বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

কতটা ক্ষতির মুখে আদানি?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:২৪ এএম

শেয়ার করুন:

কতটা ক্ষতির মুখে আদানি?

ভারতীয় ব্যবসায়ী ও বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের গৌতম আদানির মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর শেয়ারে নাটকীয় পতনের পর তিনি ঝড়ের মুখে পড়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, আদানির মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো বাজার কারসাজি এবং জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত। এমন অভিযোগ করার পর আদানির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ১০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। আদানি গ্রুপ এই অভিযোগকে 'মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়' বলে অভিহিত করেছে।


বিজ্ঞাপন


বন্দর, বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিমানবন্দর, খনি এবং নবায়নযোগ্য শক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আদানি গ্রুপের ব্যবসা রয়েছে। এই ব্যবসায়িক গোষ্ঠির এমন ক্ষতি, ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারানোর আশঙ্কা তৈরি করেছে। তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতাও। 

ভারতের বিরোধী দলগুলো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ব্যবসায়ী আদানির অনিয়মের তদন্ত দাবি করার পর রাজনৈতিক ঝড়ের সৃষ্টি হয়।

গত এক দশকে আদানি সাম্রাজ্যের চোখ ধাঁধাঁনো উত্থান গৌতম আদানিকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের কাতারে নিয়ে যায়। ফোর্বস পত্রিকার মতে, আদানি জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত বার্নার্ড আর্নল্ট এবং ইলন মাস্কের পর বিশ্বের তৃতীয় ধনী এবং এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ছিলেন।

হিন্ডেনবার্গ আদানি গ্রুপের ব্যবসায়িক অনুশীলন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার পর আদানি গ্রুপের সাতটি তালিকাভুক্ত সংস্থা তাদের বাজার মূলধনের প্রায় অর্ধেক হারিয়েছে। এক প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, করমুক্ত অফশোর অঞ্চলের মাধ্যমে অর্থ সররাহ করে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়াচ্ছিল আদানি গ্রুপ। ওই কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম অতিমূল্যায়ন করা হয়েছে এবং গত তিন বছরে শেয়ারের দাম ৮০০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।


বিজ্ঞাপন


হিন্ডেনবার্গ একটি বিনিয়োগ সংস্থা যা ওয়াল স্ট্রিটে একটি শর্ট সেলার প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। ফার্মটি কর্পোরেট অন্যায় অনুসন্ধান করে এবং কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে গেলে তা থেকে উপার্জন করে।

হিন্ডেনবার্গ বলেছে, আদানি গ্রুপের 'নির্লজ্জ স্টক ম্যানিপুলেশন' এবং অ্যাকাউন্টিং জালিয়াতি 'কর্পোরেট ইতিহাসের বৃহত্তম প্রতারণা'। প্রতিষ্ঠানটি আরও বলেছে, 'ব্যাপক পরিমানের ঋণ' গ্রুপটিকে একটি অনিশ্চিত আর্থিক পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে।

৪১৩ পৃষ্ঠার এক প্রতিক্রিয়ায় আদানি গ্রুপ এই প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভুল তথ্যের বিদ্বেষপূর্ণ সংমিশ্রণ বলে অভিহিত করেছে।

বৃহস্পতিবার বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে এক ভিডিও বার্তায় আদানি বলেন, তার গ্রুপের মৌলিক ভিত্তি শক্তিশালী এবং ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে তাদের রেকর্ড অনবদ্য। আদানি গ্রুপ, এই প্রতিবেদনকে ভারতের প্রবৃদ্ধির ইতিহাস এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার উপর আক্রমণ বলে অভিহিত করেছে।

ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলেছেন, আদানির ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য নিয়ে বিতর্ক ভারতে বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে বলে তিনি মনে করেন না। তিনি বলেন, ভারত এখনও একটি 'ভীষণ সুনিয়ন্ত্রিত আর্থিক বাজার।

ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আদানি গ্রুপের শেয়ারের দরপতনে স্থানীয় ব্যাংকগুলোর কত ক্ষতি হয়েছে, ব্যাংকগুলোর কাছে তা জানতে চেয়েছে।

বছর খানেক আগে মার্কিন ইলেকট্রিক ট্রাক প্রস্তুতকারক নিকোলা করপোরেশনের জালিয়াতি উন্মোচন করে বিশ্বে পরিচিতি পান অ্যান্ডারসন ও তার প্রতিষ্ঠান হিন্ডেনবার্গ। 

২০২০ সালের জুন মাসে মার্কিন শেয়ারবাজারে আত্মপ্রকাশ করে নিকোলা। এরপরই হু হু করে বাড়তে থাকে নিকোলার শেয়ারের দর। বিখ্যাত ফোর্ড মোটরকে ছাড়িয়ে কয়েক মাসের মধ্যেই কোম্পানিটির বাজারমূল্য ৩৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। বর্তমানে কোম্পানিটির মূল্য মাত্র ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার।

আদানির কোম্পানিগুলোর মূল্য কোথায় গিয়ে থামবে সেটি জানতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। কারণ এই ঝড় এখনই থামবে না বলে মানছেন বিশ্লেষকরা।

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর