ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধসে পড়েছে তুরস্ক ও সিরিয়ার বিশাল অঞ্চল। শুধু তুরস্কে ভূমিকম্পে যেসব এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার আয়তন প্রায় ৭০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। যা প্রায় অর্ধেক বাংলাদেশের সমান। এত বিশাল অঞ্চলে উদ্ধারকাজ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন উদ্ধারকারী বাহিনী। ভূমিকম্পের প্রায় ৬০ ঘণ্টা পর আটকে পড়া মানুষকে জীবিত পাওয়ার আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে।
তুরস্কে অন্তত দশ হাজার বাড়ি একেবারে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। তীব্র ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তুরস্কের অন্তত দশটি প্রদেশ। এর মধ্যে কয়েকটির ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার দিকে বিভিন্ন জরুরি পণ্য নিয়ে রওনা দিয়েছে হাজার হাজার গাড়ি।
বিজ্ঞাপন
আনাদুলু এজেন্সি এক টুইটে এমন একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণাঞ্চলের দিকে সাহায্য নিয়ে রওনা দিয়েছে হাজার হাজার ট্রাক। কোনিয়া-আদানা হাইওয়েতে ৩০ কিলোমিটার গাড়ির সারি তৈরি হয়েছে।
ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে বেশি প্রাণহানি হয়েছে তুরস্কে। সেখানে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সিরিয়ায় মারা গেছে দুই হাজারের বেশি মানুষ। হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তুরস্কের যে দশ প্রদেশে ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছে সেগুলো হচ্ছে- কাহরামানমারাস (৩০১৭ বর্গ কিমি), আদানা (১৯৪৫ বর্গ কিমি), আদিয়ান (১৬৭৯ বর্গ কিমি), দিয়ারবাকির (১৫০৫৮ বর্গ কিমি), গাজিয়ানটেপ (৬৮১৯ বর্গ কিমি), হাতায় (৫৪০৩ বর্গ কিমি), কিলিস (১৫২১ বর্গ কিমি), মালত্য (১২৩১৩ বর্গ কিমি), ওসমানিয়ে (৩৭৬৭ বর্গ কিমি) এবং সানলিউরফা (১৮৫৮৪ বর্গ কিমি)।
বিজ্ঞাপন
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তুরস্কের গাজিয়ানটেপ শহর। ভূমিকম্পের পরে শতাধিক আফটারশক রেকর্ড করা হয়েছে। গত সোমবার ভোর ৪টা ১৫ মিনিটে এই ৭.৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। বেশিরভাগ মানুষ তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। বহুতল ভবন ধসে পড়ে ঘুমন্ত মানুষের ওপর। মোমের মতো ধসে পড়েছে একাধিক ভবন। ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে বিস্তৃত এলাকা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
কত বড় দেশ
তুরস্ক পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। তুরস্কের প্রায় পুরোটাই এশীয় অংশে, পর্বতময় আনাতোলিয়া বা এশিয়া মাইনর উপদ্বীপে পড়েছে। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা আনাতোলিয়াতেই অবস্থিত। তুরস্কের বাকি অংশের নাম পূর্ব বা তুর্কীয় থ্রাস এবং এটি ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় অবস্থিত। এই অঞ্চলটি উর্বর উঁচু-নিচু টিলাপাহাড় নিয়ে গঠিত। এখানে তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুল অবস্থিত।
সামরিক কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি জলপথ এশীয় ও ইউরোপীয় তুরস্ককে পৃথক করেছে মার্মারা সাগর এবং বসফরাস প্রণালী ও দার্দানেলেস প্রণালী। এই তিনটি জলপথ একত্রে কৃষ্ণ সাগর থেকে এজিয়ান সাগরে যাবার একমাত্র পথ তৈরি করেছে।
তুরস্কের আয়তন ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৫৬২ বর্গ কিলোমিটার। প্রশাসনিক সুবিধার্থে তুরস্ককে ৮১টি প্রদেশে বিভক্ত করা হয়েছে। সব বিভাগ আবার সাতটি অঞ্চলে বিভক্ত। তবে এই সাতটি অঞ্চল কোনো প্রশাসনিক বিভাজন নয়। প্রতিটি প্রদেশ কয়েকটি করে জেলায় বিভক্ত। তুরস্কে মোট জেলা আছে ৯২৩টি। প্রতিটি প্রদেশের নামই সেই প্রদেশের রাজধানীর নাম। আর প্রতিটি প্রাদেশিক রাজধানী সংশ্লিষ্ট প্রদেশের কেন্দ্রীয় জেলা। সবচেয়ে বড় শহর ইস্তাম্বুল। এটি হচ্ছে তুরস্কের বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রবিন্দু।
বহু শতাব্দী ধরে তুরস্ক ছিল মূলত কৃষিপ্রধান একটি দেশ। বর্তমানে কৃষিখামার তুরস্কের অর্থনীতির একটি বড় অংশ এবং দেশের শ্রমশক্তির ৩৪% এই কাজে নিয়োজিত। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে তুরস্কতে শিল্প ও সেবাখাতের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। বিশেষত অর্থসংস্থান, পরিবহন, এবং পেশাদারী ও সরকারি সেবায়। অন্যদিকে কৃষির ভূমিকা হ্রাস পেয়েছে। টেক্সটাইল ও বস্ত্রশিল্প দেশের রফতানির প্রধান উৎস। দেশটির অর্থনীতি কয়েক বছর ধরে দোলাচলে রয়েছে। ধীরে ধীরে এর উন্নতি ঘটছে।
অর্থনৈতিক রূপান্তরের সঙ্গে সঙ্গে নগরায়নের হারও অনেক বেড়েছে। বর্তমানে তুরস্কের ৭৫% জনগণ শহরে বাস করে। ১৯৫০ সালেও মাত্র ২১% শহরে বাস করত। জনসংখ্যার ৯০% তুরস্কের এশীয় অংশে বাস করে। বাকি ১০% ইউরোপীয় অংশে বাস করে।
সূত্র: আল জাজিরা, আনাদুলু ও উইকিপিডিয়া
একে