শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

মার্কিন সংস্থার কারচুপির অভিযোগ নিয়ে আদানি যা বলল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৫:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

মার্কিন সংস্থার কারচুপির অভিযোগ নিয়ে আদানি যা বলল
ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি

মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গের তোলা কারচুপির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ভারতের আদানি শিল্প গোষ্ঠী। তারা এ আমেরিকান সংস্থার প্রতিটি অভিযোগের বিষয়ে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এ সময় তারা পাল্টা বক্তব্য দিয়ে জানিয়েছে যে হিন্ডেনবার্গের তোলা কারচুপির অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন।

ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির সংস্থা আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কারচুপি করে শেয়ার দর বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। আমেরিকার লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণাকারী সংস্থা ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’-এর রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে ‘জালিয়াতি’ করে ধনী হয়েছে আদানি শিল্প গোষ্ঠী।


বিজ্ঞাপন


মার্কিন সংস্থার রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই ভারতের শেয়ার বাজারে ধস নামে। রাতারাতি মুখ থুবড়ে পড়েছে আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলোর শেয়ার। 

হিন্ডেনবার্গ জানিয়েছে, গত দু’বছর ধরে তারা আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার এবং ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর নজর রেখেছে। খুঁটিনাটি তদন্ত চালিয়ে কারচুপির তথ্য জানতে পেরেছে তারা। তারপর তা প্রকাশ করা হয়েছে।

কিন্তু সমস্ত অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। মার্কিন সংস্থার রিপোর্ট ‘মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছে তারা। সেই সঙ্গে আদানিদের পাল্টা অভিযোগ, বাজারে তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যই এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। এভাবে লগ্নিকারীদেরও বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।

হিন্ডেনবার্গের প্রায় প্রতিটি অভিযোগের উত্তর দিয়েছে আদানি শিল্প গোষ্ঠী। এ সময় প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ কতটা ভিত্তিহীন।


বিজ্ঞাপন


আদানি গোষ্ঠী জানিয়েছে, হিন্ডেনবার্গ মোট ৮৯টি প্রশ্ন করেছিল। তার মধ্যে কিছু প্রশ্ন ছিল গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্ট পক্ষের লেনদেন সংক্রান্ত। এছাড়া, কিছু প্রশ্ন করা হয় ডিআরআই এবং আদালতের মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে।

এ ভারতীয় শিল্প গোষ্ঠীর দাবি, হিন্ডেনবার্গের প্রশ্নাবলীর মধ্যে অন্তত ২১টি প্রশ্ন এমন ছিলো, যার উত্তরকে কোনো দুই বছরব্যাপী তদন্তের ফলাফল হিসেবে দাবি করা যায় না। কারণ ২০১৫ সাল থেকে সর্বজনীন নথিতেই সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া ছিলো।

আদানিরা আরও জানান, হিন্ডেনবার্গের তালিকাভুক্ত ৯টি সংস্থার মধ্যে আটটিতে অন্তত ছয়টি বড় অংশীদার রয়েছে। সংস্থাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডেলয়িট হ্যাসকিন্স অ্যান্ড সেলস, শাহ ধানধারিয়া অ্যান্ড কো., এসআরবিসি অ্যান্ড কো., ওয়ালকার চ্যান্ডিওক অ্যান্ড কো., কেএস রাও অ্যান্ড কো. ইত্যাদি।

আদানিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দর বাড়িয়েছেন। শেয়ারের দর কয়েক গুণ বাড়িয়ে আদানিরা বিশাল সম্পদ তৈরি করেছেন। এভাবে গত তিন বছরে আদানির শেয়ার সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৮০০ শতাংশের বেশি।

সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে এ ভারতীয় শিল্প গোষ্ঠীর পাল্টা দাবি, তাদের যে সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার সবগুলোর ক্ষেত্রেই এনএসই-র নিয়ম মানা হয়েছে। ফলে দর বাড়ানোর তত্ত্ব ভিত্তিহীন।

বাজারের সর্বোচ্চ সাত শতাংশে রয়েছে আদানিদের চারটি বড় সংস্থা। আদানি গোষ্ঠী জানিয়েছে, তাদের প্রোমোটার লিভারেজ প্রোমোটার হোল্ডিংয়ের চেয়ে চার শতাংশ কম।

এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি আদানি গোষ্ঠীর মুখ্য অর্থনৈতিক কর্মকর্তা (সিএফও) জুগেশিন্দর সিংহ বলেন, ‘‘হিন্ডেনবার্গ এমন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করার আগে আমাদের সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগের চেষ্টা করেনি দেখে আমরা বিস্মিত। ওদের উচিত ছিলো আগে তথ্য যাচাই করে নেওয়া।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টটি ভুল তথ্য এবং পুরনো, ভিত্তিহীন ও অসম্মানজনক কিছু অভিযোগের সমন্বয়ে গঠিত। এই অভিযোগগুলো ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে আগেই নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।’’

ভারতে আদানি গোষ্ঠীর মানহানির উদ্দেশ্যেই পরিকল্পনামাফিক এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন জুগেশিন্দর। তিনি জানান, এর মাধ্যমে ভারতের শেয়ার বাজারে অস্থিরতা তৈরি করা হয়েছে। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশের সাধারণ মানুষও।

শেয়ার বাজারের এই টালমাটাল পরিস্থিতির মাঝে গৌতম আদানির বিশাল সম্পত্তিহানি হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির সম্পদের পরিমাণ ৭ লাখ ৫৫ হাজার ভারতীয় রুপি।

সম্প্রতি আদানি অন্তত এক লাখ কোটি ভারতীয় রুপি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় এক ধাক্কায় চার ধাপ নেমে গিয়ে সপ্তম স্থানে চলে এসেছেন তিনি। চলতি অর্থবর্ষে আদানির প্রায় দুই লাখ কোটি ভারতীয় রুপির বেশি সম্পত্তি কমেছে।

আদানিদের শেয়ার বাজারেও দর কমেছে। গত বুধ এবং শুক্রবার আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলোর শেয়ারমূল্য কমেছে ৪.১৭ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি।

শুক্রবার ‘আদানি টোটাল গ্যাস’ খুইয়েছে ৭৯ হাজার ৭৮৮ কোটি ভারতীয় রুপি। ‘আদানি গ্রিন এনার্জি’-এর ৫৭ হাজার ৮৭৬ কোটি ভারতীয় রুপির ক্ষতি হয়েছে। ‘আদানি ট্রান্সমিশন’ হারিয়েছে ৫২ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা।

এছাড়া, শুক্রবার ‘আদানি পাওয়ার’ এবং ‘আদানি উইলমার’-এর শেয়ার দর পড়েছে ৫ শতাংশ। ‘আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন’-এর শেয়ার দর পড়েছে ২৩ শতাংশ। হিন্ডেনবার্গের অভিযোগের প্রভাবেই শেয়ারবাজারে এই পতন বলে মনে করা হচ্ছে।

আমেরিকার সংস্থা দাবি করেছে, মরিশাস, আরব আমিরাতের মতো কিছু দেশে আদানি পরিবারের মালিকানাধীন কিছু ভুয়া সংস্থা রয়েছে। ওই দেশগুলোতে আয়কর ছাড়ের সুবিধা পাওয়া যায়। অভিযোগ, ওই ভুয়া সংস্থার মাধ্যমে বেআইনি লেনদেন এবং কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।

হিন্ডেনবার্গ আরও জানিয়েছে, আদানিদের ব্যবসা নিয়ে গবেষণা চালাতে তারা আদানি গোষ্ঠীরই কয়েকজন সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে কয়েক হাজার নথি পর্যালোচনা করা হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখেই প্রকাশিত হয়েছে তাদের রিপোর্ট।

সূত্র : দ্যা ইকোনোমিক টাইমস, দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর