শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘দলীয় নেতা হিসেবে জিয়া-খালেদাকে নিয়ে সর্বোচ্চ বই লিখেছি'

মো. ইলিয়াস
প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০২২, ০৮:৫২ এএম

শেয়ার করুন:

‘দলীয় নেতা হিসেবে জিয়া-খালেদাকে নিয়ে সর্বোচ্চ বই লিখেছি'

বিএনপি নেতাদের মধ্যে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহসানুল হক মিলন দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জিয়াউর রহমান এবং চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি বই লিখেছেন বলে দাবি করেছেন তিনি। ঢাকা মেইলকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানেন।

ঢাকা মেইল: আপনি ছাত্র জীবন থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছেন কিন্তু হঠাৎ করে নিষ্ক্রিয় হওয়ার কারণ কি? 


বিজ্ঞাপন


এহসানুল হক মিলন: আমি নিষ্ক্রিয় না তো। আমি ২০২২ সালের বইমেলায় বেগম জিয়া এবং প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের এক্টিভিটির ওপরে ৮ বই উদ্বোধন করেছি। দলীয় নেতা হিসেবে আমি সর্বোচ্চ বই লিখেছি। শহীদ জিয়া, বেগম জিয়া, তারেক জিয়া এবং দলের কর্মকাণ্ডের ওপরে।

ঢাকা মেইল: দলীয়ভাবে এখন আপনি কোন পদে রয়েছেন? 

এহসানুল হক মিলন: দলীয়ভাবে আমি এখন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। ১৯৯৩ সালে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হয়েছিলাম। ২৯ বছর পর গত এপ্রিলে আমাকে সেই পদ থেকে নির্বাহী কমিটির সদস্য বানানো হয়।

ঢাকা মেইল: কী কারণে আপনাকে এই পদ থেকে সরানো হলো? 


বিজ্ঞাপন


এহসানুল হক মিলন: মূলত আমার পাসপোর্ট নেই ভিসা নেই, বাহিরে যেতে পারছি না। মামলায় জর্জরিত সেজন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যারা কাজ করতে পারবে তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মেইল: আপনি চাঁদপুর থেকে বারবার নির্বাচিত, প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন এলাকায় আপনার উপর যে হামলা হলো অনেকেই বলছে এটা অভ্যন্তরীণ কোন্দল, তাহলে কি দলে ডিমোশন হওয়ার পরে আপনার প্রভাব কমে গেছে? 

এহসানুল হক মিলন: আমার এলাকায় বিএনপির একমাত্র নেতা আমি। এই এলাকাটি কচুয়া চাঁদপুর-১ এই আসনটি সব সময় আওয়ামী লীগের আসন ছিল। আমি প্রথমে ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হই, ২০০১ সালেও নির্বাচিত হয়ে এবং ২০০৯ সালেও আমি নির্বাচিত হওয়ার পরেও হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট থেকে রায় পাওয়ার পরেও সংসদে আমাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সে আসনে পরপর তিনবার আমি নির্বাচিত হয়েছি অন্য কোনো প্রার্থী ছিল না, এখনো নাই। যিনি আছেন বা নমিনেশন দেওয়া হয়েছে তিনি বাংলাদেশের কখনো থাকেন না। আমি ১৯৯৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত রাজনীতি করছি কখনও ওনাকে দেখিনি। উনি এদেশের নাগরিকও না। তিনি মালয়েশিয়ার নাগরিক। তিনি মালয়েশিয়ায় বিয়ে করে সেখানেই থাকেন। অতএব আমার এখানে কোনো প্রতিপক্ষ নেই যে আমাকে দুর্বল ভেবে ঘায়েল করবে। আওয়ামী লীগ এগুলো করছে।

ঢাকা মেইল: আমরা জানতে পেরেছি দল আপনাকে নতুন দায়িত্ব দিয়েছে এ বিষয়ে দল থেকে কোনো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি, বিষয়টা জানতে চাই। 

এহসানুল হক মিলন: পার্টি আমাকে এখনো কিছু জানায়নি। আপনি যেমনটি শুনছেন আমিও তেমনি শুনছি। পার্টি এ ব্যাপারে কোনো সঠিক তথ্য দেয়নি। 

ঢাকা মেইল: সাম্প্রতিক বিএনপির কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। এ বিষয়ে কি বলবেন? 

এহসানুল হক মিলন: আওয়ামী লীগ সবচেয়ে পুরোনো দল। অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা আওয়ামী লীগের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। কিছু কিছু ব্যাপারে। ধরুন এই যে বিদেশিদের কাছে যাওয়া এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি পারদর্শী। ১/১১ এর পূর্বে আমরা যখন ক্ষমতায় দায়িত্বে ছিলাম সে সময় কূটনৈতিক পাড়ায় আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি দৌড়াদৌড়ি করত। আজকের মহামান্য রাষ্ট্রপতি তিনিও এ বিষয়ে নিয়ে সবচেয়ে বেশি হ্যান্ডেল করতেন এটা আমরা সকলেই জানি। এমনকি বিদেশি হাই কমিশনার আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরীসহ ওনারা একটি গ্রুপ করেছিলেন। ওনারা সন্ধ্যা সাতটায় বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে, নির্বাচন নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে ২০০৩, ২০০৪, ২০০৫ ও ২০০৬ সালে বসেছিলেন। এতটা দৌড় লাভ ঝাঁপ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সে কারণে এ সরকার ওয়ান ইলেভেনে আসছিল।

ঢাকা মেইল: বিএনপি’র কাউন্সিলের মেয়াদ অনেক পূর্বে শেষ হয়ে গেছে কাউন্সিল হচ্ছে না এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন? 

এহসানুল হক মিলন: কাউন্সিল হতে হলে বিএনপি নেতাকর্মীদের এক জায়গায় মিলিত হতে হবে। সেই জায়গাটিতে আওয়ামী লীগ মোটেই পৌঁছাতে দেয় না। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, হয়রানি প্রতিনিয়ত চলছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সজ্জন ব্যক্তি বলে আখ্যায়িত হয়েছেন। বাংলাদেশে কোনো মহাসচিব এ ধরনের পপুলারিটি নিয়ে চলতে পারেনি। যেটা মির্জা ফখরুল ইসলাম পেয়েছেন সেই সজ্জন ব্যক্তির বিরুদ্ধেও নতুন একটি মামলা সংযুক্ত হওয়ার পরে ১৮৭টি মামলা হয়েছে। একটি দলের মহাসচিবের বিরুদ্ধে যদি ১৮৭টি মামলা হয় তাহলে তার দলের তৃণমূলে নেতাকর্মীদের কি অবস্থা।

ঢাকা মেইল: আপনি কি বলতে চাচ্ছেন যে আওয়ামী লীগের কারণে বিএনপি’র কাউন্সিল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে?

এহসানুল হক মিলন: অফ কোর্স (অবশ্যই)। বসতে দিচ্ছে না, মিলতে দিচ্ছে না, কথা বলতে দিচ্ছে না। তৃণমূলে কোথাও যদি বৈঠক হয় সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা হয়। গত ঈদের পরের দিন আমার বাড়িতে ওয়ার্ড কমিটি কাউন্সিল করেছিলাম সেখানে আওয়ামী লীগ হানা দিয়েছে।

ঢাকা মেইল: আগামী নির্বাচন মনে হচ্ছে দলীয় সরকারের অধীনে হবে তাহলে আপনারা কি করবেন? 

এহসানুল হক মিলন: আগামী নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীন হতে পারবে না সেটা আমার বিশ্বাস। এ বিষয়ে দল এবং সমগ্র বিশ্ব মিলে সেই কাজটাই করতে হবে। কারণ আমরা দেখেছি ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন কিভাবে হয়েছে অর্থাৎ প্রতিটি নির্বাচনে জাতি কিছু না কিছু শেখে। আমরা দেখেছি ২০১৪ নির্বাচনে যা দেখেছি ২০১৮ তে তার কিছুই পাইনি। ২০১৮ নির্বাচনে যা পেয়েছি তা গিয়ে ২০২৪ নির্বাচনে কিছুই পাবো না। সে ক্ষেত্রে ২০২৪ সালের নির্বাচন যদি অংশগ্রহণমূলক এবং সুষ্ঠু করতে হয় তাহলে কোনো দলীয় সরকারের অধীনে কখনোই সম্ভব নয়। যে প্রমাণটা আমরা পেয়েছি ৯১, ৯৬ ও ২০০১ সালে। 

ঢাকা মেইল: সামনে নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে এবং আপনারা বলছেন আন্দোলন করবেন তাহলে কি নির্বাচন আর আন্দোলন একসাথে করবেন?

এহসানুল হক মিলন: কয়েকভাবে এটা হতে পারে (এক) নম্বর হচ্ছে এ সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে, তারা যে মিডনাইটে-নিশি রাতে নির্বাচন করেছে যেটা নেট নুরুল হুদা স্বীকার করেছেন। ইভিএমে ভোট হলে আর নিশি রাতে নির্বাচন হবে না। ১৪ সালে আমরা দেখেছি পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে একজন এসে জোর করে নির্বাচন করিয়ে দিয়েছিল। ১৫৩টি আসনে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছিল। এই দুটি নির্বাচনে ধারাবাহিকতায় ২৪ সালের নির্বাচন হলে জাতি কোনোভাবেই মেনে নেবে না। (দুই) বিশ্ববাসীর মেনে নেবে না। এটাকে শুদ্ধিকরণের দায়িত্ব সরকারের। (তিন) তা না হলে দলটি চিরতরে বিলীন হবে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে। কারণ এদেশের মানুষ চেপে দেওয়া কিছু কখনো মেনে নেয়নি।

ঢাকা মেইল: খালেদা জিয়া অসুস্থ, অবসরে। তারেক রহমান দেশের বাইরে। আওয়ামী লীগ সব সময় এ প্রশ্ন করে- আপনারা ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রী হবেন কে?

এহসানুল হক মিলন: সাধারণ বিষয় আর তারা এটা জানে। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যতগুলো মামলা রয়েছে তার কাছাকাছি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাও ছিল ১/১১ সময়। কি করে ২০০৮ সালে মধ্যরাতে সব মামলা নাই হয়ে গেল। তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলেন এখানে কি উত্তরটা অন্তর্নিহিত নয়। জাস্ট ইলেকশনটা হতে দেন রাতারাতি সব হয়ে যাবে। যেভাবে শেখ হাসিনা হয়েছে ঠিক সেভাবেই হবে।

ঢাকা মেইল: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। 

এহসানুল হক মিলন: আপনাকেও ধন্যবাদ। 

এমই/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর