শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

মিয়ানমারে সেনা শাসনের ২য় বার্ষিকীতে নতুন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

মিয়ানমারে সেনা শাসনের ২য় বার্ষিকীতে নতুন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এখন লড়ছে দেশের জনগণের বিরুদ্ধে

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের দু’বছর পূর্তি উপলক্ষে সে দেশের গণতন্ত্রপন্থী কর্মীরা "নীরব ধর্মঘট" পালন করছেন। বিক্ষোভকারীরা জনসাধারণকে বুধবার বাড়ির ভেতরে থেকে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এমন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া দেশটির সেনাবাহিনী-সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বলেছে যে দেশটি একটি "অস্বাভাবিক পরিস্থিতির" সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে সে দেশে চলতি বছর একটি নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে নতুন সন্দেহ তৈরি হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


মিয়ানমারের একজন বিশিষ্ট নাগরিক ও মানবাধিকার কর্মী তায়জার সান এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, সামরিক বাহিনী যে কারচুপির নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে “জনগণ তা মেনে নেবে না” বলে প্রমাণ করার জন্যই এই ধর্মঘট চলছে।

আরেকজন গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারী থিনজার শুনলেই ই জানান, সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ অব্যাহত রয়েছে, বিশেষভাবে গ্রামীণ এলাকায়।

মিয়ানমার থেকে পাওয়া ছবিতে ইয়াঙ্গুনের বাণিজ্যিক কেন্দ্রসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে রাস্তাঘাট জনমানবহীন দেখা যাচ্ছে।

জনসাধারণের মনোভাব বুঝতে চরম ভুল করেছে যে সেনা অভ্যুত্থান, তার দু’বছর পর মিয়ানমারের পরিসংখ্যান থেকে চরম হতাশার কাহিনী জানা যাচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


রাজনৈতিক বন্দীদের পর্যবেক্ষণ করে এমন একটি সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন ফল পলিটিক্যাল প্রিজনার্স বলছে, ভিন্নমত দমনে সামরিক জান্তার অভিযানে এ পর্যন্ত ২,৯০০ জন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

দু:খের খতিয়ান

সেনা শাসনের মধ্যে ১৫ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছেন, ৪০ হাজার ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ৮০ লাখ শিশু আর স্কুলে যেতে পারছে না। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, মিয়ানমারে দেড় কোটি লোক চরম খাদ্য সঙ্কটে ভুগছেন।

দেশটির বেশিরভাগ অংশে এক নিষ্ঠুর গৃহযুদ্ধ চলছে। অভ্যুত্থানের পরপরই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে এক বৈঠকে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এখনও বিরোধীদের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনায় রাজি নয়।

এর পরিবর্তে সেনা শাসকেরা এমন একটি নির্বাচনের পরিকল্পনা করেছে যাতে প্রায় নিশ্চিতভাবেই অং সান সুচি কিংবা তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিকে বাদ দেওয়া হবে। এনএলডি গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিল।

তার অনুগতরা জনগণকে সামরিক শাসকের আয়োজিত যেকোনো ভোট বয়কট করার আহ্বান জানাচ্ছেন। তাদের যুক্তি, এই নির্বাচন হবে অবৈধ এবং অবাস্তব। জাতিসংঘ বলছে, এগুলো হবে “ভুয়া নির্বাচন।“

দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে চলতি সপ্তাহে সেনাবাহিনী যে স্বীকারোক্তি দিয়েছে তার ফলে নির্বাচন স্থগিত হতে পারে এবং দেশে জরুরি আইনের মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে বলে বিবিসি সংবাদদাতা জোনাথান হেড খবর দিয়েছেন। তেমনটা ঘটলে মিয়ানমারের ভয়াবহ অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে তিনি মনে করছেন।

নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞা

পশ্চিমা দেশের সরকারগুলো একযোগে বুধবারের বার্ষিকীকে সেনা শাসক ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে নতুন দফা নিষেধাজ্ঞার দিন হিসেবে ব্যবহার করেছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে জ্বালানি সরবরাহ করে এমন সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ব্রিটেন। তারা বলছেন, এসব সংস্থা সেনা শাসকদের "ক্ষমতা ধরে রাখার প্রয়াসে তাদের বর্বর বিমান হামলাকে সক্ষম করছিল।“

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অর্থ, জ্বালানি, অস্ত্র ও সরঞ্জাম পাওয়ার সুযোগ কমিয়ে আনা। বিরোধী দলের ওপর নৃশংস দমন-পীড়ন, বিমান হামলা এবং নির্লজ্জ মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য (সামরিক) জান্তাকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।

অস্ট্রেলিয়া মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে তার প্রথম নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ঘোষণা করেছে, এটার লক্ষ্য ১৬ ব্যক্তিকে "মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী" করা। সেই সঙ্গে তারা সামরিক সরকার-নিয়ন্ত্রিত দু‘টি প্রধান ব্যবসায়িক সংস্থা, যা সে দেশের অর্থনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে আছে, তার বিরুদ্ধেও তারা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাগুলোর লক্ষ্য সেনা-অনুমোদিত নির্বাচন কমিশন, "গভীরভাবে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিতে মিয়ানমারের সামরিক সরকার যাকে নিয়োগ করেছে।"

ধারণা করা হচ্ছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বুধবার একটি বিবৃতি জারি করবে যাতে জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে।

সূত্র : বিবিসি

এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর