শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

কর্নাটকে মুখ থুবড়ে পড়ল বিজেপি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২৩, ০৫:৩৮ পিএম

শেয়ার করুন:

কর্নাটকে মুখ থুবড়ে পড়ল বিজেপি
কর্নাটকে বিজেপি এভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে, তা কেউ আঁচ করতে পারেনি

বিভিন্ন সমীক্ষায় কর্নাটকে বিজেপির হারের পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু দক্ষিণ ভারতের এ রাজ্যে বিজেপি এভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে, তা কেউ আঁচ করতে পারেনি। বোঝা যায়নি, কংগ্রেসের ‘সুশাসন’ আর ‘দুর্নীতিমুক্ত’ কর্নাটক স্লোগানের সামনে এভাবে ব্যর্থ হবে বিজেপির মেরুকরণের প্রচার।

গত দু’বছরে কর্নাটকে বিজেপির ‘হিন্দুত্ববাদী মেরুকরণের রাজনীতির’ অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে একাধিকবার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব বিতর্ক, ব্রিটিশবিরোধী লড়াইয়ের শহীদ টিপু সুলতানের ধর্মীয় পরিচিতি, ওবিসি মুসলিমদের সংরক্ষণ বাতিল, কংগ্রেসের ইস্তাহারে বজরং দল নিষিদ্ধ করার প্রতিশ্রুতির মতো বিষয়কে হাতিয়ার করে ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা করেছে বিজেপি। এমনকি, ভোটের প্রচারে এসেছে ‘হালাল মাংস’ এবং বিতর্কিত ছবি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’-এর প্রসঙ্গও।


বিজ্ঞাপন


তাৎপর্যপূর্ণভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মতো বিজেপির তারকা প্রচারকদের সেই মেরুকরণের স্রোতে গা ভাসাতে দেখা গেছে। কর্নাটকে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে এবার প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা ছিল প্রবল। লাগামছাড়া দুর্নীতি, সরকারি কাজে কমিশন নেওয়াসহ বহু অভিযোগ ওই বিরোধিতায় আরও ইন্ধন জুগিয়েছে। ওই সব অভিযোগের কোনো জবাব ছিল না মোদি ও অমিত শাহের কাছে। তাই ভোট প্রচারে এসব প্রসঙ্গ উঠায়নি বিজেপি নেতৃত্ব। রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে বিজেপি শিবিরের ভরসা ছিল হিন্দুত্ববাদ ও ধর্মীয় মেরুকরণ।

কর্নাটককে ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা করেছে বিজেপি

‘জয় বজরংবলী’ স্লোগান থেকে ‘কেরালা স্টোরি’, ‘ভারত থেকে কংগ্রেস কর্নাটককে বিচ্ছিন্ন করতে চায়’, তাকে ‘৯১ বার অপমান করেছে কংগ্রেস’— এসব তাসই এবার খেলেছেন মোদি। এমনকি, ভোটের আবহে বিতর্কিত ছবি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র সমর্থনে মুখ খুলে বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস আসলে উগ্রবাদকে মদত দিতে চাইছে। সেই কারণে এই ছবিকে নিষিদ্ধ করতে চাইছে। তারা আদতে উগ্রবাদকে সমর্থন করছে।’’ অন্যদিকে, ভোটের আগে কর্নাটকে ওবিসি মুসলিমদের চার শতাংশ কোটা বাতিল করে রাজ্যের দুই প্রভাবশালী জনগোষ্ঠী লিঙ্গায়েত এবং ভোক্কালিগাদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার যে পদক্ষেপ কর্নাটকের বিজেপি সরকার করেছিল, প্রকাশ্যে তা সমর্থন করেছিলেন অমিত শাহ।

কর্নাটকে কংগ্রেসের ভোটের প্রচারে আগাগোড়া প্রাধান্য পেয়েছিল, বিজেপি সরকারের দুর্নীতি-অপশাসন এবং জনমোহিনী প্রতিশ্রুতি। বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ৪০ শতাংশ কমিশনের অভিযোগের পাশাপাশি, তুলে ধরা হয়েছিল কর্নাটক সরকারের দুগ্ধপ্রকল্প ‘নন্দিনী’কে পিছনে ঠেলে মোদির রাজ্যের ‘আমূল’-কে নিয়ে আসার প্রসঙ্গ। রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়ঙ্কাও ধারাবাহিকভাবে প্রচার চালিয়েছেন রাজ্যজুড়ে। কিন্তু সন্তর্পণে মেরুকরণের ‘ফাঁদ’ এড়িয়েছেন তারা। মোদিকে তারা ব্যক্তিগত আক্রমণও করেননি। তার প্রতিফলন বলছে, হিন্দুত্বের হাওয়ায় ভর করে ‘স্পর্শকাতর এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত মেঙ্গালুরু, দক্ষিণ কন্নড়, উত্তর কন্নড়ের মতো উপকূলবর্তী কর্নাটকে ভালো ফল করলেও রাজ্যের অন্য এলাকায় ধরাশায়ী হয়েছে বিজেপি শিবির।


বিজ্ঞাপন


কর্নাটকে একক সরকার গড়বে কংগ্রেস

কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে ভারতীয় সময় বিকেল ৩টা পর্যন্ত কংগ্রেস জিতেছে ৪৮টি আসনে এবং তারা এগিয়ে রয়েছে ৮৯ টি আসনে। বিজেপি জয়ী হয়েছে ২০টিতে, এগিয়ে ৪২টিতে আর জনতা দল (সেকুলার) এগিয়ে আছে ১৫টি আসনে । গণনা এখনও চলছে।

কর্নাটকের ২২৪ আসনের বিধানসভায় ‘ম্যাজিক ফিগার’ হচ্ছে ১১৩টি আসন, যা কংগ্রেস ছুঁয়ে ফেলে ভোট গণনা শুরু হওয়ার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই। এবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে চলেছে কংগ্রেস। তারা একাই এ রাজ্যে সরকার গড়বে।

বেঙ্গালুরুতে প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে দলীয় কর্মীদের উচ্ছ্বাস

বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই ইতোমধ্যেই পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদি থেকে শুরু করে বিজেপির নেতা-কর্মীরা অনেক চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু আমরা দাগ কাটতে পারিনি, কংগ্রেস পেরেছে।"

"বিশদ ফলাফল এলে আমরা পর্যালোচনা করব। এই ফলাফল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা যাতে লোকসভা নির্বাচনে ফিরে আসতে পারি, সেই চেষ্টা করব“ - বলেন তিনি।

বোম্মাই শিগ্গাও কেন্দ্রে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, কংগ্রেসের ইয়াসির আহমেদ খান পাঠানের থেকে ২৬ হাজারেরও বেশি ভোটে এগিয়ে আছেন।

বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই (বাঁদিকে)

অন্যদিকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডিকে শিবকুমার কনকপুরা আসনে ১২ রাউন্ড গণনার শেষে ৭০ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়েছেন, আর বিজেপির প্রার্থী সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী আর অশোকা পেয়েছেন প্রায় ১১ হাজার ভোট।

শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শিবকুমার কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তার কথায়, “সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আর দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেকে আমি কথা দিয়েছিলাম যে রাজ্যটা তাদের উৎসর্গ করব। এই জয়ের জন্য কৃতিত্ব দলের কর্মী আর নেতাদেরই প্রাপ্য।“

তাকে যখন কেন্দ্রীয় এজেন্সি অর্থ পাচারের মামলায় গ্রেফতার করে ৫০ দিন জেলে রেখেছিল, সেই সময়ে কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন সনিয়া গান্ধী, সেই ঘটনাও আজ সাংবাদিকদের সামনে উল্লেখ করেন শিবকুমার।

নজর যেসব ভিআইপি আসনে

যেসব আসনগুলোতে কংগ্রেস, বিজেপি এবং রাজ্যভিত্তিক দল জনতা দল (সেকুলার)-এর বড় নেতারা প্রার্থী হয়েছিলেন, তার মধ্যে আরও রয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়ার ভরুণা আসন, জনতা দল (সেকুলার)-এর প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবেগৌড়ার পুত্র এইচডি কুমারস্বামীর ছন্নাপাটনা আসন এবং নির্বাচনের ঠিক আগে বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া নেতা জগদীশ শেট্টারের হুবলী-ধারওয়াড় কেন্দ্রগুলো।

বিজেপির বাসবরাজ বোম্মাই (বাঁয়ে), কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়া (মাঝে), প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডিকে শিবকুমার (ডানে)

ভরুণা আসনে কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়া দশম রাউন্ডের গণনা শেষে বিজেপি প্রার্থীর থেকে প্রায় ২৬ হাজার ভোটে এগিয়ে আছেন।

হুবলী-ধারওয়াড় সেন্ট্রাল আসনে জগদীশ শেট্টার বিজেপি প্রার্থীর থেকে ৩৫ হাজার ভোটে পিছিয়ে আছেন।

ছন্নাপাটনা কেন্দ্রে এইচডি কুমারস্বামীর সঙ্গে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির সিপি যোগেশ্বরের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে ভারতীয় সময় বেলা দেড়টা পর্যন্ত।

ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে কংগ্রেস

গত ১০ মে ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হওয়ার পরে একাধিক 'বুথফেরত সমীক্ষায়' পূর্বাভাস মিলেছিল যে ক্ষমতায় আসতে চলেছে কংগ্রেস।

কয়েকটি সমীক্ষা বলেছিল, ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হবে, যে ক্ষেত্রে সরকার গড়তে জনতা দল (সেকুলার)-এর সহায়তা নিতে হতে পারে কংগ্রেস বা বিজেপিকে। একটি মাত্র সমীক্ষা বিজেপি সরকার গড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল।

দিল্লিতে কংগ্রেস সদর দফতরে শুরু হয়েছে উৎসব

তবে এখনও পর্যন্ত যা ফলাফল দেখা যাচ্ছে, তাতে কংগ্রেস একার জোরেই সরকার গড়তে পারবে, জনতা দল (সেকুলার)-এর সহায়তার কোনো প্রয়োজনই হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

কংগ্রেস দফতরে উৎসব শুরু
 
জয়ের দিকে এগোতেই বেঙ্গালুরুতে প্রদেশ কংগ্রেস দফতর আর দিল্লির সদর দফতরে শুরু হয়ে গেছে উৎসব। চলছে বাজি পটকা ফাটানো, মিষ্টি বিতরণ। দলীয় কর্মীরা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে মিষ্টি বিতরণ করছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডিকে শিবকুমারের বাড়ির সামনেও।

দিল্লির সদর দফতরের সামনে সনিয়া গান্ধী-রাহুল গান্ধীর ছবি নিয়ে উৎসব যেমন হচ্ছে, তেমনই ‘কর্ণাটক বিজয়’ লেখা একটা হোর্ডিংও লাগানো হয়েছে।

তবে কংগ্রেস আশঙ্কা করছে যে বিধায়ক কেনা-বেচায় নামতে পারে বিজেপি। এই আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস নেতা কমল নাথ।

তিনি বলেছেন, “অন্যান্য দলের বিধায়ক বা নির্দলীয় বিধায়কদের সঙ্গে একটা চুক্তি করার চেষ্টা করতে পারে বিজেপি, তাদের কেনার চেষ্টা করতে পারে। তারা এটাই সব সময়ে করে থাকে।“

দলীয় বিধায়কদের যাতে কেউ অর্থের টোপ না দিতে পারে, সেজন্য গণনা শুরুর আগেই কংগ্রেস বিধায়কদের এক জায়গায় রাখার জন্য বেঙ্গালুরুর কাছে একটা সাত তারা রিসর্ট বুক করে রেখেছে।

সূত্র : বিবিসি

এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর