রোববার, ৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

হিন্দুত্ববাদী বজরং দল সমর্থক ফেসবুক পেজে পিস্তল বিক্রির অভিযোগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:১০ পিএম

শেয়ার করুন:

হিন্দুত্ববাদী বজরং দল সমর্থক ফেসবুক পেজে পিস্তল বিক্রির অভিযোগ
বজরং দলের সমর্থক কয়েকটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি করার অভিযোগ ওঠেছে

ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী বজরং দলের সমর্থক কয়েকটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি করার অভিযোগ ওঠেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বিষয়টি নিয়ে খোঁজ করার পরে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির ওই পোস্টগুলো সরিয়ে দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক এক সাংবাদিক বিবিসিকে অস্ত্র বিক্রির ওই বিজ্ঞাপনী ছবির স্ক্রিনশট পাঠিয়েছেন। বজরং দল যে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের যুব শাখা, সেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদ জানিয়েছে যে তাদের সংগঠন কখনই অবৈধভাবে অস্ত্র বিক্রি বা সংগ্রহের পরামর্শ দেয় না।


বিজ্ঞাপন


ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তাদের প্রতিবেদনে যে সাংবাদিকের কথা উল্লেখ করেছে, সেই রাকিব হামিদ নায়েক জানিয়েছেন যে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে তিনি প্রথম লক্ষ্য করেন যে বজরং দলের সমর্থক একটি ফেসবুক পেজে পিস্তল আর দেশি পিস্তল, যাকে চলতি কথায় কাট্টা বলা হয়, সেগুলো বিক্রি করতে চেয়ে এক ব্যক্তি পোস্ট করেছেন।

এরপর তিনি এ বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির কাজ করতে শুরু করেন।

ভারতে হিন্দুত্ববাদীদের কার্যক্রমের ওপর নজর রাখেন সাংবাদিক রাকিব হামিদ নায়েক। এ সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইটও পরিচালনা করেন তিনি।

পাঁচটি ফেসবুক পেজে অস্ত্র বিক্রির পোস্ট


বিজ্ঞাপন


 রাকিব হামিদ নায়েক বলেন, ‘প্রথমে আমি ভেবেছিলাম যে ওটা একটা বিচ্ছিন্ন পোস্ট। কিন্তু তারপরে আমি বজরং দলের সমর্থক আরও কয়েকটি পেজে একই ধরনের পোস্ট লক্ষ্য করি। তখনই বিষয়টা নিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। বেশিরভাগ পোস্টেই পিস্তল বা কাট্টার ছবিসহ হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দেওয়া হয়েছে যাতে আগ্রহীরা যোগাযোগ করতে পারেন। একটি পোস্টে আমি দেখেছি যে পিস্তলের দাম কত সেটাও জানতে চেয়েছেন গ্রুপের অন্য এক সদস্য।’

হিন্দুত্ববাদী বজরং দলের সমর্থক পাঁচটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে তিনি মোট আটটি অস্ত্র বিক্রির পোস্ট দেখতে পান। এই গ্রুপগুলোর কোনোটা পাবলিক গ্রুপ, কোনোটা ক্লোজড গ্রুপ।

রাকিব হামিদ নায়েক বলছিলেন, “একজন অস্ত্র বিক্রেতার সঙ্গে আমি ক্রেতা সেজে হোয়াটসঅ্যাপে আলাপও করেছিলাম এটা জানতে যে ওই বিজ্ঞাপনগুলো ভুয়া কিনা। তাকে যখন আমি জিজ্ঞাসা করি যে ‘জিনিসটা' পাওয়ার নিশ্চয়তা আছে কিনা, ওই বিক্রেতা জবাব দেন তিনি অনেক জায়গায় ‘জিনিস’ পাঠিয়েছেন, যার মধ্যে রাজস্থান আর হরিয়ানার ফরিদাবাদের কথা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেন। তিনি এটাও বলেন যে তিনি বজরং দলকেও ‘জিনিস’ দিয়েছেন।“

নায়েকের ব্যাখ্যা ‘জিনিস’ বলতে ওই পোস্টগুলোতে পিস্তল আর দেশী কাট্টা বোঝানো হয়েছে। একটা দেশি পিস্তলের জন্য তার কাছে ১১ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছিল।

বজরং দলের সঙ্গে পেজগুলোর সম্পর্ক কী?

নায়েকের কাছে জানতে চেয়েছিলাম যে তিনি কী করে নিশ্চিত হচ্ছেন যে ওই ফেসবুক গ্রুপগুলো আসলেই বজরং দলের সমর্থক?

“প্রথমত গ্রুপগুলোর নামে স্পষ্টই লেখা আছে বজরং দলের কথা। আর সেখানে যা যা পোস্ট হয়, আমি দীর্ঘ দিন ধরে সেগুলোর ওপরে নজর রাখি। তাই এটা বুঝতে আমার অসুবিধা হয়নি যে গ্রুপের সদস্যরা বজরং দলের সমর্থক। তবে এটাও স্পষ্ট করে বলা দরকার যে এগুলোর কোনোটাই কিন্তু বজরং দলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ নয়। সেজন্যই বারবার বলছি এরা বজরং দলের সমর্থক এবং কেউ কেউ বজরং দলের পদাধিকারীও,” বলছিলেন রাকিব হামিদ নায়েক।

গ্রুপগুলোর ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে এ বছরের জানুয়ারি মাসে রাকিব বিষয়টি ফেসবুকের নজরে আনেন। তিনি বলেন, তখন তাকে জানানো হয় যে ওই পোস্টগুলো ফেসবুকের নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।

এরপর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল যখন এ বিষয়ে ফেসবুকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তারপরে গত মঙ্গলবার পোস্টগুলো সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে লিখেছে সংবাদপত্রটি।

তারা ফেসবুকের এক মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে বলেছে “আমাদের অ্যাপে কোনো ব্যক্তিকে অস্ত্র কেনা বা বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয় না।“ কিন্তু ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এই প্রশ্নের উত্তর ফেসবুক কর্তৃপক্ষ দেয়নি যে আগে তাদের নজরে আনা হলেও তখনই কেন পোস্টগুলো তারা সরিয়ে দেয়নি।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও প্রাক্তন কমান্ডো দীপাঞ্জন চক্রবর্তী বলছেন, “আমরা তো দেখেছি যে ফেসবুকে একটু অন্য সুরে কোনো কথা পোস্ট করলেই অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেয় তারা। আর অবৈধভাবে অস্ত্র কেনা বেচার পোস্ট এত দিন ধরে রয়েছে তাদের প্ল্যাটফর্মে কেউ দেখল না! ভারতে ফেসবুকের যে মনিটরিং টিম রয়েছে তারা কী করছিল এত দিন ধরে?”

'অবৈধ অস্ত্র কেনা বেচা কখনই সমর্থন করি না'

বজরং দলের মূল সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বলছে, তারা জানে না যে কারা এসব গ্রুপ চালায়, কিন্তু এ ধরনের অবৈধ অস্ত্র কেনা-বেচা তারা কোনো মতেই সমর্থন করে না।

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের মুখপাত্র শরদ শর্মা বলেছেন, “আমরা হিন্দুদের আত্মরক্ষার প্রয়োজনের কথা বলি ঠিকই, কিন্তু তা কখনই এভাবে অবৈধ পথে কেনা আগ্নেয়াস্ত্রের সাহায্যে নয়। বজরং দলকে আমরা পিস্তল বন্দুক ব্যবহারের কোনো পরামর্শ দিই না। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং কখনই আমরা এটাকে সমর্থন করব না।“

যখন শর্মাকে বলা হয় যে বজরং দলের নাম ব্যবহার করে তৈরি করা ফেসবুক পেজে যে তার কথামতোই, বেআইনি কাজ চলছে। তখন তিনি বলেন, "ওইসব ফেসবুক পেজ কারা বানিয়েছে তা জানা নেই। ওগুলোর সঙ্গে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বা বজরং দলের কোনো সম্পর্ক নেই।“

নিরাপত্তা বিশ্লেষক দীপাঞ্জন চক্রবর্তী বলছেন, “বজরং দল যে তাদের অফিসিয়াল পেজ থেকে এসব করবে না, এটা খুব স্বাভাবিক। তবে ওই পোস্টগুলো দেখে মনে হচ্ছে যে হিন্দুত্ববাদীরা একটা হাওয়া তুলতে চাইছে যে দেখ, হিন্দুদের হাতেও এখন আগ্নেয়াস্ত্র আছে বা তারাও দরকারে পিস্তল বন্দুক ব্যবহার করবে।

"মনে হচ্ছে হিন্দুত্বের সপক্ষে প্রচারের জন্যই এসব পোস্ট খুব সুপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে, না হলে দেশি পিস্তল বা কাট্টার জন্য কেউ ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয় না। ওসব অস্ত্র যাদের দরকার তারা ঠিকই জানে কোথায় গেলে তা পাওয়া যাবে।“

ফেসবুক এর আগেও ভারতে সমালোচনার মুখে পড়েছে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের উস্কানিমূলক এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর পোস্ট এবং ভিডিও না সরানোর অভিযোগে।

সূত্র : বিবিসি

এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর