বাংলাদেশে সবচেয়ে সস্তা ও সহজলভ্য ফলের একটি হলো কলা। কলা ও কলাগাছ প্রায় সবখানেই দেখা যায়। কলার বিভিন্ন প্রজাতিও রয়েছে। মর্তমান, সবরি, দুধসর, দুধসাগর, অমৃতসাগর, অগ্নিশ্বর, কবরী, চন্দন কবরী, কাঁঠালি, জাবকাঁঠালি, চাঁপা, চিনিচাঁপা আরও কত কি। কলাগাছ একটি সাধারণ গাছ হলেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় কলাগাছ দেখলে আপনার চোখ কপালে উঠবে।
সাধারণত আট দশফুট উচ্চতার কলা গাছ দেখে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু জানেন কি এই পৃথিবীতেই আছে তালগাছের থেকে প্রায় দ্বিগুণ উচ্চতার কলা গাছ? দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর ছুঁয়ে থাকা নিউ গিনিতে দেখা মেলে এমন কলাগাছের।
বিজ্ঞাপন
প্রায় ৭ লাখ ৮৬ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের নিউ গিনি দ্বীপের পশ্চিম অংশে আছে, পাপুয়া এবং পশ্চিম পাপুয়া নামে ইন্দোনেশিয়ার দুটি প্রদেশ। আবার দ্বীপের পুর্ব দিকের অংশটিতে গড়ে উঠেছে পাপুয়া নিউ গিনি নামে এক স্বাধীন দেশ।
নিউ গিনি দ্বীপেরই আকাশ ছুঁয়ে থাকে বিশ্বের বৃহত্তম কলাগাছ প্রজাতি মুসা ইনজেনস। এই প্রজাতির কলা মানুষ প্রথম খুঁজে পেয়েছিল পশ্চিম পাপুয়ার আফ্রাক পাহাড়ে। প্রায় দশ হাজার বছর আগে। যদিও প্রত্নতাত্ত্বিক ও উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের মতে মুসা ইনজেনস প্রজাতির কলা এই দ্বীপে আছে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই।

পাপুয়ার রেনফরেস্টগুলির আলো আঁধারি পরিবেশে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০- ৩৫০০ ফুট উচ্চতায় জন্মায় দৈত্যাকার কলাগাছ মুসা ইনজেনস। মাটি থেকে কাণ্ড সোজা উঠে যায় ৫০ ফুট উচ্চতায়। তারপর শুরু হয় পাতা। তাই গাছটির গড়পড়তা উচ্চতা গিয়ে দাঁড়ায় ৬৬ ফুটে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় ইতিহাসে ৯৮ ফুট উচ্চতার কলাগাছের কথাও লেখা আছে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের বুক সমান উচ্চতায়, এই কলাগাছগুলোর কাণ্ডের বেড় প্রায় ৭-৮ ফুট। গাছের প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতায় থাকে কলার কাঁদি। সারা বছরই ফল দেয় গাছটি। এক একটি গাছে গড়পড়তা ৩০০ কলা হয়। প্রতিটি কলা লম্বায় প্রায় ১ ফুট। ওজন গড়ে ৮০০– ৯০০ গ্রাম। তাই গোটা একটি কলা কয়েকজনে মিলে খাওয়া যায়।
স্থানীয় মানুষেরা অনায়াসে উঠে পড়েন এই আকাশ ছোঁয়া কলাগাছগুলোতে। মোটা দড়ি দিয়ে বেঁধে নামিয়ে আনেন কলার কাঁদি। বিশালাকার কাঁদিতে থাকা কলাগুলো দেখতে সুন্দর ও আকারে অতিকায় হলেও স্বাদে একটু টক।
কলার ভেতরে থাকা বীজের সংখ্যাও অনেক। তাই স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশিরভাগই কলাগুলোকে রান্না করে খান। এছাড়া আমাদেরই মত স্থানীয়রা কলা গাছের পাতা ব্যবহার করেন নানা কাজে। পাতা ও আঁশ দিয়ে তারা অরণ্যের গভীরে বানান অস্থায়ী কুটির ও বসার মাদুর।
উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা বলেন, পাপুয়ার রেনফরেস্টের কালো বা বাদামী রঙের চটচটে মাটিতে (হিউমাস বা বোদ) প্রচুর পরিমাণে লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম থাকে। মাটিতে অ্যাসিডের পরিমাণও বেশি। ক্রান্তীয় আবহাওয়া ও বিশেষ গুণসম্পন্ন মাটি মুসা ইনজেনস প্রজাতির কলাগাছের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটায়।
সূত্র: দ্য ওয়াল
একে

