বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

কে এই মালয়েশিয়ার রাজা, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে তার ভূমিকা কী?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২২, ০৪:০৫ পিএম

শেয়ার করুন:

কে এই মালয়েশিয়ার রাজা, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে তার ভূমিকা কী?
মালয়েশিয়ার রাজা আল-সুলতান আবদুল্লাহ সুলতান আহমেদ শাহ

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার রাজা আল-সুলতান আবদুল্লাহ সুলতান আহমেদ শাহ ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। এখন তার গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। কারণ দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা নির্ধারণ করবেন তিনি। বর্তমানে মালয়েশিয়াতে নির্বাচনের পরে সংসদে কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। অন্যদিকে জোট গঠনের বিষয়ে হওয়া আলোচনাও ব্যর্থ হয়েছে। এসব কারণে মালয় রাজার সাংবিধানিক ভূমিকা বেড়েছে।

মঙ্গলবার আল-সুলতান আবদুল্লাহ বলেছেন, তিনি বিরোধী দলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের মধ্যে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন সে ব্যাপারে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেবেন। কারণ শনিবারের নির্বাচনের পরে কোনো রাজনীতিবিদ জোট গঠনের জন্য যথেষ্ট সমর্থন অর্জন করতে সক্ষম হননি।


বিজ্ঞাপন


এবার মাত্র দু’বছরের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো মালয়েশিয়ার রাজা দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করছেন। তবে সাধারণ নির্বাচনের পর এবার প্রথমবারের মতো এমন ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

king abdullah malaysia

মালয়েশিয়ার রাজা কে?

২০১৯ সালে রাজা আল-সুলতান আবদুল্লাহ সুলতান আহমেদ শাহ ৫৯ বছর বয়সে মালয়েশিয়ার সিংহাসনে আরোহণ করেন। ১৯৫৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে তিনি দেশটির ১৬ তম রাজা।


বিজ্ঞাপন


মালয়েশিয়াতে একটি অনন্য সাংবিধানিক রাজতন্ত্র রয়েছে, যেখানে ৯ রাজ্যের রাজপরিবার থেকে রাজাদের বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকে রাজা পাঁচ বছরের জন্য রাজত্ব করেন।

সাদা চুলের দৃষ্টিনন্দন আল-সুলতান আবদুল্লাহ পূর্ববর্তী রাজার আশ্চর্য ত্যাগের পর রাজা হয়েছেন।

মালয়েশিয়ার পূর্ব উপকূলের পাহাং রাজ্যের শাসক রাজা আল-সুলতান আবদুল্লাহ রাজত্বের শুরুতে তার নম্র ও বাস্তবমুখী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তাকে ‘কেনটাকি ফ্রাইড চিকেন’ কেনার জন্য সাধারণ মানুষের লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেছে। এমনকি তাকে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের সাহায্য করতেও দেখা যায়। 

রাজা আবদুল্লাহ একজন আগ্রহী ক্রীড়াবিদও বটে। কম বয়সে বিভিন্ন ফুটবল ম্যাচে তিনি তার রাজ্যের প্রতিনিধিত্বও করেছেন। তিনি ফিফার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং এশিয়ান হকি ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

king abdullah malaysia

মালয়েশিয়ার রাজাই কী সব সময় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করেন?

মালয়েশিয়ার রাজা দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করেন না। দেশটির প্রধানমন্ত্রী পদ কে পাবেন তা নির্ধারিত হয় সাধারণত নির্বাচনের মাধ্যমে। তবে মালয় সংবিধান তাকে এ ক্ষমতা দিয়েছে যে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ তখনই করতে পারবেন, যখন সাধারণ নির্বাচনের পরে সংসদে কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না এবং সরকার গঠনে জোট সৃষ্টি করতেও যখন তারা ব্যর্থ হয়। এ সময় মালয়েশিয়ার রাজা এমন একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন, যাকে তিনি বিশ্বাস করেন যে সে আইন প্রণেতাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে।

মালয়েশিয়ার রাজারা খুব কমই ক্ষেত্রেই এ ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন, কিন্তু গত দুই বছরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা রাজাকে প্রধানমন্ত্রী বাছাই করতে প্ররোচিত করেছে।

তবে এক সময়ের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল বারিসান ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স এবং এর নেতৃস্থানীয় দল ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের (আমনু) পতনের মধ্যে রাজতন্ত্র ২০২০ সাল থেকে আরও প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছে।

king abdullah malaysia

আগেও কি এমনটা হয়েছে?

হ্যা। বাদশাহ আল-সুলতান আবদুল্লাহ পূর্ববর্তী দু’জন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেছেন। তবে কোনো নির্বাচনে স্পষ্ট বিজয়ী হতে ব্যর্থ হওয়ার পর, এটা প্রথম কোনো ঘটনা।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুহিউদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেছিলেন মালয়েশিয়ার রাজা। ওই সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ জোটের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে পদত্যাগ করেছিলেন।

মাহাথিরের পদত্যাগের পর রাজা আল-সুলতান আবদুল্লাহ দেশের ২২২ জন আইন প্রণেতাদের সঙ্গে বৈঠকের ‍বিষয়ে অস্বাভাবিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ওই সময় নতুন সরকার গঠনের জন্য কার সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিলো তা নির্ধারণ করা হয়। এরপর মাহাথিরের সাবেক মিত্র মুহিউদ্দিন ইয়াসিনকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন মালয় রাজা।

এক বছরেরও কম সময় পরে মুহিউদ্দিনের নিজস্ব জোট ভেঙে যাওয়ার পরে, রাজা আইন প্রণেতাদের প্রত্যেককে একটি চিঠি জমা দিতে বলেছিলেন। ওই চিঠিতে তারা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাকে সমর্থন করছেন তা বলতে বলা হয়েছিল। এরপর ইসমাইল সাবরি ইয়াকবকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজা। ইসমাইল সাম্প্রতিক নির্বাচন পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন।

king abdullah malaysia

এরপর কী হবে?

মঙ্গলবার আনোয়ার ও মুহিউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন মালয় রাজা। এ সময় মুহিউদ্দিন বলেন, রাজা পরামর্শ দিয়েছিলেন যে তাকে এবং আনোয়ারকে একসঙ্গে একটি "ঐক্য সরকার" গঠন করতে হবে, কিন্তু তিনি রাজি হননি।

কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তা নির্ধারণ করতে রাজা বুধবার একটি বৈঠকের জন্য বারিসান ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স-এর ৩০ জন আইনপ্রণেতাকে ডেকেছেন।

বারিসান শনিবার তার সবচেয়ে খারাপ নির্বাচনী পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে। তবে দলটি সরকার গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কারণ, সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য আনোয়ার এবং মুহিউদ্দিনের সমর্থন প্রয়োজন। এ কারণে তাদের সরকার গঠন করতে বারিসানের সহায়তার দরকার। 

সূত্র : রয়টার্স

এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর