বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

গত বছরই দেওয়া হয়েছিল আদানি গ্রুপের ‘বিপর্যয়ের পূর্বাভাস’!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:০৮ পিএম

শেয়ার করুন:

গত বছরই দেওয়া হয়েছিল আদানি গ্রুপের ‘বিপর্যয়ের পূর্বাভাস’!

ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গ্রুপ সম্প্রতি বড় ধরনের শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা করে। এর মধ্যে মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) ‘শেয়ার দরে কারচুপি’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে শেয়ার সংক্রান্ত মার্কিন গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ফার্ম। এরপরই বিপর্যয়ের মুখে পড়ে আদানি গ্রুপ। এর ফলে গত ৮ দিনে আদানি গ্রুপ হারিয়েছে ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু আদানি গ্রুপ যে এই পরিস্থিতিতে পড়বে, তা আগেই উঠে আসে অন্য এক সমীক্ষায়।

গত বছরের অগাস্ট মাসে মুকেশ আম্বানীকে পিছনে ফেলে ভারতের সব থেকে ধনী ব্যক্তির তকমা পান গৌতম আদানি। শুধু ভারতই নয়, বেশ কয়েকটি রিপোর্ট অনুযায়ী ওই সময় তিনি এশিয়ারও শীর্ষ ধনী। কিন্তু তখনই বিদেশি আর্থিক লগ্নি সংক্রান্ত পরামর্শদাতা সংস্থা ‘ক্রেডিট সাইট’-এর এক সমীক্ষায় উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।


বিজ্ঞাপন


‘ক্রেডিট সাইট’-এর ওই সমীক্ষায় বলা হয়, আদানি গ্রুপের সফলতার পর্দার পিছনে রয়েছে পাহাড়সম ঋণ। ওই সময় বিশ্ব বাজারে আদানি গ্রুপের ঋণের পরিমাণ প্রায় ২ দশমিক ২২ লক্ষ কোটি টাকা বলেও ওই সমীক্ষায় দাবি করা হয়, যা ২০২১ সালে ছিল ১ দশমিক ৫২ লক্ষ কোটি টাকা। এক বছরে সেই ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায় ৪২ শতাংশ। এই ঋণ আদানি গ্রুপের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলেও সমীক্ষায় বলা হয়।

ওই সমীক্ষায় আরও জানানো হয়, আদানি গ্রুপের ব্যবসায়িক প্রসারের পিছনে রয়েছে ব্যাপক পরিমাণ আর্থিক দেনা। আদানি গ্রুপের বিদেশি মুদ্রায় নেওয়া ঋণের পরিমাণও অনেক বেশি। বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (এসবিআই) কাছ থেকে নতুন করে প্রায় ১৪ হাজার কোটির ঋণ নেওয়ার আবেদন করেছেন আদানি গ্রুপ, ওই সময় এমন খবরও ছড়িয়ে পড়ে।  বিভিন্ন ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে প্রবেশের পাশাপাশি আদানি গ্রুপ তাপবিদ্যুৎ এবং গ্রিন এনার্জিতেও পা রাখে।

adani_group

সমীক্ষায় আরও বলা হয়, এর মধ্যেই পলিভিনাইল ক্লোরাইড প্ল্যান্ট তৈরির কাজে হাত লাগিয়েছিল আদানি গ্রুপ। কয়লা থেকে পলিভিনাইল ক্লোরাইড উৎপাদন করার লক্ষ্যে গুজরাটের মুন্দ্রায় কারখানা তৈরির সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যেই দেশের টেলিকম সেক্টর এবং মিডিয়াতেও পা রাখে আদানি গ্রুপ। আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানি ৫জি নিলামেও অংশ নিয়েছিলেন। এর ফলে ঋণের বোঝা আরও বাড়তে পারে বলেও সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছিল। 


বিজ্ঞাপন


অন্য একটি সমীক্ষাতেও দাবি করা হয়েছিল, আদানি গ্রুপের সমস্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেডই সব থেকে বেশি ঋণগ্রস্ত। শুধু তাই নয়, এশিয়ার মধ্যেও সব থেকে ঋণগ্রস্ত সংস্থার তালিকায় এই সংস্থা দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। প্রথমে রয়েছে চীনের একটি সংস্থা। আদানি গোষ্ঠীর সব ধরণের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তারের কারণকেই দায়ী করা হয় সমীক্ষায়।

এমন অবস্থায় প্রশ্নও উঠেছিল, কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের এত ঋণ দেশের অর্থনীতির উপর কতটা প্রভাব ফেলতে পারে? কিন্তু আদানি গ্রুপের ‘প্রচুর ঋণ আছে’ এমন কথার প্রচলন থাকা সত্ত্বেও সরকার আদানি গ্রুপের বিনিয়োগের প্রতি আস্থা রেখেছে। আদানি গ্রুপ নতুন ভারতের রূপ গড়তেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে, এই আস্থার কথা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।

কিন্তু সম্প্রতি ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’-এর রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই আদানি গ্রুপের ১০টি সংস্থার শেয়ারে দরপতন হয়। যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় এক দশক ধরে শেয়ার কারসাজি এবং আর্থিক লেনদেনে প্রতারণা চালিয়ে আসছে আদানি গ্রুপ। কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দর বহুগুণ বাড়িয়ে বিশাল সম্পদ গড়েছে গ্রুপটি। কয়েক বছরে গ্রুপটির শেয়ারদর বেড়েছে ৫০০ শতাংশেরও বেশি।

হিন্ডেনবার্গের ওই রিপোর্টটি ছিল ৩২ হাজার শব্দের। রিপোর্টের পাল্টা ৪১৩ পাতার জবাব দেয় আদানি গোষ্ঠী। রোববার আদানির তরফে জানানো হয়, মার্কিন ওই সংস্থার রিপোর্ট মিথ্যা। সমস্ত অভিযোগই ভিত্তিহীন। আদানি আরও দাবি করে, হিন্ডেনবার্গের ৮৮টি প্রশ্নের মধ্যে ৬৮টি প্রশ্নের উত্তর একাধিক সংস্থার বার্ষিক রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’ পাল্টা জানায়, জাতীয়তাবাদের আড়ালে প্রতারণা ঢাকা দেওয়া যায় না।

ভারতের চলতি অর্থবছরের বাজেট পেশের পর আদানি গ্রুপের বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার উল্লেখযোগ্য হারে নেমেছে। ১৭ শতাংশ পতন হয়েছে, তো কোনও শেয়ার এক ধাক্কায় ৫১ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আদানি গ্রুপের শেয়ারের দরপতনে স্থানীয় ব্যাংকগুলোর কত ক্ষতি হয়েছে, ব্যাংকগুলোর কাছে তা জানতে চেয়েছে।

এই মহা দরপতনের পর এশিয়ার শীর্ষ ধনীর মুকুট হারান আদানি। এছাড়া বৃহস্পতিবার এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিন নম্বর থেকে গৌতম আদানি বিশ্বব্যাপী ধনীদের তালিকায় ১৬তম স্থানে নেমে যান। শেয়ারের এই দরপতন এবং এফপিও স্থগিত বিলিয়নিয়ার গৌতম আদানিকে বড় ধরনের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। বন্দর থেকে খনি পর্যন্ত অসংখ্য ব্যবসার মাধ্যমে নিজের সাম্রাজ্য দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন এই ধনকুবের।

এমএইচটি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর