বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘বাবা ছিলেন গরিবের আইনজীবী, সেই খ্যাতিটা ধরে রাখতে চাই’

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
প্রকাশিত: ২৪ মে ২০২২, ০৮:১৭ পিএম

শেয়ার করুন:

‘বাবা ছিলেন গরিবের আইনজীবী, সেই খ্যাতিটা ধরে রাখতে চাই’
সিনিয়র আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। ছবি: ঢাকা মেইল

আইনজীবীদের সনদ প্রদানকারী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচন আগামীকাল বুধবার (২৫ মে)। এবারের নির্বাচনে সাধারণ আসনের প্রার্থী হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। তিনি ‘গরিবের আইনজীবী’ খ্যাত প্রয়াত আব্দুল বাসেত মজুমদারের ছেলে। বাবার অসমাপ্ত কাজ শেষ করার ব্রত নিয়ে আইনজীবীদের সংগঠনের নেতৃত্বের আসনে বসতে চান সাঈদ আহমেদ রাজা। দেশের ৬০ হাজার আইনজীবীর পেশাগত মান উন্নয়ন ও সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গায় কাজ করতে চান বলে জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী। তার সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা মেইলের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আমিনুল ইসলাম মল্লিক

ঢাকা মেইল: আইনজীবীদের পেশাগত মান উন্নয়নে আপনার পরামর্শ কী?


বিজ্ঞাপন


সাঈদ আহমেদ রাজা: আমি সবসময় মনে করি, আইন পেশাটা কিন্তু অন্য দশটা চাকরি-বাকরির মতো চিন্তা করলে চলবে না। আইন প্রফেসনটা আইন প্রফেসনের মতোই চিন্তা করতে হবে। এখানে ডেডিকেশন অনেস্টি (সততা) ও নন প্রোফিটেবল বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। আপনি আইন প্রফেসন করে এখানে বিশাল বাড়ি গাড়ির মালিক হতে পারবেন না। এটি সঠিক আইডিয়া হতে পারে না। আইন প্রফেসনে থাকতে হবে সমাজের উন্নয়ন এবং বিচারপ্রার্থী মানুষের সাহায্য করা। এই আইডিয়া নিয়ে যখন মানুষ কাজ শুরু করবে, তখন মানুষ বাজে কাজ করবে না।

আরেকটি কথা, এমন কোনো কিছু করবেন না যাতে অস্থায়ী বা দ্রুত একটা ভালো কিছু পাবেন। আপনাকে চিন্তা করতে হবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা। মানুষকে করাপসন (দুর্নীতি) করা বা মানুষকে ভুল বুঝিয়ে কোনো মামলা করানো উচিত হবে না। এগুলো বন্ধ করাটা খুব বেশি জরুরি। প্রত্যেক আইনজীবীকে পাঁচটা গোল্ডেন বিষয় মাথায় রাখতে হবে। প্রতি পাঁচ বছরে আমার পরিকল্পনা। আইনজীবীরা যে কাজ করেন তার একটা স্যোসাল রেসপনসিভিলিট (দায়িত্ববোধ) রাখতে হবে। আইনজীবীদের সাহায্য করা, মানুষকে সাহায্য করার মানসিকতা থাকতে হবে।

ঢাকা মেইল: নির্বাচিত হলে আইন শিক্ষানবিশদের পরীক্ষার দুর্ভোগ কমাতে কী করবেন?

সাঈদ আহমেদ রাজা: আজকে থেকে না, যখন ২০০০ সালে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হই তখন থেকে আমি এ বিষয়ে সোচ্চার। আইন শিক্ষানবিশদের পক্ষে আমার অবস্থান। আমাকেও ফাইট করে এখানে আসতে হয়েছে। আইনজীবী তালিকাভুক্তিকরণ পরীক্ষায় বারবার বিভিন্ন ধাপে ধাপে পরীক্ষা নেওয়াটা অনৈতিক বলে মনে করি। একটা ছেলে পড়াশোনা করে গ্রাজুয়েশন নেওয়ার পর আইনজীবী সনদের নামে টর্চারের শিকার। বার কাউন্সিলের এই কাজ করাটা অনৈতিক। পরীক্ষা যত কঠিন করবেন এলএলবি স্টেজে নেন। সনদের ক্ষেত্রে কেন? সনদের সময় আপনি এই চর্টার করতে পারেন না। এই টর্চার করা সম্পূর্ণ অবৈধ হবে। আইনজীবী তালিকাভুক্তিকরণে বাংলাদেশের মতো এত কঠিন পরীক্ষা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই। ইউকে, আমেরিকা পাকিস্তান যাই বলেন না কেন, কোথাও এই ধরনের রুলস নেই। আমি ইন্ডিয়া থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছি। আমার বন্ধুরা বার কাউন্সিলের অধীনে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য ইন্ডিয়াতে কাগজ জমা দিলে তাদের এত পরীক্ষা নেওয়া হয় না। ইন্ডিয়াতে শুধু হাইকোর্টের উকিল হওয়ার জন্য পরীক্ষা নেওয়া হয়।


বিজ্ঞাপন


আমাদের এখানে আস্তে আস্তে বার কাউন্সিল বিসিএস পরীক্ষার মতো হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সিনিয়র ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম, মাহবুবে আলম, আমার প্রয়াত পিতা আব্দুল বাসেত মজুমদারসহ কয়েকজন আইনজীবীর হাতেই মূলত বার কাউন্সিলের পরীক্ষার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতেন। আমি উনাদের আইএল টিএস করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু উনারা করেন নাই।

ঢাকা মেইল: মৃত্যুর পর বেনাভোলেন ফান্ডের অর্থ পান আইনজীবীর পরিবারের সদস্যরা, জীবিত থাকা অবস্থায় এটা বাস্তবায়ন করা যায় কী না?

সাঈদ আহমেদ রাজা: বাংলাদেশের এখন ৬০ হাজার আইনজীবী রয়েছেন। আর কিছুদিন পর আইনজীবীর সংখ্যা লাখ পার হয়ে যাবে। আমি ভবিষতে দেখতে পাচ্ছি এখ লাখ দেড় লাখ আইনজীবী হবেন। এটি জাস্ট একটু সময়ের ব্যাপার মাত্র। এ বিষয়ে সবাই যেন বেনিফিটেড হয় সেই পলিসি নিতে হবে। অনেক আইনজীবী চাবেন আমার পরিবার যেন আমার মৃত্যুর পর টাকাটা পায়, কারণ জীবিত থাকা অবস্থায় তাদের টাকা থাকে। আবার অনেকেই আর্থিকভাবে দীনতায় থাকার কারণে মনে করেন জীবিত থাকা অবস্থায় এখনই টাকা হলে ভালো হয়। আমার মতে, এ বিষয়ে এমন পলিসি করা উচিত যেটার মধ্যে দুই পক্ষেরই সুবিধা থাকবে।

bur2

ব্যাংক বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলে সেখানে টাকাটা জীবিত থাকা অবস্থায় নিতে পারতেন। বার কাউন্সিল তো এমন কিছু না। বার কাউন্সিল আইনজীবীদের জমানো টাকাটাই পরিশোধ করে থাকে। আস্তে আস্তে টাকাটা আইনজীবীদের হাতে ফেরত দেওয়া হচ্ছে। তাদের মারা যাওয়ার পর। আর আরেকটি বিষয় দেখতে হবে আইনজীবীরা এই টাকাটা শুধু বার কাউন্সিল থেকেই পান না। তারা তাদের বার সমিতি থেকেও পান। কাজেই মৃত্যুর আগেই সব আইনজীবীকে বেনাভোলেন ফান্ড থেকে টাকা ফেরত দেওয়া ঠিক হবে না।

ঢাকা মেইল: আপনার বাবার সুপরিচিতি ছিল ‘গরিবের আইনজীবী’ হিসেবে। সেটা কীভাবে ধরে রাখবেন?

সাঈদ আহমেদ রাজা: অবশ্যই ধরে রাখব। ওই ব্রতটা যদি না থাকতো, বাবার গরিবের আইনজীবীর টাইটেলটা এবং মানুষের মানুষের উপকারের বিষয়টা যদি কন্টিনিউ না করতে চাইতাম তাহলে নির্বাচনে এভাবে নেমে পড়তাম না। আমার দীর্ঘ প্রফেসনাল লাইফে আমি কোনোদিন কোনো কিছু চাইনি। আমার বাবা যখন চলে গেলেন তখন আমি মন থেকে ফিল করলাম যে, এই নদীটাকে শুকিয়ে যেতে দেওয়া যেতে পারে না। বাবার মতো বাবার আদর্শ, বাবার চিন্তা ভাবনা এগুলো একটা নদী। এই নদীটাকে শুট কন্টিনিউ করতে হবে। এই নদীটা বহমান থাকা উচিত।

ঢাকা মেইল: এবারের নির্বাচনে আপনার প্যানেল কেমন ফলাফল করবে বলে মনে করেন?

সাঈদ আহমেদ রাজা: আশা করছি আমাদের প্যানেল ভালো ফলাফল করবে। কারণ, আমাদের সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে বার কাউন্সিলের জন্য সুবিশাল ভবন তৈরি করেছে। সুপ্রিম কোর্ট ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আইনজীবীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। করোনাকালে বড় ধরনের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে আইনজীবীদের মাঝে। এসব বিবেচনায় আমাদের প্যানেলকে সাধারণ আইনজীবীরা ব্যাপক ভোটে বিজয়ী করবেন। আমি প্রয়াত আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদারের ছেলে। আমার বাবা গরিবের আইনজীবী হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। বাবার সেই খ্যাতির কারণেই আইনজীবীরা আমাকে ভোট দেবেন। নির্বাচিত হয়ে বাবার সুনাম ধরে রাখতে চাই। শরীয়তপুর, ময়মনসিংহ ও খুলনা অঞ্চলে আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনা আইনজীবীদের সংখ্যা বেশি।

এআইএম/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর