ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। ৯ সেপ্টেম্বরের জন্য অপেক্ষায় আছেন ঢাবি শিক্ষার্থী, নির্বাচনের প্রার্থী ও শিক্ষক-কর্মকর্তারা। ‘দ্বিতীয় পার্লামেন্ট’ খ্যাত এই নির্বাচনে চোখ রয়েছে গোটা দেশবাসীর। শেষ মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে দিনরাত ছুটে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। লক্ষ্য একটাই- বর্তমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন, ভোট-দোয়া এবং পরামর্শ চাওয়া। এমন ব্যস্ততম সময়ে ঢাকা মেইলের সঙ্গে কথা বলেছেন ডাকসুর জিএস পদের অন্যতম আলোচিত প্রার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) সাবেক সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া। তিনি লড়বেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলে থেকে। আলাপকালে শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন আল সাদী ভূঁইয়া। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাখাওয়াত হোসাইন।
ঢাকা মেইল: শুরু থেকেই প্রচারে বেশ সরব ছিলেন। সাড়া পাচ্ছেন কেমন?
বিজ্ঞাপন
আল সাদী ভূঁইয়া: সবার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছি। যাদের কাছেই গিয়েছি, তারা ভালো রেসপন্স করেছেন। হল পর্যায়েও প্রচার করেছি, তারাও খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে ভালো সাড়া দিয়েছেন। পরিবহনে যেসব শিক্ষার্থী যাতায়াত করেন, তাদের কাছে গিয়েছি। সবদিক দিয়ে বিভিন্নভাবে প্রচার চালানোর চেষ্টা করছি।
ঢাকা মেইল: এখন পর্যন্ত নির্বাচনি পরিবেশ দেখে কেমন মনে হচ্ছে?
আল সাদী ভূঁইয়া: নির্বাচন সুষ্ঠু হলে অবশ্যই নির্বাচিত হয়ে আসব। কারণ রাজনৈতিক যেসব ছাত্র সংগঠন রয়েছে, তাদেরকে শিক্ষার্থীরা বিশ্বাস করতে পারছে না। রাজনৈতিক সংগঠনগুলো বারবার তাদের দেওয়া ওয়াদা ভঙ্গ করেছে। সেই জায়গা থেকে শিক্ষার্থীরা এরকম কেউকে চায় যারা কমিটেড এবং কমিটেড থাকার ইতিহাস আছে। সে হিসেবে আমি এবং আমার প্যানেল বেশ এগিয়ে আছে। আশাবাদী, শেষ পর্যন্ত আমরা জিতে আসব। সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীরা আমাদের মতো কাউকে চায়।
ঢাকা মেইল: বিজয়ী হলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কী কী করার পরিকল্পনা আছে?
বিজ্ঞাপন
আল সাদী ভূঁইয়া: ডাকসুর কাজের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরা যেটা করতে পারব নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলা এবং নজরদারি বাড়ানো; এগুলো করা হবে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিতে পারে এবং কথা বলতে পারে। হলে আসতে এবং যেতে হেনস্তার শিকার যেন না হতে হয়, এবিষয়গুলো আমরা দেখব।
আমাদের ক্যাম্পাসে আরেকটা সমস্যা হলো নারীদের তিনটা হল ক্যাম্পাসের বাইরে রয়েছে। আমাদের বাস বন্ধ হয় ছয়টায়। চারটা হলের নারীদের এরপরও আসা-যাওয়া করতে হয় এবং বিভিন্ন কাজ থাকে। সেগুলো করতে তাদের অনেক সমস্যা হয় এবং অনেকে করতেও পারেন না। ধরেন, ক্যাম্পাসের হলে একজন শিক্ষার্থী দৈনিক ১০০ টাকা খাওয়া-দাওয়া করতে পারছে। আর ক্যাম্পাসের বাইরের হলে থাকা একজন শিক্ষার্থীর ১০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। এই ১০০ টাকা তার ওপর বাড়তি চাপ। আমরা সেই চাপগুলো মোকাবিলা করতে চাই। তাদের জন্য আমরা রাত ১০টা পর্যন্ত শাটল সার্ভিস চালু করতে চাই।
আরেকটি বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসের সময়ে এবং ক্যাম্পাসে অনেক ফাঁকা টাইম থাকে। বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে পার্ট টাইম জবের ব্যবস্থা করব। শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে কোর্সসহ নানা আয়োজন করব, যাতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
ঢাকা মেইল: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেকারত্বরোধে কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
আল সাদী ভূঁইয়া: ক্যাম্পাসে অনেক কাজ থাকে। পার্ট টাইম কাজ এবং রিসার্চে কাজ থাকে। আমরা শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করাতে পারছি না, কিন্তু শিক্ষার্থীদের আমরা জানাতে পারি এবং পরিচয় করিয়ে দিতে পারি। তাহলে তাদের ফার্স্ট ইয়ার থেকে টিউশন করা লাগবে না। তারা পার্ট টাইম জব পাবে এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য কেউ দেশের বাইরে গেলে ভালো একটা সুবিধা পাবে। এতে শিক্ষার্থীরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং দক্ষ ও পেশাদার হবে। একইসঙ্গে বেকারমুক্ত হবে।
ঢাকা মেইল: ডাকসু নির্বাচনে এখন পর্যন্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে বলে মনে করেন কি?
আল সাদী ভূঁইয়া: আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাজনৈতিক সংগঠনগুলো সুবিধা পাচ্ছে। আমরা যারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছি, আমাদের পেছনে সব রাজনৈতিক সংগঠনের কুনজর আছে। তারা কেউ চায় না আমরা উঠে আসি। রাজনৈতিক একটা ছাত্র সংগঠনকে আরেকটা ছাত্র সংগঠন রাজনৈতিক কারণে সাপোর্ট দেবে। কিন্তু আমি তো কাউকে সাপোর্ট দেব না। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিঘ্ন ঘটবে এরকম কিছু হতে দেব না। সেই জায়গা থেকে তারা আমাদের দেখতে চায় না
আরও পড়ুন
ডাকসু নির্বাচনে ১৮টি হলে ভিপি ও জিএস পদে লড়ছেন যারা
ডাকসু নির্বাচন ঘিরে উত্তাপ, মুখোমুখি ছাত্রদল-শিবির
ঢাকা মেইল: অনলাইনে প্রচার-প্রচারণা চলছে এবং অনেকেই হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। এবিষয়টা আপনার কাছে কী মনে হয়?
আল সাদী ভূঁইয়া: আমি চাই না, আমার শত্রুকেও কেউ অনলাইনে গালাগালি বা মন্দ কথা বলুক। আমি মনে করি, প্রত্যেকটা ব্যক্তির ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং মর্যাদা রয়েছে। অনেকের ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। সব প্রার্থী জিতবে না। আর যারা নির্বাচনে আছি, সবাই আমার ভাই-বোন। তাদের সামাজিকভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে, আমার নিজের কাছেও খারাপ লাগে। কয়েক দিন পর আমাকে নিয়েও করা হবে। এবিষয়টা একদমই নেতিবাচকভাবে দেখছি এবং বিষয়টা খুবই বিব্রতকর। আমি নিজেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পোস্ট করছি না বা কথা বলছি না শুধু হেনস্তার শিকার হওয়ার ভয়ে।
ঢাকা মেইল: ভোটের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ফেসবুকে তত বেশি অপ্রচার বাড়ছে। আপনি কখনো অপ্রচারের শিকার হয়েছেন?
আল সাদী ভূঁইয়া: আমি নিজেও হেনস্তার শিকার হওয়ার ভয়ে আছি। ক্রমাগতভাবে অনেক ট্যাগিংয়ের শিকার হয়েছি। অপ্রচারের ভয়ে আমার নানা এজেন্ডা-স্বপ্ন প্রকাশ করতে পারছি না। এটা সবচেয়ে বেশি বেদনাদায়ক লাগে। অনলাইনে তেমন প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছি না, জিনিসটা আমার জন্য অস্বস্তিরও।
ঢাকা মেইল: ভোটারদের উদ্দেশ্য কী বলতে চান?
আল সাদী ভূঁইয়া: আমি চাই ভোটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তারা তাদের সাহস ছিনিয়ে নেবে এবং তাদের স্বপ্নের সারথি যারা হবে, তাদের চিনে নেবে। যারা নির্বাচিত হওয়ার পর কোনো দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে না তাদের কাছে শিক্ষার্থীরাই প্রাধান্য পাবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করবে; এরকম কাউকে শিক্ষার্থীরা বেছে নেবে। কেউ রাজনৈতিক মুখরোচক প্রচারণায় পড়ে ভোটে দেবে না। শিক্ষার্থীরা কাউকে ভয় পেয়ে কিংবা কারও শঙ্কায় যেন ভোট না দেয়। শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে।
ঢাকা মেইল: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আচরণ কেমন মনে হচ্ছে?
আল সাদী ভূঁইয়া: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আচরণ আসলে গদবাঁধা। আমরা আগে যেমন দেখেছি, বিষয়টা জানি না, জানালে বা জানলে ব্যবস্থা নেব। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব। আপনারা অভিযোগ দেন বা অভিযোগ দিলে বলে আপনার বিষয়টা দেখছি। এই যে, দেখছি দেখছি...।
ঢাকা মেইল: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আল সাদী ভূঁইয়া: আপনাকেও ধন্যবাদ।
এসএইচ/জেবি

