বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

আদানির স্ত্রী, ভাইয়েরাও দুর্নীতিতে জড়িত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

আদানির স্ত্রী, ভাইয়েরাও দুর্নীতিতে জড়িত
ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি ও তার স্ত্রী প্রীতি আদানি

গত কয়েক দিন ধরে শেয়ার বাজারে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি। তার কোম্পানির শেয়ারের দর হু হু করে নেমেছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে আদানিদের সব সংস্থা।

মার্কিন লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ গত সপ্তাহে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ এনে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তারপর থেকেই তাদের শেয়ারের দামে ধস নেমেছে।


বিজ্ঞাপন


হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টের প্রভাব পড়েছে বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকাতেও। সেখানে এক ধাক্কায় তৃতীয় থেকে নেমে প্রথম দশের বাইরে বেরিয়ে গেছেন আদানি। ভারতীয় ধনকুবের বর্তমানে রয়েছেন ১৭ নম্বরে।

হিন্ডেনবার্গের এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, আদানিরা কারচুপি করে ধনী হয়েছেন। শেয়ার বাজারে তারা কৃত্রিমভাবে নিজেদের দর বাড়িয়েছেন। এভাবে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

রিপোর্টে একা গৌতম আদানি বা তার সংস্থা নয়, আদানি পরিবারের আরও একাধিক সদস্যের দিকে আঙুল তুলেছে হিন্ডেনবার্গ। নাম করে করে দেখানো হয়েছে, তারা কী কী দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।

ভাইদের সঙ্গে গৌতম আদানি

হিন্ডেনবার্গের তালিকায় রয়েছেন গৌতম আদানির ভাই, দাদা এবং শ্যালক-সহ আত্মীয়দের অনেকেই। অভিযোগ আছে যে একাধিক দুর্নীতিতে জড়িয়ে রয়েছেন আদানি পরিবারের এই সদস্যেরা।

হিন্ডেনবার্গের ১০৬ পাতার রিপোর্টে বিনোদ আদানির নাম রয়েছে। অভিযোগ, তিনি আদানি গোষ্ঠীর একটি ভুয়া সংস্থার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন।

গৌতম আদানির দাদা বিনোদ। ২০১৬ সালে পানামা দুর্নীতি এবং ২০২১ সালে প্যান্ডোরা পেপার দুর্নীতিতে তার নাম জড়িয়েছিল।

পাকাপাকিভাবে দুবাইতে থাকেন বিনোদ আদানি। প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে তার সম্পদ নজরকাড়া। কয়েক সপ্তাহ আগে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী প্রবাসী ভারতীয়দের তালিকায় বিনোদের নাম উঠে এসেছিল সবার ওপরে।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি

হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে রাজেশ আদানির নামও উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি গৌতমের ভাই। বর্তমানে আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলোর ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেন তিনি। রাজেশ বেআইনি হীরা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেছে ওই আমেরিকান সংস্থা।

হিন্ডেনবার্গ তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, রাজেশ হীরে দুর্নীতিকাণ্ডে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। ভারত সরকারের ডিরেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স বা ডিআরআই তাকে এই দুর্নীতিতে অভিযুক্ত করেছিল। ১৯৯৯ এবং ২০১০ সালে দু’বার রাজেশকে গ্রেফতারও করা হয়।

গৌতম আদানির শ্যালক সমীর ভোরার নামও করা হয়েছে হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে। হিরে দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছিল এই সমীরেরও। বর্তমানে তিনি আদানিদের অস্ট্রেলিয়া বিভাগের নির্বাহী পরিচালক।

হিন্ডেনবার্গ জানিয়েছে, ডিআরআই সমীরকেও হিরে দুর্নীতিকাণ্ডের অন্যতম হোতা হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। অভিযোগ আছে যে দুর্নীতি ঢাকার জন্য একাধিক মিথ্যার আশ্রয়ও নিয়েছিলেন তিনি।

এছাড়া হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে গৌতম আদানির স্ত্রী প্রীতি আদানির দুর্নীতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি পেশায় দাতের চিকিৎসক। আদানি ফাউন্ডেশনের চেয়ারওম্যানও তিনি।

রিপোর্টে রয়েছে যতীন মেটার নামও। তার ছেলে আদানির ভাইয়ের কন্যার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। হীরা দুর্নীতির সঙ্গে তিনিও জড়িত বলে অভিযোগ আছে হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে।

গৌতম আদানির শ্যালক

হীরা নিয়ে এক হাজার কোটি ভারতীয় রুপির আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে। আদানিরাই নাকি ওই দুর্নীতির কাণ্ডারি। অভিযোগ আছে যে কর ফাঁকি দিয়ে তারা হীরা এবং সোনার গয়নার ব্যবসা চালিয়েছেন।

হিন্ডেনবার্গের যাবতীয় অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। ৪১৩ পৃষ্ঠার একটি পাল্টা বিবৃতি দিয়ে তারা জানিয়েছে, যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। কিন্তু আদানিদের জবাবের প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি শেয়ার বাজারে। তারপরেও ক্রমশ নেমেছে তাদের শেয়ারের দর। বিপর্যয়ের মুখে তড়িঘড়ি ২০ হাজার কোটি টাকার এফপিও বাতিল করে দিয়েছেন আদানি।

এলআইসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর যোগসূত্র রয়েছে। আদানিদের অসংখ্য শেয়ার কিনেছে এসব সংস্থা। তাই আদানিদের বিপর্যয়ের মুখে উদ্বেগে আছে ভারতের সাধারণ মানুষ।

সূত্র : এবিপি 

এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর