জার্মানির তৈরি লেপার্ড ট্যাংক পেতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে ইউক্রেন। আর এ বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছার চেষ্টা করছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ও পশ্চিমা দেশগুলো। শুক্রবার জার্মানির রামস্টেইন বিমানঘাঁটিতে ন্যাটো ও ৫০টি দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা বৈঠক শুরু করেছেন। এমন সময় এই বৈঠক হচ্ছে, যখন ইউক্রেনকে ট্যাংক সরবরাহে জার্মানির ওপর চাপ বাড়ছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জার্মানিতে কয়েক ডজন পশ্চিমা মিত্রদের এক বৈঠকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহারের লক্ষ্যে ট্যাংক সরবরাহ করার জন্য তাদের প্রতি সরাসরি আবেদন জানিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলো ইতোমধ্যে আরও বেশি অস্ত্র দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে দক্ষিণ জার্মানির র্যামস্টিন এয়ারবেসে ওই বৈঠকে জেলেনস্কি পশ্চিমা দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বলেছেন, 'শত শত ধন্যবাদ মানে শত শত ট্যাংক নয়।'
কিন্তু ইউক্রেনকে ট্যাংক সরবরাহ করার প্রশ্নে বিশেষভাবে সমস্যায় পড়েছে জার্মানি। তাদের তৈরি লেপার্ড-২ ট্যাংক পাঠাতে এবং অন্যান্য যেসব দেশের সামরিক বাহিনীতে এই ট্যাংক রয়েছে সেগুলো ইউক্রেনের হাতে তুলে দেয়ার ব্যাপারে তাদের ওপর চাপ বাড়ছে। পোল্যান্ড বা ফিনল্যান্ডের মতো দেশ যাদের কাছে লেপার্ড-২ ট্যাংক রয়েছে সেগুলো ইউক্রেনের কাছে পাঠাতে হলে প্রস্তুতকারী দেশ হিসাবে জার্মানির অনুমোদন লাগবে।
বৈঠকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন তাদের বলেছেন, এখন সময় এসেছে সামরিক সহায়তাকে আরও ‘গভীর’ করার।
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনে যুদ্ধের প্রায় ১১ মাস পর নেটোর সামরিক অধিনায়করা বিশ্বাস করেন যে সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে সৈন্য সংখ্যা বাড়িয়ে মস্কোর সরকার বসন্তকালে নতুন করে আক্রমণের পরিকল্পনা করছে।
পশ্চিমা দেশের কর্মকর্তারা মনে করছেন, রুশ বাহিনীকে হটিয়ে দেয়ার জন্য আগামী কয়েক সপ্তাহে একটি সম্ভাব্য সুযোগ তৈরি হয়েছে। তারা বলছেন, রসদের ঘাটতি পূরণ এবং অতিরিক্ত সৈন্যবল একত্রিত করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রুশ বাহিনীতে গোলাবারুদ এবং প্রশিক্ষিত সৈন্যের সঙ্কট রয়েছে।
অন্যদিকে, রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলিকে সতর্ক করেছে এই বলে যে তার শত্রু দেশকে ট্যাংক সরবরাহ করা হলে এই সংঘাতকে তা অত্যন্ত বিপজ্জনকভাবে বাড়িয়ে দেবে।
ব্রিটেন ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে যে তারা ১৪টি চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংক ইউক্রেনে পাঠাবে। কিন্তু কিয়েভের সরকারের চাহিদা আরও বেশি। সে কারণে জার্মানির লেপার্ড-২ ট্যাংক এই যুদ্ধের সেই সমীকরণের চাবিকাঠি।
ব্রিটিশদের সরবরাহ করা ট্যাংকের তুলনায় লেপার্ড-২ ট্যাংকের সরবরাহ অনেক বেশি এবং ইউরোপে এক ডজনেরও বেশি দেশের সামরিক বাহিনীতে এই ট্যাংক ব্যবহার করা হয়।
র্যামস্টিনে বৈঠকের আগে, ট্যাংক সরবরাহ করার বিষয়ে জার্মানির দ্বিধাগ্রস্ত মনোভাবের সমালোচনা করেছেন জেলেনস্কি। তিনি বার্লিন সরকারকে আশ্বাস দিয়েছেন যে লেপার্ড-২ ট্যাংক হাতে পেলে সেগুলিকে শুধুমাত্র প্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহার করা হবে এবং সেগুলো কোনভাবেই রাশিয়ার ভূখণ্ডের ভেতরে ঢুকবে না।
পোল্যান্ডের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওয়েল ইয়াবলনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এই প্রশ্নে বার্লিনের মতামত যাই হোক না কেন, তারাই ইউক্রেনকে লেপার্ড-২ ট্যাংক সরবরাহ করতে প্রস্তুত রয়েছেন।
জার্মান সরকার চলতি সপ্তাহে বলেছে, লেপার্ড-২ ট্যাংকের বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের এব্রামস ট্যাংক ইউক্রেনে পাঠাতে সম্মত হয় কিনা, তার ওপর। আমেরিকানরা এখনই এই ট্যাংক ইউক্রেনে পাঠাতে চায় না।
সম্প্রতি ইউক্রেনকে পেট্রিয়ট বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠানোর এক অনুরোধ জার্মানি শুরুতে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে পেট্রিয়ট পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে জার্মানির অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে। ট্যাংক সরবরাহের ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্রকে সামনে দেখতে চাইছে জার্মানি।
সূত্র: বিবিসি ও রয়টার্স
একে