বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

গুজরাট দাঙ্গায় ভুক্তভোগী বিলকিস বানুর জন্য বিশেষ বেঞ্চ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২৩, ০৬:০৬ পিএম

শেয়ার করুন:

গুজরাট দাঙ্গায় ভুক্তভোগী বিলকিস বানুর জন্য বিশেষ বেঞ্চ
বিলকিস বানু

গুজরাট দাঙ্গায় ভুক্তভোগী বিলকিস বানুরর আর্জি মেনে ১১ জন ধর্ষক ও খুনির সাজার মেয়াদ শেষের আগেই মুক্তির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখতে নতুন বেঞ্চ গড়েছে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট। দেশটির প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন এই বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি পিএস নরসিংহ এবং বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা। প্রধান বিচারপতি বুধবার এই বিষয়ে ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘‘নতুন বেঞ্চ গড়া হয়েছে। আজ বিকেলেই মামলার শুনানি শুরু হবে।’’

বিলকিসের পক্ষে মামলার শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন আইনজীবী শোভা গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘ভারতের শীর্ষ আদালত ১১ অপরাধীর মুক্তির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার শুনানিতে সম্মতি দেওয়ায় আমরা খুশি।’’ প্রসঙ্গত, গত ১৭ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট দেবগড় বারিয়া মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনের মেয়াদ শেষের আগে মুক্তির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি খারিজ করে দিয়েছিল। এরপর ওই অপরাধীদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তৃণমূল এমপি মহুয়া মৈত্র, সিপিএম নেত্রী সুহাসিনী আলি, সাংবাদিক রেবতী লউল, লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য রূপরেখা বর্মা।


বিজ্ঞাপন


প্রসঙ্গত, গত ১৫ অগস্ট ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসে বিলকিস বানুকে গণধর্ষণ ও তার আত্মীয়দের হত্যার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাট সরকার। তার আগে, মুক্তির জন্য শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন ওই ধর্ষণ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীরা। সেই আবেদনের ভিত্তিতে গুজরাট সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিল আদালত। বিজেপি শাসিত গুজরাট সরকার ১১ অপরাধীর মুক্তির পক্ষে সওয়াল করে। এরপরই ১১ জনকে ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় শীর্ষ আদলত। মুক্তির পর স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব ওই অপরাধীদের সংবর্ধনা দিয়েছিল বলে অভিযোগ আছে।

এরপর বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় দেশজুড়ে। কেন মেয়াদ শেষের আগে ১১ জন ধর্ষক ও খুনিকে ছাড়া হলো, এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। এমন বিতর্কের মধ্যেই গুজরাট সরকার জানায়, জেলে ওই ১১ জন ধর্ষক ও খুনি ‘ভাল আচরণ’ করেছেন, সে কারণেই তাদের সাজার মেয়াদ কমানো হয়েছে। যদিও প্রতিপক্ষ দাবি করে, ওই ১১ জন বিভিন্ন সময় প্যারোলে মুক্তি পেয়ে যখন জেলের বাইরে ছিলেন, তখনও তাদের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ উঠেছিল।

২০০২ সালে গোধরাকাণ্ডের পর গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলাকালীন ৩ মে দাহোড় জেলার দেবগড় বারিয়া গ্রামে হামলা চালানো হয়। গ্রামের বাসিন্দা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসকে গণধর্ষণ করা হয়। বিলকিসের চোখের সামনেই তার তিন বছরের মেয়েকে পাথরের ওপর আছাড় মারে হামলাকারীরা। তখন ঘটনাস্থলেই মারা যায় মেয়েটি। এ সময় তার পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্যকে হত্যা করা হয়। এই অপরাধকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ আখ্যা দিয়ে মুম্বাইয়ের সিবিআই আদালতে কঠোর সাজার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিল ওই বিশেষ আদালত। মামলা চলাকালীন একজনের মৃত্যু হয়। গত ১৫ অগস্ট ওই ১১ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়।

গুজরাট সরকার ১১ জন ধর্ষকের জেলের ভিতরে ‘ভালো আচরণের’ দাবি করলেও সরকারি তথ্য ‘অন্য কথা’ বলছে বলে অভিযোগ আছে। ওই ১১ জন যখন বিভিন্ন সময় প্যারোলে জেলের বাইরে ছিল, তখন তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। দু’জনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। আরও দু’জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগও জমা পড়েছে। ১১ জনের মধ্যে ১০ জনই বিভিন্ন সময়ে প্যারোলের নিয়মভঙ্গ করেছেন।


বিজ্ঞাপন


সূত্র : এবিপি

এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর