বড় বড় সৌদি বিনিয়োগকারীরা ক্রেডিট সুইস ব্যাংকে বাড়তি বিনিয়োগ না করায় সুইস ব্যাংকটির শেয়ারমূল্য ২০ শতাংশেরও বেশি পড়ে গেছে। বুধবার সুইজারল্যান্ডের জুরিখে ব্যাংকটির শেয়ারের দর প্রায় ২২ শতাংশ কমে যায়। এরপর দেউলিয়াত্ব এড়াতে তড়িঘড়ি করে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৫৪ বিলিয়ন ধার নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে ক্রেডিট সুইস ব্যাংক।
ওয়াশিংটন জার্নাল ও বিবিসি জানিয়েছে, বিশ্ব ব্যাংকের অংশীদার প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ক্রেডিট সুইস আজ বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছে, তাদের অর্থায়নের জন্য সুইস ব্যাংক থেকে ৫০ বিলিয়ন ফ্রাঙ্ক বা ৫৪ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ নিতে যাচ্ছে তারা।
বিজ্ঞাপন
ব্যাংক নিয়ন্ত্রকরা জানিয়েছে, তারা যেকোনো প্রয়োজনে সমস্যাগ্রস্থ ব্যাংকিং জায়ান্টদের সহায়তা করার জন্য পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং সেক্টরে একাধিক ব্যর্থতার পর ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য এতোটাই পড়ে যায় যে তা ইউরোপের অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় ঋণপ্রদানকারী সংস্থাগুলোর ওপর প্রভাব ফেলে। এতে বিশ্বের ব্যাংকিং খাতে আরও গভীর সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বুধবার ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের সবচেয়ে বড় শেয়ার হোল্ডার সৌদি ন্যাশনাল ব্যাংক সংবাদ মাধ্যমে ঘোষণা দেয় যে, তারা সুইস ব্যাংকটিতে আর অর্থ লগ্নি করবে না, আর এরপরেই ক্রেডিট সুইসের শেয়ারের দর রেকর্ড চার ভাগের এক ভাগেরও বেশি পড়ে যায়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক ধসের ঘটনার পর সৌদি ব্যাংকটিও নানা রকম সমস্যায় পড়ে।
এই অস্থিরতার কারণে সুইস শেয়ার মার্কেটে ক্রেডিট সুইসের শেয়ার বাণিজ্য ভীষণ বাধার মুখে পড়ে। পাশাপাশি অন্যান্য ইউরোপীয় ব্যাংকের শেয়ারেরও দর পড়ে যায়, কোনো কোনোটির দরপতন দুই অঙ্কে গিয়ে পৌঁছায়।
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ও সিগনেচার ব্যাংকের সাম্প্রতিক ধসের পর নতুন করে স্বাস্থ্য ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন নতুন শঙ্কার মুখে পড়ছে।ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের প্রতিটি শেয়ারের দর ১.৬০ সুইস ফ্রাঙ্ক (১.৭৩ ডলার) কমে যায় যা ভিত্তিমূল্যের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম। আর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির সঙ্গে হিসেব করলে এই পতন ৮৫ শতাংশেরও বেশি।
বুধবার সুইস সেন্ট্রাল ব্যাংক জানায়, ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের মূলধন ও তারল্য প্রয়োজন মতোই রয়েছে। তবে সংস্থাটি তারল্য সঙ্কট এড়াতে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিতে প্রস্তুত।
ওয়াল স্ট্রিটে শেয়ারের দরপতনের কারণে আবারও আটলান্টিক মহাসাগরের দুই পাড়ে ব্যাংকগুলোর সামর্থের বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ জানায়, তারা সুইস ব্যাংকটির সঙ্কটের দিকে দৃষ্টি রাখছে আর এ বিষয়ে বিশ্বের অন্যান্য সহযোগি সংস্থার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে।
ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উলরিচ কোরনার একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ক্লায়েন্টের চাহিদাকে কেন্দ্র করে ব্যাংকিং সুবিধা সরবরাহ করতে আমার দল এবং আমি এগিয়ে যাওয়ার জন্য সংকল্পবদ্ধ।
এদিকে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক এবং সুইস ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেট সুপারভাইজরি অথরিটি বলেছে তারা প্রয়োজনে ক্রেডিট সুইসকে সাহায্য করতে প্রস্তুত।
১৮৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক ক্রেডিট সুইস সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থপাচারসহ বহুবিধ অভিযোগের সম্মুখীন হচ্ছে। ২০২১ সালে লোকসান হয় এবং ২০২২ সালে এসে ২০০৮ সালের মন্দাপরবর্তী সবচেয়ে বাজে অবস্থায় চলে যায় ব্যাংকটি। ২০২৪ সাল নাগাদ লাভজনকও হয়ে উঠতে পারবে না বলে পূর্বাভাস রয়েছে।
একে