এগিয়ে যাবে। আগামী জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে জননেত্রী শেখ হাসিনা দিকনির্দেশনা দেবেন। কাউন্সিলরা জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপরই আস্থা রাখেন। উনিই সিদ্ধান্ত নেবেন কে পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হবেন। সারা বাংলাদেশের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যন্ত সবাইকে চিনেন, জানেন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন সেটাই বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে, জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

২৪ ডিসেম্বরের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কেমন কমিটি আসতে যাচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, এখানে প্রেসনোটের কমিটি হয় না। কাউন্সিলররা নির্ধারণ করবেন। আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। এখানে প্রেসনোটের কমিটি হয় না বিএনপি বা অন্যদের মতো। কাউন্সিলে দুটি অধিবেশন হবে। দ্বিতীয় অধিবেশনে শুধুমাত্র কাউন্সিলররা থাকবেন। কাউন্সিলররা নাম প্রস্তাব এবং সমর্থন করবে।

আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে রুটিন চেঞ্জ হয়, অনেক পুরাতন-নতুনদের সম্পৃক্ত করা হয়- এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। পরিবর্তন আসবে, পরিবর্তন হবে- এটাই তো স্বাভাবিক। প্রবীণ যারা আওয়ামী লীগ নেতা আছেন, নবীন যারা আছেন এবং মধ্যবয়সী যারা আছেন- এই তিনটার সমম্বয়ে কিন্তু আওয়ামী লীগের কমিটি হয়ে থাকে। অর্থাৎ সমন্বয় করে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়। পরিবর্তন হবে, পরিবর্তন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। গত কাউন্সিলে পরিবর্তন হয়েছে এবং আগামী কাউন্সিলে তাই হবে।

মাঠের রাজনীতিতে জামায়াতকে মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ কতটা সক্ষম জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত ভিন্ন ভিন্ন কিছু না। স্বাধীনতা বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী- এই ধ্যান ধারণায় যারা আছে তাদের মোকাবেলা করতে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে সবসময় প্রস্তুত।

জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না, আওয়ামী লীগ এটাকে পুঁজি করে রাজনীতি করছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, আওয়ামী লীগ এই রাজনীতি করে না। আওয়ামী লীগ এটা নিষিদ্ধ করেছিল। পরবর্তীতে কিন্তু খুনি জিয়াউর রহমান জামায়াতকে, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের আইন সংশোধন করে দেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়। স্বৈরাচারী শাসক এরশাদ কিন্তু এদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি শুরু করে। খুনি জিয়া, খুনি মোস্তাক এবং জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে এনেছেন কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আজ হারানো ঐতিহ্য ফিরে এসেছে এবং শেখ হাসিনা সংবিধানকে আবার সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। আওয়ামী লীগ কিন্তু রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখেনি, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের পাশাপাশি অন্য ধর্মের কথাও বলা হয়েছে এবং সংবিধানে এই সংযুক্তি শেখ হাসিনাই করেছেন। জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ না করার কোনো কারণ তো দেখি না।

আওয়ামী লীগ অনুপ্রবেশকারীদের কতটা শনাক্ত করতে পেরেছে এবং তাদের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সবকিছু ফাইন্ড আউট করার চেষ্টা করেছি। আমাদের দলে হাইব্রিড অনুপ্রবেশকারী কোন কমিটিতে ঢুকেছে? ঢুকে নাই। আপনি একটা প্রমাণ দেখান। যারা ঢুকেছিল তারা আওয়ামী লীগের দলে আছে কিন্তু পদ-পদবিতে নেই। তাদের কোনো কর্মকাণ্ড নেই।

তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশের ভোটার। তার কাছে তো আমি ভোট চাইতে পারি। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করলে আমার জনসমর্থন দরকার। এই সমাজের ডাকাত আছে, চোর আছে, সাধু সন্ন্যাসী আছে, পীর সাহেব আছে, রাজনৈতিক নেতা আছেন, সন্ত্রাসী আছে, গরু চোর আছে। একদিনে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়, দিনে দিনে হবে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। মনে রাখবেন যখন দেশ উন্নতি করবে, সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে তখন দেখবেন এগুলো থাকবে না।

কারই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর