শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

গ্রাম বদলেছে, পরিবর্তন এসেছে মানুষের জীবনমানে- এটাই আ.লীগের সফলতা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২২, ১০:১৫ এএম

শেয়ার করুন:

গ্রাম বদলেছে, পরিবর্তন এসেছে মানুষের জীবনমানে- এটাই আ.লীগের সফলতা

টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ সরকার। এই সময়ে দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের জীবনমানের উন্নয়নও হয়েছে অনেক। যার সুফলও পাচ্ছেন দেশের মানুষ। ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুতের আলো। গ্রামের সড়কগুলো পাকা হয়ে গেছে, অনেক জায়গায় কাজ চলমান। আগামী মাসেই উদ্বোধন হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের মানুষের স্বপ্নের সেতু পদ্মা।

এছাড়াও দেশের বড় বড় প্রকল্প মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন করছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেই সঙ্গে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের মতো আরও বিভিন্ন প্রকল্পের কাজও চলমান। এসব কাজে যেমন অসংখ্য মানুষ সংশ্লিষ্ট, তেমনি কাজ শেষে মিলবে নানা ধরণের সুফলও।


বিজ্ঞাপন


সরকারে এসব উন্নয়ন ও সমালোচনাকারীদের নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেছেন সরকারের নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। সম্প্রতি ঢাকা মেইলের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ওয়াজেদ হীরার সঙ্গে একান্ত কথোপকথনে নিজের অভিব্যক্তি তুলে ধরেন তিনি। কথা বলেন, গত এক যুগের বেশি সময়ে সরকারে থাকায় সফলতা নিয়েও।

একটি সরকার দীর্ঘমেয়াদে থাকলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়, এটা এখন প্রমাণিত। ২০০৮ সালের আগে দেখেন দেশের পরিস্থিতি, আর বর্তমান ২০২২ সালে দেশের পরিস্থিতি। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষের ভাগ্যের আমূল পরিবর্তনে কাজ করেছে।

উদাহরণ দিয়ে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার নির্বাচনি আসন দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ ও বিরল- এই দুই উপজেলা মিলে। এই দুই উপজেলায় প্রত্যেকটি এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়নে আমি গুরুত্ব দিয়েছি। আমি মনে করি প্রত্যেক সংসদ সদস্যরাই তাদের নির্বাচনি এলাকা নিয়ে কাজ করেছেন। ২০০৮ সালের যে এলাকাগুলোতে আমাকে হেঁটে হেঁটে নির্বাচনের প্রচার চালাতে হয়েছে, অনেক স্থানে হেঁটে যাওয়াও কষ্টসাধ্য ছিল, লালমাটির কারণে সমস্যা ছিল প্রকট, সেই এলাকাগুলোর অলি-গলিগুলোতেও এখন পাকা রাস্তা। যা ওইসব এলাকার মানুষ চিন্তাও করেনি। হেঁটে যাওয়া কষ্ট ছিল, সেই সড়কে এখন গাড়ি চলে।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের বহু গ্রামেই এমন ছিল, এখন আর তা নেই। শেখ হাসিনার উন্নয়নের ছোঁয়া শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু এই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণেই মধ্যরাত পর্যন্ত মানুষ বাজারে গল্প করে আড্ডা দেয়। আবার গ্রামের দু-একটি দোকান নিয়ে থাকা জায়গায় এখন বড় বাজার হয়ে গেছে।


বিজ্ঞাপন


ফরক্কাবাদ ইউনিয়ন, ভান্ডারা ইউনিয়ন, শহরগ্রাম ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কথা উল্লেখ করে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সন্ধ্যার পর মানুষ আর দেখাই যেত না। দোকান ছিল হাতেগোনা। এখন এসব গ্রামে বাজার হয়ে গেছে। গ্রামে এখন ব্যাংক, টেলিভিশন-ফ্রিজের শোরুম, মোটরসাইকেলের শোরুম। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এই চিত্র পাল্টে গেছে। বোচাগঞ্জের শেষ সীমানায় গিয়েও আপনি বাজার পাবেন, দেখবেন লোকে লোকারণ্য। একসময় লিচুর এই মৌসুমে মানুষ না খেতে পেরে অন্যের গাছের ফল লুকিয়ে পেরে খেতো। এখন গাছে ফল পেকে পরে গেলেও কেউ নিতে চায় না। অভাব নেই মানুষের ঘরে। না খেয়ে কেউ থাকে না। না খেয়ে মানুষ মারা যায় না।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাবা মরহুম আব্দুর রৌফ চৌধুরীও ছিলেন একজন সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। বাবার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আবার বাবা নির্বাচনের সময় যে বাংলাদেশ দেখেছি, আমার প্রথম নির্বাচনের সময় যে মেঠোপথে হেঁটেছি, মানুষের জীবনমান দেখেছি, এখনকার মানুষের জীবনমান দেখে স্পষ্ট হয়ে উঠে কত কাজ হয়েছে দেশের।

নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অসংখ্য সফলতার উদাহরণ দেওয়া যাবে, এই প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামের উন্নয়ন করেছে সরকার। গ্রামগুলো বদলে গেছে, মানুষের জীবনমানে পরিবর্তন এসেছে, এটাই আওয়ামী লীগ সরকারের বড় সফলতা। মানুষের আয় বেড়েছে। কীভাবে বাড়লো যদি প্রশ্ন করেন- আমি বলবো, একজন কৃষক এখন তার পণ্যের ভালো দাম পাচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে। যে মাঠে বা নিজ এলাকায় বিক্রি করতো তার চেয়ে উপজেলায় পণ্য বিক্রি করে আরও বেশি দাম পাচ্ছে। গ্রামের প্রতিটি ঘরে ১০/১১ টা পর্যন্ত আলো জ্বলে, ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করে। আগে যারা সন্ধ্যার পরই শুয়ে ঘুমিয়ে যেত।

এতে আমাদের শিক্ষার ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে জানিয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জনগোষ্ঠী শিক্ষিত হচ্ছে, শিক্ষার হার বেড়ে কমছে নিরক্ষরতা। আগে উপজেলা ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যেত না, এখন প্রত্যেক এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা মিলছে। নানা ধরনের উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। একসময় একটি গ্রামে একটু দামি ওষুধ মিলতো না কিংবা ওষুধ কোম্পানিও অনেক সময় এসব প্রত্যন্ত গ্রামে আসতো না। আর এখন গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে ভালো মানের ওষুধের দোকান। সেখানে সব ধরণের ওষুধও পাওয়া যায়। ওষুধের জন্য উপজেলা বা জেলা শহরে দৌড়াতে হচ্ছে না।

নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক বাজারেই দেখা যায় টেলিভিশন-ফ্রিজের শোরুম, মোটরসাইকেলের শোরুম। তার মানে মানুষ এসব কিনছে তাই গড়ে উঠছে। মানুষের এসব কেনার ক্ষমতা বেড়েছে। উন্নয়নের জাদুকর আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছেন বলেই এই সুফল পাওয়া যাচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে গ্রামের বাজারগুলোতে মানুষ চা খায়, গল্প করে, বাজারে অনেকেই টেলিভিশন দেখে। অনেক বাজারে বড় বড় এলইডি করে দেওয়া হয়েছে, সেখানেও মানুষ খেলা দেখে। মানুষের ঘরবাড়ি আগের মতো নেই। গ্রামের বাড়িগুলোতে এখন ইটের দালান উঠছে। তাদের আয় বেড়েছে তাই পাকা বাড়ি করছে।

এত উন্নয়ন তবুও কিছু সমালোচনাও আছে। আর এই সমালোচনার শেষ কোথায়- জানতে চাইলে তিনবারের আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, কিছু মানুষ সমালোচনা করবেই। তারা সরকারের উন্নয়ন দেখে না। এই দেশ রক্তের বিনিময়ে পাওয়া, ৩০ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে পাওয়া। অসাম্প্রদায়িক পরিচয়ে মানুষ দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এই দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের নেতা অথচ জাতির পিতাকে হত্যা করে অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে একটি শ্রেণি। সেই মানুষগুলোই সরকারের সমালোচনা করেন।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল যাদের সঙ্গে মানুষের সম্পৃক্ততা নেই। দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করা যাদের কাজ, সেই দলের বা সেই দলের নেতাদের কখনোই ভালো লাগবে না এই উন্নয়ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উন্নতি করছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে, এটা তাদের সহ্য হয় না। তাই নানা মুখরোচক সমালোচনায় ব্যস্ত হয়।

আপনি দেখেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাস্তাঘাটের কি পরিবর্তন। আজকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নিয়ে যাচ্ছি আমরা। আকাশপথে, নৌ পথে উন্নয়নের বিপ্লব হয়েছে। আমরা কাজ করছি আমাদের নদীগুলো নিয়ে। আপনি দেখবেন, আমাদের নদীগুলোর নাব্যতা কমে গেছে। নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি। নৌপথ খননের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ৪০টি ড্রেজার সংগ্রহ করেছে, আরও ৩৫টি ড্রেজার সংগ্রহের কার্যক্রম চলমান রয়েছে- এসবই উন্নয়নের অংশ। নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী

এখন বছরের শুরুতে ছাত্র-ছাত্রীরা বিনামূল্যে বই পাচ্ছে এবং ইউনিয়ন পর্যায়েও হাসপাতাল নির্মিত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, তবুও কিছু মানুষ না কি উন্নয়ন দেখে না। কাঠের চশমা পড়ে কী আর উন্নয়ন দেখা যায়। নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা, কতটা সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। সেই সেতু আজ বাস্তব, আগামী মাসে উদ্বোধন হবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ কত সহজে-আরামে দ্রুত সময়ে যাতায়াত করতে পারবে। সারাদেশের মানুষের কাছে এই সেতুটি একটি স্বপ্নের জায়গা করে দিয়েছে। আমাদের বন্দরগুলোতে কাজ হচ্ছে সমান তালে।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের আফসোস হয়। কেন আফসোস হয় জানেন, স্বাধীনতার স্থপতিকে হত্যা করা হলো এই দেশে। যিনি এই বাংলাকে সোনার বাংলা করতে চেয়েছিলেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে তিনি অনেক কাজে হাত দিয়েছিলেন, আর তখনই হত্যা করা হয় আমাদের জাতির পিতাকে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২১ বছর দেশের কোনো উন্নয়ন হয়নি। গত ৪০ বছরে দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি  হয়েছে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ১৩ বছরের শাসন আমলে। বঙ্গবন্ধুর রক্তের যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনা দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করছেন, বাংলাদেশকে আজ উন্নয়নের রোল মডেল বলা হয়। এরপরও যারা উন্নয়ন দেখে না তারা কোনোকালেই দেখবেনও না। দেশের আপামর মানুষ উন্নয়ন দেখলেই হলো, এর সুফল পেলেই যথেষ্ট।

একান্ত সাক্ষাৎকারে নৌ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, কিছু রাজনৈতিক প্রত্যাশা করেন বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হোক। এ জন্য তাঁরা নানা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। কিন্তু এটা বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা বাংলাদেশের হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। কেননা আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের সেরা ও অভিজ্ঞ নেতৃত্বের একজন। সঠিক ব্যবস্থাপনায় দেশ পরিচালনা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজ বিশ্ব মিডিয়া বাংলাদেশের উন্নয়নের কথা বলে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কথা বলে। দেশের মানুষের কল্যাণে এই আওয়ামী লীগ সরকার, শেখ হাসিনার সরকার সবসময় দরকার- সেটি এখন দেশের মানুষ নিজেরাই উপলব্ধি করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, ২০৩১ সালের মধ্যে কীভাবে মধ্যম ও উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়া যায় ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের সম্মান অর্জন করা সম্ভব। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। বাংলার মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল।

দলের পদ বেশি ভালো ছিল না কি এখন মন্ত্রীসভার সদস্যপদ? কোনটিতে কাজের সুযোগ বেশি- এমন প্রশ্নের জবাবে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এখানে বিষয়টি হচ্ছে দায়িত্ববোধ। দলের কাজ বলেন, মন্ত্রণালয়ের কাজ বলেন, সবখানেই দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী যখন যে দায়িত্বের জন্য যোগ্য মনে করেন বা দেন তা পালন করতে হবে। যে দায়িত্বেই থাকি, আমি আমার সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করি।

ডব্লিউএইচ/আইএইচ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর