রাশিয়া আজ হতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তবে ইউক্রেন এ বিষয়টি আটকে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্য দেশ পর্যায়ক্রমে এক মাস করে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে। রাশিয়া সর্বশেষ এই দায়িত্ব পেয়েছিল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, যখন তারা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করেছিল।
বিজ্ঞাপন
এর মানে হচ্ছে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে আছে এখন এমন এক দেশ, যে দেশের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে একটি আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গত মাসে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারি করে। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত জাতিসংঘের কোনো অঙ্গ প্রতিষ্ঠান নয়।
রাশিয়ার ব্যাপারে ইউক্রেনের অভিযোগ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, তারা নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি পদে যেতে রাশিয়াকে আটকাতে পারবে না। রাশিয়া নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। পরিষদের অপর চারটি স্থায়ী সদস্য দেশ হচ্ছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং চীন।
নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির ভূমিকা মূলত পদ্ধতিগত দায়িত্ব পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে জাতিসংঘে রাশিয়ার দূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া রুশ বার্তা সংস্থা তাস নিউজ এজেন্সিকে বলেছেন, তিনি নিরাপত্তা পরিষদে কয়েকটি বিতর্ক পরিচালনা করবেন, এর মধ্যে একটি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত।
তিনি বলেন, বর্তমান একক-মেরু-ভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করবে যে নতুন বিশ্বব্যবস্থা, সেটি নিয়েও তিনি আলোচনা করবেন।
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি হিসেবে রাশিয়ার দায়িত্ব গ্রহণকে “এপ্রিল ফুল’স ডে’র” সবচেয়ে “বাজে রসিকতা” বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, আন্তজার্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার কাঠামো এখন যেভাবে কাজ করছে, তা যে কতটা গলদপূর্ণ, এটা তাই মনে করিয়ে দিচ্ছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পডোলিয়াক বলেছেন, “এর মাধ্যমে আসলে আন্তর্জাতিক আইন আবারও ধর্ষিত হলো- যারা আরেকটি দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসী যুদ্ধ চালায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের সব নিয়ম-কানুন লঙ্ঘন করে, জাতিসংঘ সনদ ধ্বংস করে, পরমাণু নিরাপত্তাকে অবহেলা করে- তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংস্থার নেতৃত্বে থাকতে পারে না।”
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত বছর নিরাপত্তা পরিষদকে সংস্কার করা অথবা পুরোপুরি বিলুপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এটা রাশিয়ার হামলা বন্ধে বা প্রতিরোধে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি নিরাপত্তার পরিষদ থেকে রাশিয়ার সদস্যপদ বাতিলেরও আহ্বান জানিয়েছিলেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্র তখন বলেছিল, তাদের হাত বাঁধা, কারণ জাতিসংঘ সনদে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কোনো স্থায়ী সদস্য দেশকে বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
“দুর্ভাগ্যবশত, রাশিয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ। এই বাস্তবতাকে পরিবর্তন করার কোনো রকম সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক আইনি পথ নেই”- এ সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জ্যাঁ-পিয়ের।
তিনি একথাও বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র আশংকা করে মস্কো “নিরাপত্তা পরিষদে তাদের আসনকে কাজে লাগিয়ে মিথ্যে তথ্য ছড়ানো অব্যাহত রাখবে এবং ইউক্রেনে তাদের চালানো কাজ-কর্মের পক্ষে সাফাই গেয়ে যাবে।”
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ হচ্ছে বিশ্বে শান্তি বজায় রাখার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা।
নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী আসনে আছে পাঁচটি দেশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বে যেসব দেশ ক্ষমতাধর ছিল, তাদের প্রাধান্য দিয়েই গঠন করা হয়েছে এই পরিষদ। স্থায়ী সদস্যদের পাশাপাশি পরিষদে আছে দশটি অস্থায়ী সদস্যপদ।
রাশিয়া যেহেতু নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য, তাই যেকোনো প্রস্তাব তারা নাকচ করে দিতে পারে।
নিরাপত্তা পরিষদে কোনো প্রস্তাব পাশ হতে হলে প্রস্তাবের পক্ষে অন্তত ৯টি ভোট পড়তে হয়, তবে কোনো স্থায়ী সদস্য দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিলে সেটি বাতিল হয়ে যাবে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ থামানোর লক্ষ্যে নিরাপত্তা পরিষদে যে প্রস্তাব আনা হয়েছিল, রাশিয়া সেটিতে ভিটো দেয়। অন্যদিকে চীন, ভারত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত এই প্রস্তাবে ভোট দানে বিরত থাকে।
সেপ্টেম্বরে আবার আরেকটি প্রস্তাব আনা হয়েছিল, যাতে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল অবৈধভাবে রাশিয়া নিজদেশের সীমানাভুক্ত করার যে পদক্ষেপ নেয়, সেটি বাতিলের আহ্বান জানানো হয়। এবারও রাশিয়া ভিটো দিয়ে এই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। এই প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত ছিল ব্রাজিল, চীন, গ্যাবন এবং ভারত।
সূত্র : বিবিসি
এমইউ