শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতা ইস্যুতে ভারত-বাংলাদেশের জোর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৩৭ পিএম

শেয়ার করুন:

উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতা ইস্যুতে ভারত-বাংলাদেশের জোর
ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ বৈঠক

ভারত ও বাংলাদেশের যৌথভাবে উগ্রবাদী ও মৌলবাদী শক্তির মোকাবেলা করা উচিৎ বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার এমন মন্তব্য করেন তিনি। মোদি মনে করেন যে এ উগ্রবাদ দু’দেশের মধ্যেকার পারস্পরিক বিশ্বাসকে আক্রমণ করার হুমকি দেয়। এ কারণে এ অপশক্তির বিরেুদ্ধে ভারত ও বাংলাদেশের একসাথে লড়া উচিৎ।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি এমন মন্তব্য করেন। এ সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন হওয়ার জন্য জোরালো অবস্থান নেন।


বিজ্ঞাপন


এ বৈঠক শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমরা উগ্রবাদ ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছি। একাত্তরের চেতনাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমাদের একসঙ্গে এমন শক্তির মোকাবিলা করা প্রয়োজন, যারা আমাদের পারস্পরিক বিশ্বাসে আঘাত হানতে চায়।‘

এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা বলেন, উগ্রবাদ ও মৌলবাদ হলো ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্য একটি বাধা ও নিরাপত্তা হুমকি। দু’দেশের শীর্ষ নেতারা এসব ইস্যুতে সহযোগিতা বাড়ানোর পন্থা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেছেন। 

৭ সমঝোতা স্মারক

এদিকে শীর্ষ নেতাদের আলোচনার পর  দু’দেশ রেলপথ, মহাকাশ প্রযুক্তি, পানি ভাগাভাগি ও ট্রানজিটের বিষয়ে সাতটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। 


বিজ্ঞাপন


এ সময় তিস্তা পানিবণ্টন নিয়ে সুরাহা হবে বলে আশা করেছিল বাংলাদেশ। মঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে তা নিয়ে আশ্বাসও মিলেছে। তবে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন এবং আরও ছ’টি বিষয় নিয়ে। হাসিনার ভারত সফরের দ্বিতীয় দিনে মোদি-হাসিনার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর দু’জনে একটি যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানেই ওই সাতটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার ঘোষণা করা হয়। যার অনতিবিলম্বে হাসিনা তার ধন্যবাদ জ্ঞাপক বক্তৃতায় বলেন, ভারত এবং বাংলাদেশের যে সম্পর্ক তা যে কোনো দু’টি দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের আদর্শ হতে পারে।

কিন্তু যে সাতটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার পর হাসিনা এ কথা বলেছেন, তার মূল বিষয়গুলো কী? ঠিক কোন কোন বিষয়ে ঢাকাকে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দিল্লি? জানা গেছে, এ তালিকায় যেমন কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টনের বিষয় রয়েছে, তেমনই বাংলাদেশের রেল, বিচার ব্যবস্থা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এমনকি পরমাণু খাত নিয়েও সমঝোতা স্মারক সই করেছে দু’দেশ।

প্রথমেই বলা যেতে পারে কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন সংক্রান্ত সমঝোতার কথা। দু’দেশের এ সমঝোতাকে ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেছেন মোদি। মোদি বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ৫৪টি নদীর ওপর দু’দেশের অর্থনীতি নির্ভর করে। স্থানীয় মানুষের জীবনও নির্ভর করে। এর মধ্যে কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে দু’দেশের যে সমঝোতা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশে সিলেট অঞ্চল ও ভারতের দক্ষিণ আসাম উপকৃত হবে।

উল্লেখ্য, কুশিয়ারা নদীতে বাধ সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে। নদীটি বন্যাপ্রবণ। সম্প্রতি কুশিয়ারা নদীর দু’তীরের ভাঙন বাংলাদেশ সরকারকে চিন্তায় ফেলেছে। ভারত জানিয়েছে, কুশিয়ারা থেকে ১৫৩ কিউসেক পানি নিয়ে নেবে ভারত। এতে ওই নদী থেকে হওয়া বন্যার সমস্যায় সিলেট অঞ্চল আর ভুগবে না বলেই আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার কথাও বলেছেন মোদি।

দু’দেশের দ্বিতীয় সমঝোতাটি হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে। এর ফলে বাংলাদেশের রেলব্যবস্থা আরও উন্নত হবে বলে মনে করছে ভারত।

যাত্রীবাহী ট্রেনের পাশাপাশি মালবাহী ট্রেন যথাযথভাবে চালানোর যে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রযুক্তি, তাতে বাংলাদেশকে সাহায্য করবে ভারত। এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের সার্বিক ‘আইটি অ্যাপ্লিকেশেন’-এর ক্ষেত্রেও সাহায্য করবে ভারত।

শুধুমাত্র তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রেই নয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের প্রশিক্ষণেও সাহায্য করবে ভারত। এটাই ভারত-বাংলাদেশের তৃতীয় সমঝোতা। এ সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীরা ভারতীয় রেলের ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও ভারতের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন শেখ হাসিনা। ভারত-বাংলাদেশের চতুর্থ সমঝোতায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা সংক্রান্ত কর্মকর্তাদের আরও উন্নত মানের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের আরও কুশলী হতে সাহায্য করবে ভারত।

পঞ্চম সমঝোতা স্মারক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত। ভারতের প্রধান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত সংস্থাগুলো বাংলাদেশের এ বিষয়ক মূল সংস্থাগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদান করবে। ফলে একসঙ্গে আরও উন্নতির পথে এগোবে দু’দেশ। এমনটাই দাবি করা হয়েছে এ সমঝোতা স্মারকে।

এছাড়া এ সমঝোতায় বলা হয়েছে, শিল্প গবেষণা সংক্রান্ত দু’দেশের সংস্থা নিজেদের মধ্যে গবেষণালব্ধ তথ্য আদান-প্রদান করবে।

মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রেও পারস্পরিক সহযোগিতার সমঝোতা হয়েছে দু’দেশের মধ্যে। এটা ভারত এবং বাংলাদেশের ষষ্ঠ সমঝোতা স্মারক।

টিভি সম্প্রচারের ক্ষেত্রেও ‘সমঝোতা স্মারক’ সই করেছেন মোদি-হাসিনা। প্রসার ভারতি ও বাংলাদেশ টেলিভিশন এ ব্যাপারে পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা করে চলবে।

তবে এ সাতটি সমঝোতা স্মারক ছাড়াও আরও কয়েকটি বিষয়ে দু’দেশের সহযোগিতার কতঅ উল্লেখ করেছেন মোদি।

মোদি বলেছেন, ‘আমরা তথ্য প্রযুক্তি, মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে সহযোগিতার পাশাপাশি পরমাণু শক্তির মতো বিষয় অর্থাৎ তরুণ প্রজন্ম যা নিয়ে বেশি ভাবে, ওই ব্যাপারে পারস্পরিক সহযোগিতার কথাও ভেবেছি। এছাড়া ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ‘পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইন’ নিয়েও কথাবার্তা এগিয়েছে।’

বাংলাদেশে উন্নয়নের সমস্ত ক্ষেত্রেই ভারতের সহযোগিতা পেয়ে থাকে। তবে দু’দেশ এবার একটি ‘কমপ্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ’ চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে। অর্থনৈতিক বিষয় ছাড়াও, উগ্রবাদ মোকাবিলা এবং আরও অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসের সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে তারা।

তবে এসব সত্ত্বেও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে দেওয়া বক্তৃতায় তিস্তার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। বলেছেন, ‘আমার আশা, তিস্তা নিয়েও দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই ১৯৭২ সালে তিস্তার পানি নিয়ে যৌথ নদী কমিশনের দ্বিতীয় সভায় আলোচনা হয়। ১৯৮৩ সালে অন্তর্বর্তীকালীন একটি চুক্তিও হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রাপ্য ছিল ৩৬ শতাংশ, ভারতের ৩৯ শতাংশ আর ২৫ শতাংশ পানি ছিলো নদীর নাব্যতা বজায় রাখার জন্য। ১৯৮৫ সালে ওই অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। ১৯৮৭ সালে মেয়াদ আরও দু’বছর বাড়ানো হয়েছিল। এরপর আর কোনো চুক্তি হয়নি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশা ওই চুক্তিও অদূর ভবিষ্যতে হবে।

সূত্র : এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া

এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর