পৃথিবীতে কত আশ্চর্য ঘটনাই না সংঘটিত হয়, সাধারণ বুদ্ধিতে তার ব্যাখ্যা মেলে না। তেমনই এক অমীমাংসিত রহস্য হয়ে থেকে গেছে এই ‘ভিলেজ অফ ডেড’ বা ‘মৃতদের গ্রাম’ রহস্য। রাতারাতি এ গ্রাম থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল সব মানুষ আর তাদের বসবাসের সব চিহ্ন। এমনকি কবরের মধ্যে থেকে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল সব লাশও। না, আজগুবি গল্প নয়, সত্যি সত্যিই বাস্তবে ঘটেছিল এমনটা। কোথায়? বলছি সে কথাই।
উত্তর পশ্চিম কানাডার আঞ্জিকুনি হ্রদের পাশে এক ছোট্ট গ্রাম। মাত্র হাজার দুয়েক মানুষের বাস ছিলো সেখানে। অদ্ভুত এই ঘটনাটি ঘটার আগে ওই গ্রামটি সম্পর্কে মানুষ প্রায় কিছুই জানতেন না। ব্যবসার কাজে দু-একজন পশম ব্যবসায়ীর আনাগোনা ছাড়া বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে তেমন যোগাযোগও ছিলো না গ্রামটির। আর তেমন এক ব্যবসায়ীর সূত্রেই এই রহস্যের কথা উঠে এসেছিল সমগ্র দুনিয়ার সামনে। জো লবেল নামের ওই ব্যক্তি মাঝে মাঝেই পশম কেনার জন্য গ্রামে যেতেন। তেমনই এক দিন গ্রামে পৌঁছে তিনি চমকে যান। দেখেন খাঁ খাঁ করছে গ্রাম। জনমানুষের চিহ্নটুকুও নেই। চারিদিকে ছড়িয়ে আছে অসমাপ্ত গেরস্থালির চিহ্ন, রোজকার ব্যবহারের টুকিটাকি জিনিস। উনুনে রান্না চাপিয়েছিলেন কেউ, সেই খাবার উনুনেই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পশমের জামা-কাপড় তৈরি করতে করতে কেউ উঠে গিয়েছেন, পশমের গোলা, অসমাপ্ত কাপড় সবই পড়ে রয়েছে। যেন হাতের কাজ ফেলে রেখে কোনো প্রয়োজনে কিছুক্ষণের জন্য চলে গেছে সকলে। ওই ব্যবসায়ী ভেবেছিলেন, এমনটাও হতে পারে যে গ্রামের কেউ মারা গেছেন হঠাৎ, আর সকলে দল বেঁধে তার শেষকৃত্যে গেছেন হয়ত। এই ভেবে গ্রামের গোরস্থানে গিয়ে পৌঁছান ওই ব্যক্তি। কিন্তু সেখানে অপেক্ষা করে ছিলো আরও ভয়ংকর এক দৃশ্য। দেখা যায় কবরস্থানের সবগুলো কবর খোঁড়া, কিন্তু একটা কবরেও লাশের চিহ্ন মাত্র নেই! এমনকি পুরনো কবরের মধ্য থেকে কঙ্কাল পর্যন্ত গায়েব!
বিজ্ঞাপন
ভয়ে বিস্ময়ে শেষ পর্যন্ত পুলিশকে খবর দেন ওই ব্যবসায়ী। কিন্তু গোটা গ্রাম ও আশপাশের এলাকা তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোনো সূত্র মেলেনি। শুধুমাত্র অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল ওই গ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন গ্রামপ্রধানের কবরটি। আর কোনো জীবিত মানুষের চিহ্নও মেলেনি কোথাও। ১৯৩০ সালের এই ঘটনা ক্রমশ উঠে আসে গোটা দুনিয়ার সামনেই। কিন্তু কিছুতেই রহস্যের কোনো সুরাহা হয়নি। বিশ্বের অমীমাংসিত রহস্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হয়েই রয়ে গেছে এই ‘ভিলেজ অব ডেড’-এর ঘটনা।
এমইউ

