সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ভূমিকম্পের তীব্রতা কীভাবে মাপা হয়?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০১:৩৯ পিএম

শেয়ার করুন:

ভূমিকম্পের তীব্রতা কীভাবে মাপা হয়?

শক্তিশালী ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল ও প্রতিবেশী সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা। ৭.৮ ও ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত মৃত্যু ১৬ হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় এক লাখ মানুষ। হাজার হাজার মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপে আটকে আছে। কিন্তু ভূমিকম্পের এই তীব্রতা কীভাবে মাপা হয় তা কি জানেন। চলুন এ বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।

ভূকম্পনের মাত্রা যেভাবে রেকর্ড করা হয়
ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট কম্পন বা কম্পনের ঢেউ রেকর্ড করা হয় সিসমোমিটার দিয়ে। এই কম্পনের মাত্রা দিয়ে যে রেখাচিত্র তৈরি করা হয় তাকে বলা হয় সিসমোগ্রাফ।


বিজ্ঞাপন


ভূকম্পনের সময় যে সিসমিক ঢেউ তৈরি হয়, সেটি বিশ্বজুড়ে কম বা বেশি মাত্রায় প্রবাহিত হয়। পৃথিবীর যেকোনও স্থানে মাটির নিচের কম্পন সৃষ্টি হলে তার সিসমোগ্রাফ তৈরি হয়। সিসমোগ্রাফ স্টেশনে রেকর্ড হওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল, সময়কাল ও স্থায়িত্বকাল নির্ধারণ করা হয়। 

যে স্কেলে মাপা হয় ভূমিকম্প
ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ধারণে ব্যবহৃত স্কেলের নাম রিখটার স্কেল। সিসমোগ্রাফ থেকে পাওয়া তথ্য এবং রেখাচিত্র বিশ্লেষণ করে গাণিতিকভাবে ভূমিকম্পকে মাপা হয় রিখটার স্কেলের মাধ্যমে। রিখটার স্কেলে ০ থেকে ১০ মাত্রা পর্যন্ত মাপা যায় ভূমিকম্পের তীব্রতাকে।

সিসমোমিটারে রেকর্ড হওয়া ভূকম্পনের বিস্তার, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে সিসমোমিটারের দূরত্ব বিবেচনা করে ভূমিকম্পের তীব্রতা মাপা হয়। সেই সঙ্গে যোগ করা হয় ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব। এসব মিলিয়ে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা মাপা হয়।

তবে মোমেন্ট ম্যাগনিটিউড স্কেল (এমডব্লিউ) নামে ভূমিকম্প পরিমাপ করার একটি স্কেল আছে। এটি ভূমিকম্প মাপার যন্ত্র হিসেবে পরিচিত রিখটার স্কেলের জায়গা নিচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


sismograph

রিখটার স্কেল কে তৈরি করেছিলেন?
রিখটার স্কেলের উদ্ভাবক চার্লস এফ রিখটার। ১৯৩৫ সালে মার্কিন এই ভূকম্পবিদ ও পদার্থবিদ ভূমিকম্প পরিমাপের স্কেল তৈরি করেন। তার নামেই এর নাম রাখা হয় রিখটার স্কেল। রিখটার তখন ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে কর্মরত ছিলেন।

রিখটার স্কেল ছাড়াও ভূমিকম্প মাপার জন্য অন্যান্য অনেক পদ্ধতি রয়েছে। তবে বিশ্বজুড়ে রিখটার স্কেলই ভূমিকম্পের পরিমাপক হিসেবে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত।

এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, রিখটার স্কেলের ১ এবং ২ মাত্রার ভূমিকম্প প্রায় সময়ই হতে পারে। এটা খুব স্বাভাবিক। এই মাত্রার ভূমিকম্প মানুষ টের পায় না।

যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর মতো জায়গায় প্রায় প্রতিদিনই ১ থেকে ২ মাত্রার ভূকম্পন হওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে এসব ভূমিকম্পের মাত্রা এতটাই হালকা যে তা অনুভূত হয় না, তবে সিসমোমিটারে ধরা পড়ে।

রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা যদি ৭ কিংবা ৮ হয় তবে সেটা প্রাণঘাতী ভূমিকম্প হয়। এই মাত্রার ভূমিকম্পগুলো তীব্রভাবে অনুভূত হয় এবং এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও অনেক বেশি।

তুরস্কের ভূমিকম্প এত ভয়াবহ কেন হলো?
এটি একটি বড় ধরণের ভূমিকম্প ছিল। যার মাত্রা ছিল ৭.৮, যেটি 'উল্লেখযোগ্য' হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। ফল্ট লাইন বরাবর প্রায় ১০০ কিলোমিটার ধরে এটি আঘাত হেনেছে এবং এর কারণে ভবনগুলোতে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।

earthquake

ভূমিকম্পের কারণ কী?
পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠ আলাদা বিট দিয়ে গঠিত, যাকে প্লেট বলা হয়, যা একে অপরের পাশাপাশি অবস্থান করে। এই প্লেটগুলি প্রায়শই নড়াচড়া করার চেষ্টা করে। কিন্তু পাশে থাকা অন্য আরেকটি প্লেটের সাথে ঘর্ষণের মাধ্যমে এই নড়াচড়া প্রতিরোধ করা হয়। তবে চাপ বেশি বেড়ে গেলে কখনো কখনো একটি প্লেট হঠাৎ করে ঝাঁকুনি দেয়ায় ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগ সরে যায়।

এবার এরাবিয়ান প্লেটটি উত্তর দিকে সরে যায় এবং উত্তর দিকে সরে যাওয়া আনাতোলিয়ান প্লেটে গিয়ে ধাক্কা দেয়। প্লেটগুলোর এ ধরণের ঘর্ষণের কারণে অনেক ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে।

রেকর্ড হওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প
জাপানের উপকূলে ২০১১ সালে ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল যার কারণে সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, এর কারণে সুনামি হয়েছিল এবং উপকূলের কাছে থাকা একটি পারমাণবিক কেন্দ্রে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটেছিল।

সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি রেকর্ড করা হয়েছে ১৯৬০ সালে চিলিতে। সেখানে ৯.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল।

সূত্র: বিবিসি

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর