ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ভবনে তাণ্ডব চালিয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্টের সমর্থকেরা। এছাড়া ব্রাজিলিয়ান কংগ্রেস, বিভিন্ন সরকারি দফতরের অফিস, সুপ্রিম কোর্টেও হামলা চালাতে দেখা গিয়েছে বলসোনারো সমর্থকদের। স্থানীয় সময় রোববার (৮ জানুয়ারি) তারা একত্রিত হয়ে এই হামলা চালায়।
ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর সমর্থকদের এই হামলা ফিরিয়ে দিয়েছে দুই বছর আগের আমেরিকার স্মৃতি। আমেরিকার ক্যাপিটলে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি এভাবেই হামলা চালিয়েছিলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকেরা।
বিজ্ঞাপন
ব্রাসিলিয়ায় যখন এই হামলা হয়, প্রেসিডেন্ট লুলা সেখানে ছিলেন না। রাজধানী থেকে দূরে কর্মসূত্রেই সাও পাওলো গিয়েছিলেন তিনি।
গত বছর কট্টর দক্ষিণপন্থী বোলসোনারোকে হারিয়ে ব্রাজিলে ক্ষমতায় আসেন বামপন্থী লুইজ ইনাসিও লুলা ডা সিলভা। দেশের সাংগঠনিক কাঠামোয় এই আক্রমণের জন্য তিনি পূর্বতন প্রেসিডেন্টকেই দায়ী করেছেন। রাজধানী ব্রাসিলিয়ার নিরাপত্তা বিষয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন লুলা।

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ভবন, সুপ্রিম কোর্ট এবং কংগ্রেসে হামলার নেপথ্যে যারা রয়েছেন, তাদের প্রত্যেককে চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ব্রাজিলের হলুদ, সবুজ পতাকা নিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের দিকে এগোচ্ছেন। কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে তারা ঢুকে যাচ্ছেন ভবনের ভেতর। কাতারে কাতারে মানুষ জড়ো হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভবনের ছাদে।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বোলোসোনারো এখনও পর্যন্ত নিজের হার স্বীকার করেননি। বরং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আয়োজিত নির্বাচনে পরাজয়কে তিনি ভোট গণনায় কারচুপি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অক্টোবরে পরাজয়ের পরেই দেশ ছেড়েছেন বোলসোনারো। তিনি বর্তমানে ফ্লোরিডায় থাকেন, যেখানে রয়েছেন ট্রাম্পও। অক্টোবরে ভোটের পর থেকেই বোলসোনারোর সমর্থক এবং অনুগামীরা দেশের নানা প্রান্তে তাণ্ডব চালাচ্ছেন। রোববার তা চরম আকার ধারণ করল।
ব্রাজিলিয়ান সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ বিশ্বের বহু নেতা। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। পাশাপাশি ব্রাজিলের প্রতিবেশী চিলি, কলম্বিয়া এবং ভেনিজুয়েলাও ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।

গত ১ জানুয়ারি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভাগ গ্রহণ করেছিলেন লুলা দা সিলভা। তবে রীতি মেনে তার হাতে প্রেসিডেনশিয়াল স্যাশ তুলে দেননি বলসোনারো। বরং লুলা শপথ নেওয়ার আগেই দেশ ছেড়েছিলেন বলসোনারো। আমেরিকার ফ্লোরিডা প্রদেশে পাড়ি দেন তিনি। সেখানে অবস্থিত ডিজনিল্যান্ডের খুব কাছেই একটি বাড়ি ভাড়া করে সেখানে থাকছেন বলসোনারো। এর আগে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলেছিলেন বলসোনারো। তবে তার কাছে প্রমাণ ছিল না।
গত অক্টোবরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জিতে তৃতীয়বারের জন্য ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হন লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। এই নির্বাচনে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো পান ৪৯.১ শতাংশ ভোট। এদিকে জয়ী লুলা পান ৫০.৯ শতাংশ ভোট। ব্রাজিলে এই প্রথম কোনো প্রার্থী প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন নির্বাচনে হেরে যান।
জেবি

