রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ভারতীয় পুরুষ ও পাকিস্তানি নারীর অনলাইন প্রেম, পরিণতি কারাদণ্ড

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৪:১০ পিএম

শেয়ার করুন:

ভারতীয় পুরুষ ও পাকিস্তানি নারীর অনলাইন প্রেম, পরিণতি কারাদণ্ড
কোভিড লকডাউনের সময় ইকরা এবং মুলায়ামের প্রথম অনলাইনে দেখা হয়

এ বছরের জানুয়ারিতে এক পাকিস্তানি নারীকে ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশ করানোর জন্য এবং তাকে জাল আইডি কার্ড পেতে সহায়তা করায় এক ভারতীয় ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।

ওই ভারতীয় ব্যক্তি যাকে সাহায্য করেছেন তিনি সম্পর্কে তার স্ত্রী ছিলেন।


বিজ্ঞাপন


ভারতের ২১ বছর বয়সী মুলায়াম সিং যাদব এবং পাকিস্তানের ১৯ বছর বয়সী ইকরা জিওয়ানির প্রথম পরিচয় হয় তিন বছর আগে।

বোর্ড গেম লুডো খেলার সময়ে অনলাইনে দেখা হয় এবং সেখান থেকেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা। কিন্তু তারা জানতেন যে তাদের একসাথে থাকা অনেক কঠিন হবে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভঙ্গুর – ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দু’টি আলাদা রাষ্ট্র হয়। এই দুই প্রতিবেশী দেশ ১৯৪৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিনটি যুদ্ধ করেছে।

এমন পরিস্থিতিতে এই দুই দেশের মানুষ একে অপরের দেশে ভ্রমণ করতে গেলে তাদের ভিসা পাওয়াটা জটিল হয়ে পড়ে।


বিজ্ঞাপন


তাই গত সেপ্টেম্বরে মুলায়াম ও ইকরা নেপাল ভ্রমণে যান, যেখানে তারা বিয়ে করেন। তারপরে তারা ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী ব্যাঙ্গালুরু শহরে ভ্রমণ করেন এবং একসাথে বসবাস শুরু করেন।

কিন্তু জানুয়ারিতে তাদের সুখী দাম্পত্য জীবন হঠাৎ বিষিয়ে ওঠে - ইকরা জিওয়ানিকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের জন্য আটক করা হয় এবং জালিয়াতির অভিযোগ গ্রেফতার করা হয় যাদবকে।

জালিয়াতি এবং যথাযথ কাগজপত্র ছাড়াই একজন বিদেশী নাগরিককে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ ওঠে যাদবের বিরুদ্ধে।

ইকরা জিওয়ানিকে গত সপ্তাহে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং যাদব বর্তমানে বেঙ্গালুরুর কারাগারে আছেন।

যাদবের পরিবারের সদস্যরা, যারা উত্তর ভারতের উত্তর প্রদেশে বসবাস করেন, তারা এই গ্রেফতারের ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন যে এই দম্পতির গল্পটি কেবল একটি প্রেমের ঘটনা।

গ্রেফতার হওয়া যাদবের ভাই জিৎলাল বলেন, "আমরা তাদের বাড়ি ফিরে পেতে চাই। আমরা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার পরিস্থিতি বুঝতে পারি। কিন্তু তারা শুধুই প্রেম পড়েছে।"

এমনকি পুলিশও তাদের এমন কথায় সম্মতি জানিয়েছে বলে মনে হয়।

"অবৈধ প্রবেশ এবং জালিয়াতি ছাড়াও, এটি একটি প্রেমের গল্প বলে মনে হচ্ছে," বেঙ্গালুরুর এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ কথা বলেন।

এই প্রেমের গল্প শুরু হয়েছিল ২০২০ সালে, কোভিড লকডাউনের সময়।

যাদব বেঙ্গালুরুতে একটি আইটি কোম্পানির নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কাজ করতেন এবং জিওয়ানি পাকিস্তানের হায়দ্রাবাদ শহরের ছাত্রী ছিলেন।

অনলাইনে দেখা হওয়ার পর দু'জনেই এত দীর্ঘ দূরত্বে থাকা সত্ত্বেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু ইকরা জিওয়ানিকে বিয়ের জন্য তার পরিবার চাপ দিতে থাকলে তিনি যাদবের পরামর্শে পাকিস্তান ছেড়ে আসেন এবং যাদবের সঙ্গে দেখা করতে দুবাই হয়ে নেপালে যান। পুলিশ বলছে, সেখানকার একটি মন্দিরে হিন্দু রীতিতে বিয়ে করেন তারা, এরপর ভারতে ফিরে আসেন।

কিন্তু জিওয়ানির কাছে ভারতে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিল না, তাই পুলিশ বলেছে যে যাদব তার জন্য একটি জাল আধার কার্ডের ব্যবস্থা করে - যা ভারতীয় নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র।

পুলিশের মতে, যাদব প্রতিদিন কাজের জন্য বাইরে যেতেন, তখন জিওয়ানি বাড়িতে থাকতেন।

কিন্তু তিনি প্রায়ই পাকিস্তানে নিজ বাড়িতে তার মায়ের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে কল করতেন, যার ফলে পুলিশ তার কাছ পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

বেঙ্গালুরুর পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তারা গত মাসে বেশ সতর্ক অবস্থায় ছিলেন। কারণ ফেব্রুয়ারিতে ওই শহরে দু’টি বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্ট হওয়ার কথা ছিল: অ্যারো ইন্ডিয়া এয়ার শো এবং একটি জি-টুয়েন্টি অর্থমন্ত্রীদের বৈঠক।

আরও তদন্তের পর, ইকরা জিওয়ানিকে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের জন্য আটক করা হয় এবং ২০ জানুয়ারি ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে হস্তান্তর করা হয়। পরে ফেব্রুয়ারিতে তাকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বেঙ্গালুরুর হোয়াইটফিল্ড জেলার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার এস গিরিশ বলেছেন, "এখন পর্যন্ত, তার বিরুদ্ধে শুধু অবৈধভাবে দেশে আসা ছাড়া আর কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই।" তবে তদন্ত চলছে।

এ বিষয়ে জানতে বিভিন্ন গণমাধ্যম ইকরা জিওয়ানি বা পাকিস্তানে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কারও সঙ্গে কথা বলতে পারেনি।

এই সপ্তাহের শুরুতে, পিটিআই নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে যে মেয়েটির বাবা নিশ্চিত করেছেন যে ইকরা জিওয়ানি তাদের বাড়িতে পৌঁছেছে এবং তারা "এই বিষয়ে কথা বলতে" চান না।

যাদবের মা শান্তি দেবী বলেছেন, তিনি আশা করেন দুই দেশের সরকার তাদের পুনরায় এক করতে সাহায্য করবে।

সূত্র : বিবিসি

এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর