শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

পৃথিবীর গভীরের রহস্য জানতে ১১ কিলোমিটার গর্ত খুড়ছে চীন!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ জুন ২০২৩, ০৫:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

পৃথিবীর গভীরের রহস্য জানতে ১১ কিলোমিটার গর্ত খুড়ছে চীন!
চীন যে গর্তটি খুঁড়বে সেটিই মানবসৃষ্ট গভীরতম গর্ত হবে না

একটি সুগভীর গর্ত খুঁড়ছে চীন। এটার দৈর্ঘ্য ১১ হাজার ১০০ মিটার বা ১১ কি.মি. ছাড়িয়ে যাবে, যা প্রায় এভারেস্ট পর্বতের সমান। গত সপ্তাহে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জিনজিয়াং উইঘুর স্বায়ত্বশাসিত এলাকায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ টিলা মরুভূমি তাকলামাকান নামে জায়গায় এই গর্ত খোঁড়ার কাজ শুরু হয়।

দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, গর্তটি মাটির ১০ স্তর ভেদ করে এমন একটি স্তুরে পৌঁছাবে যেটি প্রায় ১৪৫ থেকে ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে ছিল।


বিজ্ঞাপন


পুরো প্রকল্পটি শেষ হতে সময় লাগবে ৪৫৭ দিন।

এই সময়ের মধ্যে দুই হাজার টনের বেশি ভারী যন্ত্রপাতি ও মেশিন সামলাবে সংশ্লিষ্টরা।

উচ্চাকাঙ্খী পদক্ষেপ

এটা চীনের সবচেয়ে বড় খনন প্রকল্প যা প্রথমবারের মতো ১০ হাজার মিটার কূপ খননের প্রতিবন্ধকতা ছাড়িয়ে যাবে।


বিজ্ঞাপন


তবে চীন যে গর্তটি খুঁড়বে সেটিই মানবসৃষ্ট গভীরতম গর্ত হবে না।

তাকলামাকান মরুভূমিতে তারিম তেল কূপ ৯ কিলোমিটারের বেশি গভীর

সেই রেকর্ডটি রাশিয়ার দখলে। রাশিয়ার কোলা উপত্যকায় একটি সুপার ডিপ ড্রিলিং প্রজেক্টের অধীনে একটি গর্ত খোঁড়া হয়েছিল, যার গভীরতা ছিল ১২ হাজার ২৬২ মিটার। ১৯৮৯ সালের আগ পর্যন্ত প্রায় দুই দশক ধরে ওই খনন প্রক্রিয়া চলে।

চীন এমন এক সময় এ ধরণের একটি পদক্ষেপ নিল, যখন দেশটি বৈশ্বিক প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক শক্তি হিসেবে নিজের অন্তর্ভূক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে।

আশ্চর্যজনকভাবে, এই কূপটি সেদিনই খোঁড়া শুরু হয় যেদিন বেইজিং ২০৩০ সালে চাঁদে পৌঁছানো প্রকল্পের অংশ হিসেবে কক্ষপথে মহাকাশ স্টেশনে তিনজন নভোচারীকে পাঠায়।

কিন্তু এতো গভীর গর্ত কেন খোঁড়া হচ্ছে, যা প্রায় এভারেস্ট পর্বতের সমান এবং যা কোনো বাণিজ্যিক বিমানের সর্বোচ্চ ফ্লাইট উচ্চতার সমান?

দু’টি উদ্দেশ্য

রাষ্ট্রীয় পেট্রোরাসায়নিক কর্পোরেশন সিনোপেক এই প্রকল্পটি পরিচালনা করছে। তারা জানিয়েছে যে এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ভূতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে 'গভীরতার সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া'।

দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং স্থানীয় বিজ্ঞানীদের ভূ-পৃষ্ঠের গভীরতা নিয়ে গবেষণা করার বিষয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানোর দুই বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর চীনে গভীরতম গর্ত খোঁড়ার এই প্রকল্প শুরু হলো।

লিউ শিয়াওগ্যাং যিনি চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন-সিএনপিসি এর প্রতিনিধি। তিনি বলেন, "এই কূপটি খনন করার দু’টি উদ্দেশ্য রয়েছে - বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান এবং তেল ও গ্যাসের সন্ধান।"

সিএনপিসি শুধু চীনেরই সর্ববৃহৎ তেল-গ্যাস কোম্পানি নয়, বরং বিশ্বেরও অন্যতম বড় তেল ও গ্যাস কোম্পানি এটি।

চীনের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানী এই প্রকল্পটি পরিচালনা করছে

এক ব্যাখ্যামূলক ভিডিওতে এই কর্মকর্তা বলেন, এই প্রকল্পটি গভীর অনুসন্ধানে নতুন মেশিন বা যন্ত্রপাতি উৎপাদনে পেট্রোচায়নার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।

পেট্রোচায়না হচ্ছে একটি বিজনেস জায়ান্ট যা সিএনপিসিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং এই প্রতিষ্ঠানটি হংকং স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভূক্ত।

এ বিষয়ে চিলির ভূপদার্থবিদ ক্রিশ্চিয়ান ফারিয়াস বলেছেন, “ভূপৃষ্ঠের কাছের ১০ কিলোমিটার অনুসন্ধানে আমরা সাধারণত সিসমিক টমোগ্রাফি এবং অন্যান্য কৌশল ব্যবহার করি। এ ধরনের প্রকল্প খুব দরকারি, কারণ এগুলো এই অনুসন্ধানের পক্ষে বাস্তব প্রমাণ দেয়।”

তিনি ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব টেমুকোর সিভিল ওয়ার্ক এন্ড জিওলজি বিভাগের পরিচালক।

অধ্যাপক ফারিয়াস আরও বলেন, চীনা প্রকল্প “আমাদের সবচেয়ে উদ্ভাবনী প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতাকে পরীক্ষার সুযোগ দেবে,” এবং এ কারণে “এটি অনুসন্ধানের খুব আকর্ষণীয় একটি সুযোগ আমাদের সামনে তুলে ধরতে পারে।”

গ্যাস এবং তেল

প্রকল্পের দ্বিতীয় উদ্দেশ্যের বিষয়ে সিএনপিসি বলছে যে তারা এশীয় দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অতি-গভীর তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রের অনুসন্ধান করছে।

মাটির এত গভীরে অর্থাৎ সাধারণত পাঁচ হাজার মিটার গভীরে হাইড্রোকার্বনের মজুদ থাকে, সাগর উপকূলে যেখানে পাথর এবং পলির স্তর ঘন থাকে।

তবে কিছু স্থলভাগেও এমন মজুদ পাওয়া যায়, যেমন অববাহিকা বা পাললিক এলাকা।

এই বিষয়টি হচ্ছে তারিম অববাহিকায় যেখানে তাকলামাকান মরুভূমি অবস্থিত, সেখানে বিপুল পরিমাণে তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ থাকতে পারে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, মাটির কঠিন অবস্থা এবং উচ্চ মাত্রায় চাপ ও চরম তাপমাত্রার কারণে তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্তোলনের সময় ব্যাপক প্রযুক্তিগত এবং কারিগরি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এছাড়া গর্তের স্থিতিস্থাপকতা ধরে রাখাটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

তাকলামাকান মরুভূমি ৩৩৭,০০০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত যা পুরো ইকুয়েডরের চেয়ে বড়

যদিও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত গভীরতা ধরে রাখতে পেরেছিল। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে মাটির এত নিচে পৌঁছানোটা আজও প্রচণ্ড জটিল বিষয়।

“এই নির্মাণ প্রকল্পের সমস্যাটা অনেকটা দু’টি পাতলা স্টিলের তারের ওপর একটা বড় ট্রাক চালিয়ে যাওয়ার মতো কঠিন।” চাইনিজ একাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিং-এর একজন বিজ্ঞানী সান জিনশেং সিনহুয়া সংবাদ সংস্থাকে এ তথ্য দেন।

একইসাথে তাকলামাকান মরুভূমিকে কাজ করার জন্য কঠোর পরিবেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সেখানে শীতের সময় তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামে এবং গ্রীষ্মের সময় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে।

সূত্র : বিবিসি

এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর