শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘দক্ষ মানবসম্পদ গড়তে নিজস্ব গবেষণার বিকল্প নেই’

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৬ অক্টোবর ২০২২, ১২:৫২ পিএম

শেয়ার করুন:

‘দক্ষ মানবসম্পদ গড়তে নিজস্ব গবেষণার বিকল্প নেই’
ছবি : ঢাকা মেইল

রাজশাহী কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেকের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগের এক বছর পূর্ণ হয়েছে মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর)। সম্প্রতি ঢাকা মেইলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কলেজের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা মেইলের রাজশাহী প্রতিনিধি আবু সাঈদ রনি। 


বিজ্ঞাপন


ঢাকা মেইল: ৪ অক্টোবর আপনার অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। সেই বিবেচনায় আপনি অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগের রাজশাহী কলেজ ও বর্তমান রাজশাহী কলেজের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখছেন কি? 

প্রফেসর আব্দুল খালেক: রাজশাহী কলেজ সার্ধ শতবর্ষের সুপ্রাচীন একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ কাজই হচ্ছে একাডেমিক উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিক্ষা বান্ধব পরিবেশ। আমি মনে করি রাজশাহী কলেজ বিগত এক দশক ধরে এগুলো বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করছে। আমার দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় এক বছর হতে চললো, রাজশাহী কলেজ তার যে ঐতিহ্য বা ধারাবাহিকতা সেটিতে ব্যতয় ঘটেছে করোনার কারণে। শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস চললেও শ্রেণিকক্ষে আসার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা ছিল। সেটিকে ওভারকাম করে নতুন উদ্যমে আবার আগের অবস্থায় ফিরতে রাজশাহী কলেজ নিরলসভাবে কাজ করছে। শ্রেণির কার্যক্রম, একাডেমিক কার্যক্রম ও এক্সট্রা কারিকুলার যেগুলো রয়েছে সেগুলোও সঠিক সময়ে সঠিকভাবে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যে একাডেমিক ক্যালেন্ডার এই জায়গায় শিক্ষার্থীদের কিছুটা দুর্বলতা ফিল করছি। 

ঢাকা মেইল: রাজশাহী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এক সময় গবেষণার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল। অনেকে আক্ষেপ করে বলেন, ‘দেশসেরা রাজশাহী কলেজে গবেষণার পথ সংকীর্ণ হয়েছে।’ এ বিষয়ে আপনার কী মতামত? সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কী কী উদ্যোগ নিচ্ছেন? 

প্রফেসর আব্দুল খালেক: কলেজগুলোতে শিক্ষার যে পাঠ্য বিন্যাস আছে সেখানে উচ্চ শিক্ষার সার্টিফিকেট দেওয়া আর গবেষণা বা কর্ম পরিচালনা করার মধ্যে তফাৎ আছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সুযোগ-সুবিধা আছে, সরকারি কলেজগুলোতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সেই সক্ষমতা নেই বা স্বাধীনতা নেই। এক সময় রাজশাহী কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল ও বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত আছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুন ও মাউশির নিয়ম সম্মিলিত করেই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। আমার জানা মতে কলেজে কখনও গবেষণার ক্ষেত্র বা সুযোগ ছিল বলে জানা নেই। কারণ এর জন্য যে অবকাঠামো, বরাদ্দ, উন্নত ল্যাবরেটরি দরকার সেগুলো এখানে কখনও ছিল না। শিক্ষার্থীদের শেখার জন্য ল্যাবরেটরি আছে কিন্তু সেটা গবেষণার জন্য যথেষ্ট নয়। তবে রাজশাহী কলেজের একটি সমৃদ্ধ সুপ্রাচীন লাইব্রেরি আছে, যেখানে গবেষণার অনেক উপকরণ আছে। অনেকে লাইব্রেরিতে এসে পড়াশোনা করে লাইব্রেরির সাহায্য নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। তবে প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাজশাহী কলেজে ভর্তি করে গবেষণায় নিয়ে যাওয়া এই সুযোগ অতীতেও ছিল না, বর্তমানেও নেই। আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয়কে বলেছি, অন্তত অন্যদের সাথে কো-রিলেট করে হলেও ভালো শিক্ষার্থীদের গবেষণায় সম্পৃক্ত করার জন্য। আমাদের কলেজে প্রায় ৭০ জন পিএইচডিধারী শিক্ষক আছেন, যাদের অনেকেই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম। শিক্ষার প্রকৃত জ্ঞান চর্চা করতে হলে গবেষণার বিকল্প নেই। আমরা যদি একটা দেশের উন্নতি করতে চাই, দক্ষ মানবসম্পদ গড়তে চাই, দেশের বিভিন্ন সেক্টরে যদি উন্নয়ন করতে চাই তবে নিজস্ব গবেষণার বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধু যে উন্নত, সমৃদ্ধশালী, অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশের কথা বলেছেন, সেটি যদি অর্জন করতে আমরা চাই যেটা প্রধানমন্ত্রীও বারবার বলছেন, উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশের কাতারে চলে এসেছি। সেটা করতে হলে কিন্তু গবেষণার বিকল্প নেই। আমার দাবি থাকবে, গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য সরকারি কলেজগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো করে আলাদা একটা ফান্ড দেওয়া এবং শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করা। একইসাথে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামে চেঞ্জ এনে শিক্ষার্থীদের গবেষণা কর্মোৎসাহী করা। তাহলেই শিক্ষার যে প্রকৃত প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, সেটি আমরা তৈরি করতে পারবো। যা আমাদের দেশের উন্নয়ন বা কল্যাণের জন্য আগামীতে কাজ করবে। 


বিজ্ঞাপন


ঢাকা মেইল: আমরা দেখি প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাজেট অনুমোদিত হয়। সেখান থেকে একটা অংশ তারা গবেষণা খাতে ব্যয় করে থাকেন। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কলেজ পর্যায়ে সেই সুযোগ কতটা রয়েছে? 

প্রফেসর আব্দুল খালেক: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে আঙ্গিকে পরিচালিত হয়, কলেজগুলো কিন্তু সেভাবে পরিচালনা হয় না। কলেজে সরকারের যে বরাদ্দ আসে সেটা সুনির্দিষ্ট খাত ভিত্তিক, এক খাতের অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করার কোনো সুযোগ নেই। 

ঢাকা মেইল: কলেজ পর্যায়ে গবেষণাখাতে অর্থ বরাদ্দ কতটুকু থাকে? আপনি কি মনে করেন গবেষণাখাতে বরাদ্দ বাজেট যথেষ্ট? 

প্রফেসর আব্দুল খালেক: গবেষণা খাতে কোনো অর্থ সরকারের তরফ থেকে নেই আপাতত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্র তৈরি করেছে, অনেকটা কাজ চলমান আছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কার্যক্রমে সহায়তা করার জন্য নিজেরাই প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা এই গবেষণা ইন্সটিটিউটের মাধ্যমেই গবেষণা করাবেন। তবে কলেজগুলোকে কিভাবে ফান্ড দিয়ে গবেষণা কাজে সম্পৃক্ত করা যায় এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত এখনও আমার জানা নেই। তবে আগামীতে হয়তো এরকম সুযোগ আসবে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব যে বাজেট তার একটি অংশ বড় যে শতবর্ষী কলেজ আছে সেই কলেজগুলোতে গবেষণা প্রদানের জন্য আলাদা ফান্ড করে শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে পারে। 

ঢাকা মেইল: সম্প্রতি টানা চতুর্থবারের মতো দেশসেরা কলেজ নির্বাচিত হয়েছে রাজশাহী কলেজ। এটা নিঃসন্দেহে গৌরবময় অর্জন। এ বিদ্যাপীঠের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কি না? থাকলে সেগুলো কী?  

প্রফেসর আব্দুল খালেক: শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা আর ধরে রাখা, দুটো ভিন্ন বিষয়। একটি প্রতিষ্ঠান বাহিরের যে অবয়ব সেটি দিয়েই কিন্তু সেরা হয় না। শিক্ষার মান যদি আমরা ধরে রাখতে পারি, আরও একটু ভালো করতে পারি, শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করতে পারি, কোয়ালিটি সম্পন্ন শিক্ষা দান করতে পারি তাহলেই এই শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখা সম্ভব। একটা সময় গড্ডালিকা প্রবাহের মতো ভেসে চলছিলাম, এখন সবাই নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে একটু ভালো করার চেষ্টা করছে। এই কন্ট্রিবিউশান বেড়েছে, রাজশাহী কলেজের সেই সক্ষমতা আছে। কলেজের প্রায় ২৪১ টি পদ, প্রায় ২৪০ জন শিক্ষক সবসময়ই থাকে। তারা প্রত্যেকে আন্তরিক।  এখানকার শিক্ষার্থীরাও চমৎকার আচরণ করে ক্লাসের বাহিরে কিংবা ভেতরে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে বৈষয়িক একাডেমিক মান উন্নয়নের সাথে সাথে এক্সট্রা কারিকুলারসহ অন্যান্য বিষয় সেসবের মাধ্যমেই শ্রেষ্ঠত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে পারবে বলে বিশ্বাস করি। 

ঢাকা মেইল: আমরা লক্ষ্য করেছি, একাডেমিক রেজাল্টে রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থীদের সাফল্য অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু চাকরির বাজার বা অন্যান্য ক্ষেত্রে রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থীরা কতটা শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিতে পারছে? 

প্রফেসর আব্দুল খালেক: প্রতি বছর আমাদের কলেজ থেকে মাস্টার্স পাশ করে প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থী বের হচ্ছে। কিন্তু জব মার্কেটে গিয়ে বিসিএসসহ অন্যান্য সরকারি চাকরির প্রতিযোগিতায় তারা টিকতে পারছে না। এখানে অনেক ভালো ফলাফল কিন্ত কম্পিটিশনে টিকতে পারছে না। শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পাশ করার যে শিক্ষা আর নিজেকে কোথাও তুলে ধরার জন্য প্রতিযোগিতায় সক্ষম করবার জন্য যে শিক্ষা এই দুটোকে এক জায়গায় করার ক্ষেত্রে একটু সমস্যা আছে। এই জায়গায় আমাদের কাজ করার সুযোগ আছে। আমরা যদি প্রত্যেকটা বর্ষের ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্র বাছাই করে অতিরিক্ত কেয়ার নেই, চার বছর ধরে যদি তাদের তদারকিতে রাখতে পারি তাহলে কিন্তু ভালো কিছু করতে সক্ষম হবো। এজন্য শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি, ক্লাসে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি প্রতিযোগিতার জন্য যে পড়াশোনার দরকার সে ব্যাপারে গাইডলাইন দেওয়ার। 

ঢাকা মেইল: রাজশাহী কলেজ থেকে পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসু, উপমহাদেশের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি স্যার যদুনাথ সরকার, বৈজ্ঞানিক প্রথায় ইতিহাস চর্চার পথিকৃৎ ও অন্যতম সাহিত্যিক অক্ষয় কুমার মৈত্র, সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান, পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ আলী মিয়া, শিক্ষানুরাগী মাদার বখশ, জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামানের মতো বরেণ্য ব্যক্তিরা অধ্যয়ন করেছেন। অদূর ভবিষ্যতে রাজশাহী কলেজ এমন প্রথিতযশা বরেণ্য ব্যক্তিদের প্রত্যাশা করে কি না?

প্রফেসর আব্দুল খালেক: রাজশাহী কলেজের ইতিহাস কিন্তু স্বর্ণালি ইতিহাস। যাদের নাম উল্লেখ করা হলো প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে। এটিই রাজশাহী কলেজের আসল ইতিহাস। এখনকার শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চার দিকটায় দুর্বলতা দেখছি, কিন্তু আগের শিক্ষার্থীরা জ্ঞানচর্চায় এগিয়ে যেতো। তবে এখনও অনেকে বিলগেটসের সাথে কাজ করছে, নাসায় কাজ করছে কিন্তু যেসব মনীষীদের কথা বলা হলো সেরকম শিক্ষার্থী তুলে আনতে হলে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চা দরকার। শুধু ফলাফলের দিকে দৌড়ালে চলবে না। আগে শিক্ষার্থীরা ফলাফলের দিকে দৌড়াতো পরে, আগে জ্ঞানচর্চা করতো, ক্লাসেও সেভাবে শিখতো। সময়ের বিবর্তনে মন-মানসিকতায় কিছু পরিবর্তন এসেছে। রাজশাহী কলেজ নিশ্চয়ই তার অতীত সোনালী ফিরে পাবে, এজন্য রাজশাহী কলেজ নিশ্চয়ই শিক্ষার্থীদের পরিচর্যা করবে। এখন যারা বিভিন্ন নাসা, মাইক্রোসফট, পরমাণু কমিশন বা বিভিন্ন জায়গায় নেতৃত্ব দিচ্ছে ২০/২৫ বছর পর তারাই ইতিহাসের পাতায় মনীষীদের সাথে সংযুক্ত হয়ে যাবে। 


 
ঢাকা মেইল: আমরা লক্ষ্য করছি, রাজশাহী কলেজ বিদেশি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণে ব্যর্থ হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে আপনি কী দেখছেন? 

প্রফেসর আব্দুল খালেক: রাজশাহী কলেজে বিদেশি শিক্ষার্থী পড়েছে বলে আমার শোনা নেই। হয়তো এক সময় পড়তো, এখনও যেমন বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে এখনও কিছু বিদেশি শিক্ষার্থী আসে। কিন্তু কলেজ লেভেলে আসার ব্যাপারটা এখন আর ঘটে না। একসময় রাজশাহী কলেজের মতো কলেজ পুরো বঙ্গেই ছিল না, এখন তো প্রত্যেকটা দেশেই অনেক প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে। তবে ব্রিটিশ শাসনামলে উপমহাদেশ যখন একটাই রাষ্ট্র ছিল তখন তো এই কলেজের যাত্রাই হয়েছিল শুধু পূর্ব বাংলা না সব বাংলার ছাত্র দিয়ে। ভারত, পাকিস্তান বা বার্মা থেকে বহু শিক্ষার্থী এসে পড়াশোনা করেছে। তবে স্বাধীনতার পরে বিদেশি ছাত্ররা পড়েছে কি না এই তথ্য আমার জানা নেই। সরকারি কলেজগুলোর শৃঙ্খলা ও একাডেমিক মান যদি ঈর্ষনীয়ভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় তাহলে হয়তো আমরা আগামীতে বিদেশি ছাত্র পেতে পারি। সেজন্য সবাইকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। 

ঢাকা মেইল: রাজধানী কেন্দ্রিক কলেজ ও মফস্বল পর্যায়ের কলেজের মধ্যে ক্যারিয়ার নিয়ে যে বিশাল ফারাক তৈরি অব্যাহত রয়েছে, তার কারণ কী বলে আপনি মনে করেন

প্রফেসর আব্দুল খালেক: রাজধানীতে যারা থাকে আর রাজশাহী বিভাগীয় শহরে যারা থাকি বা নাটোর, নওগাঁ, পাবনায় যারা থাকে অথবা জেলা লেভেলে যারা থাকে অথবা উপজেলায় থাকে, এই প্রত্যেকটা জায়গার মধ্যে কিন্তু ফারাক আছে। চিন্তা, ভাবনা, স্বপ্ন দেখা, বাস্তবতা বোঝার ক্ষেত্রে তফাত আছে। শহর এলাকায় টিকে থাকার জন্য যেই পরিশ্রম করতে হয় সেটারও অভাব আছে। মফস্বলে জীবন ধারণ অনেক সহজ, সহজেই সার্ভাইব করা যায়, জীবনযাত্রার ব্যয় কম, আবার বাস্তবতাটাও বোঝা কম যায়। এসব কারণে স্পষ্টতই একটা পার্থক্য তৈরি হয়ে যায় রাজধানীর সাথে মফস্বল এলাকার। এখানকার জীবনযাত্রার মান রাজধানী বা চট্টগ্রামের মতো না। যার কারণে এখানে যারা থাকি তারা কিন্তু ঠিক রিয়ালাইজ করতে পারে না যে এখন বাস্তবতাটা কোন লেভেলে উঠে গেছে। এই ফারাকের কারণে তাদের মতো করে পরিশ্রমও করতে পারে না। বাস্তব কিছু বিষয় আছে যেগুলো রাজধানীতে থাকার কারণে সেগুলো পড়ে জানতে হয় না, এমনিতেই জানতে পারে। কিন্তু এখানে থাকার কারণে ওইটা মুখস্থ করে বা পড়ে পড়ে জানতে হয়। এরকম বিভিন্ন ক্ষেত্রে পার্থক্য আছে। যদিও এখন সোস্যাল মিডিয়া, নেট বা গুগলের জগতে এগুলো সব একই রকম হয়ে গেছে, কিন্তু স্বপ্ন দেখার ক্ষেত্রে পার্থক্যটা রয়েই গেছে। ধীরে ধীরে এর পরিবর্তন আসছে। নেট দুনিয়ার কারণে যে চতুর্থ বিপ্লব আসতেছে সেটার ছোঁয়া শিক্ষার্থীদেরকেও লেগেছে। কিছুটা তফাত কমে এসেছে। আগামীতে এটা আরও কমে আসবে। 

ঢাকা মেইল: রাজশাহী কলেজকে কোন অবস্থানে দেখতে চান? 

প্রফেসর আব্দুল খালেক: সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশের সেরাদের সেরা কলেজ হিসেবে দেখতেই স্বপ্ন দেখি। 

/এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর