রাশিয়াকে মোকাবেলা করতে ইউক্রেন যে অস্ত্রের দাবি জানিয়ে আসছিল তা হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এম ওয়ান আব্রামস ট্যাংক এবং জার্মানির লেপার্ড-২। শেষ পর্যন্ত দেশ দুটি এসব ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই দুই ক্ষেপণাস্ত্র কতটা শক্তিশালী?
জার্মান এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৈরিকৃত এই ট্যাংক অত্যাধুনিক মানের এবং সোভিয়েত আমলের ট্যাংকের থেকে অধিক শক্তিশালী হিসেবে গণ্য করা হয়। ডিজিটাল ম্যাগাজিন ব্রেকিং ডিফেন্সের কন্ট্রিবিউটিং এডিটর সিডনি ফ্রেডবার্গ বলেন, ‘জার্মানির লেপার্ড এবং আমেরিকার আব্রামস বস্তুতপক্ষে টুইন।’
লেপার্ড-২ ট্যাংকের বিশেষত্ব
লেপার্ড-২ ট্যাংক হলো বিশ্বের অন্যতম প্রথম সারির যুদ্ধট্যাংক। জার্মানির সেনাবাহিনী এবং অনেক ইউরোপীয় দেশের সামরিক বাহিনী এ ট্যাংক ব্যবহার করে। ইউরোপীয় নয়—এমন দেশগুলোর মধ্য কানাডা ও ইন্দোনেশিয়া এই ট্যাংক ব্যবহার করে। আফগানিস্তান, কসোভো ও সিরিয়ার সংঘাতে ডিজেল ইঞ্জিনচালিত এ যুদ্ধট্যাংকের ব্যবহার দেখেছে বিশ্ববাসী।
এ ট্যাংকের নানা বৈশিষ্ট্য আছে। ডিজাইনও বিভিন্ন রকম হয়। এ ট্যাংকে নাইটভিশন ইকুইপমেন্ট এবং একটি লেজার রেঞ্জ ফাইন্ডার আছে, এর সাহায্যে লক্ষ্যবস্তুর দূরত্ব মাপা যায়। লেজার রেঞ্জ ফাইন্ডার রুক্ষ ভূখণ্ড বা রুক্ষ ভূমির ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় চলমান লক্ষ্যের ওপর ভালোভাবে নজরদারি করতে সাহায্য করে।
জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য লেপার্ড-২ ট্যাংক ক্রস মাফাই কর্তৃক ১৯৭৯ সালে তৈরি করা হয়। অস্ট্রিয়া, কানাডা, চিলি, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, গ্রিস, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, স্পেন এবং তুরস্কের সেনাবাহিনীতে এই ট্যাংক ব্যবহৃত হচ্ছে।
এমওয়ান আব্রামস ট্যাংকের বিশেষত্ব
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি সামরিক যান এমওয়ান আব্রামস বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক যুদ্ধ ট্যাংকগুলোর মধ্যে একটি। এটি চালানোর জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। ৪০০ মিলিয়ন ডলার আমেরিকান প্যাকেজে আটটি পুনরুদ্ধারের গাড়িও রয়েছে যা ট্যাংকগুলো আটকে গেলে টানতে পারে।
এমওয়ান আব্রামস ট্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর জন্য জেনারেল ডাইনামিকস সিস্টেম কর্তৃক ১৯৭৮ সালে তৈরি করা হয়। মার্কিন সেনাবাহিনীর কাছে এটা ১৯৮০ সালে হস্তান্তর করা হয়।
প্রতিরক্ষা ম্যাগাজিনের এডিটর ফ্রেডবার্গ বলেন, ‘ট্যাংক দুটো প্রায় একই। সুবৃহৎ যান, ব্যাপক সাঁজোয়াযুক্ত, সর্বপরি সোভিয়েত আমলের তৈরি অথবা রাশিয়ার বর্তমান ব্যবহৃত ট্যাংক থেকে এগুলো অধিক সুরক্ষিত। ইউক্রেনে ট্যাংক দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া বলেছে, পশ্চিমা ট্যাংকগুলো অন্যান্য সমরাস্ত্রের সঙ্গে পোড়ানো হবে। ট্যাংক সরবরাহকে নির্লজ্জ উসকানি অভিহিত করে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেন বিজয়ী হবে এই ভ্রান্তির জন্য পশ্চিমারা ভবিষ্যতে পরিতাপ করবে।’
কতটা সাহায্য করবে ইউক্রেনকে?
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রায় এক বছর হতে চলেছে। এতদিন ইউক্রেন ও রাশিয়া দুই পক্ষই যুদ্ধে সোভিয়েত যুগের ট্যাংক ব্যবহার করে আসছে। সেখানে এমওয়ান আব্রামস ও লেপার্ড-২ এর মতো আধুনিক যুদ্ধট্যাংক ব্যবহৃত হলে ইউক্রেনকে যুদ্ধক্ষেত্রে যথেষ্ট সাহায্য করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইউক্রেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মিত্রদের থেকে সামরিক সহায়তা চায়। দীর্ঘদিন ধরেই জেলেনস্কি তার মিত্রদেশগুলোর কাছে ট্যাংক দিয়ে সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়ে আসছেন। এর মধ্যে রয়েছে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা রুখে দেওয়ার ব্যবস্থা। দূরপাল্লার কামান থেকে রক্ষা করার মতো যুদ্ধবিমানও চাইছেন জেলেনস্কি। এ পরিস্থিতিতে লেপার্ড-২ পেলে রাশিয়ার হামলা প্রতিরোধে ইউক্রেনের জন্য ভালোই হবে।
শীতের শেষে আসছে বসন্তে যুদ্ধের দ্বিতীয় বর্ষে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে বড় লড়াই হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সবকিছুই নির্ভর করবে ইউক্রেনের কাছে কত অস্ত্র পৌঁছাচ্ছে বা কী ধরনের উন্নত মানের অস্ত্র পৌঁছাচ্ছে, তার ওপর।
সূত্র: বিবিসি
একে