শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ইরানের আইআরজিসিকে ‘উগ্রবাদী সংগঠন’ বলছে পশ্চিমারা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

ইরানের আইআরজিসিকে ‘উগ্রবাদী সংগঠন’ বলছে পশ্চিমারা
ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলশনারি গার্ড (আইআরজিসি)

ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলশনারি গার্ড (আইআরজিসি) মূলত একটি সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি যা দেশটির ইসলামী শাসন ব্যবস্থার প্রতি ভেতর ও বাইরে থেকে আসা যেকোনো হুমকিকে প্রতিরোধে কাজ করে। পশ্চিমারা (যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) শিগগিরই এই সংস্থাটিকে উগ্রবাদী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করতে পারে।

কেন উগ্রবাদী সংগঠন বলা হতে পারে?


বিজ্ঞাপন


যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি বলেছেন, ইরানে (ব্রিটিশ গুপ্তচর হিসেবে পরিচিত) আলিরেজা আকবরিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর এমন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বিবেচনা করছেন তারা।

আকবরি ইরানেরই একজন সাবেক মন্ত্রী, যিনি পরে যুক্তরাজ্যের গুপ্তচর হিসেবে নিজের পরিচয় প্রতিষ্ঠা করেন বলে অভিযোগ আছে। এ কারণে তিনি যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্বও পান।

পর আকবরিকে যুক্তরাজ্যের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছেন, ‘ইরান যুক্তরাজ্যে থাকা এমন আরও দশ ব্যক্তিকে টার্গেট করেছে, যার মধ্যে একজন ইরানি সাংবাদিকও রয়েছেন। ওদিকে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্নালেনা বায়েরবক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন উভয়েই ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে অনুরোধ করেছেন যাতে করে ইরানি এ সংস্থাটিকে উগ্রবাদী তালিকায় ফেলা হয়।


বিজ্ঞাপন


এ প্রসঙ্গে তারা সাম্প্রতিক সময়ে ২২ বছর বয়সী তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর যে পন্থায় বিক্ষোভ দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে সেটিকেও তুলে ধরেছেন।

মাহসা আমিনি দেশটির নৈতিকতা পুলিশের হাতে আটকের পর পুলিশী হেফাজতে মারা যান।

ইউরোপীয় পার্লামেন্ট আইআরজিসিকে উগ্রবাদী সংগঠনের তালিকায় ফেলার পক্ষে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে, কিন্তু এটা কার্যকর করতে হলে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে এটি একই পন্থায় অনুমোদন দিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য ২০১৯ সালেই আইআরজিসিকে উগ্রবাদী তালিকাভুক্ত করেছে হেজবুল্লাহর মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তার অভিযোগ তুলে।

ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী কী?

১৯৭৯ সালে ইরানের বিপ্লবের পর এ বাহিনীটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো মূলত ইসলামি শাসন কাঠামোকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য। এটি দেশটির নিয়মিত সামরিক বাহিনীর বিকল্প হিসেবে কাজ করে আসছিল।

লন্ডনের থিংক ট্যাংক চাথাম হাউস ইন্টারন্যাশনাল এফেয়ার্সের ড. সনম ভিকাল বলেন, ‘এটা হওয়ার কথা ছিলো একটি একক মিলিশিয়া ব্রিগেড কিন্তু পরে একটি ব্যাপক বড় সংগঠনে পরিণত হয়েছে।’

আইআরজিসির নিজস্ব স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনী আছে এবং এর আনুমানিক সদস্য প্রায় এক লাখ নব্বই হাজার।

এমনকি এটিই ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু কর্মসূচি পরিচালনা করে। একইসাথে এর আছে ব্যাপক ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য। প্রতিরক্ষা, প্রকৌশল ও নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে তারা অনেক কোম্পানির মালিক।

ফলে এরা দেশটির অর্থনীতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক।

যুক্তরাষ্ট্রের মতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরানের হাতেই সবচেয়ে বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আছে।

এ ছাড়া বাসিজ প্রতিরোধ বাহিনী নামের আধাসামরিক বাহিনীকেও নিয়ন্ত্রণ করে আইজিআরসি।

রেভ্যুলশনারি গার্ড কী করে?

বাসিজ রেজিস্ট্যান্স ফোর্সের মাধ্যমে আইআরজিসি দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে। গত চার মাস ধরে ব্যাপক সরকারবিরোধী আন্দোলন দমন করতে তারাই মূলত কাজ করছে।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে যে এবারের বিক্ষোভে অন্তত ৫২২ জন নিহত হয়েছে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মারিয়াম আলেমজাদেহ বলেন, “বাসিজ সহিংসতা দমনে বহু কিছু করেছে এবং অনেককে পিটিয়ে মেরেছে।”

আইজিআরসির একটি বৈদেশিক কার্যক্রম বিভাগ আছে যার নাম কুদস (জেরুসালেম) বাহিনী। তারা অস্ত্র, অর্থ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সংগঠনকে সহায়তা করে। তারা ইসরায়েলবিরোধী বিভিন্ন সামরিক অভিযানে ফিলিস্তিনিদের সহায়তা করে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা শক্তিগুলোর অনুচরদের দমনেও তারা কাজ করে।

যুক্তরাষ্ট্র এই কুদস ফোর্সকে ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে তাদের শত শত সেনা সদস্যকে হত্যার জন্য দায়ী করে থাকে।

সূত্র : বিবিসি, প্রেস টিভি

এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর