শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

১১ ধর্ষকের মুক্তির ঘটনায় তীব্র আঘাত পেয়েছেন বিলকিস: আইনজীবী 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০২২, ০৫:২৫ পিএম

শেয়ার করুন:

১১ ধর্ষকের মুক্তির ঘটনায় তীব্র আঘাত পেয়েছেন বিলকিস: আইনজীবী 
বিলকিস বানু

গুজরাট দাঙ্গার সময় তাকে ধর্ষণকারী ১১ ব্যক্তিকে মুক্ত করা হয়েছে জানতে পেরে বিলকিস বানু তীব্র আঘাত পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। বিলকিসকে গণধর্ষণ করার দায়ে জড়িত ওই ব্যক্তিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, ১৫ বছর পর ওই ধর্ষকদের মুক্তি দেয় গুজরাট সরকার।

এ বিষয়ে এনডিটিভিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বিলকিসের আইনজীবী শোভা গুপ্তা বলেছেন, ‘পরিবারটি এখনও তাদের ওই পুরাতন ঘটনা ভুলতে পারেনি। ওই ঘৃণ্য ঘটনার কারণে তারা এখনও ভুগছে। এমনকি তারা এটাও জানে না যে এমন পরিস্থিততে তারা কী প্রতিক্রিয়া জানাবে। এছাড়া তারা পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নিয়েও ভাবছে না।’


বিজ্ঞাপন


গুজরাট দাঙ্গায় গণধর্ষণের শিকার বিলকিস বানুকে দীর্ঘ সময় ধরে আইনী লড়াইয়ে সহযোগিতা করেছেন শোভা গুপ্তা। তিনি বলেন, ‘বিলকিস ২১ বছর বয়সে একটি অকথ্য ভয়াবহতার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। তিনি সবেমাত্র ওই সকল আইনী ঝামেলা থেকে মুক্ত হচ্ছিলেন। এমন সময়ে ধর্ষকদের মুক্তির পর থেকে বিলকিস বানুর নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। ধর্ষকদের কারাদণ্ড হওয়ার সময় থেকে বছরের পর বছর বিলকিস বানু লুকিয়ে থেকেছেন। বারবার বাড়ি বদলেছেন। তাদের মুক্তির পর তিনি বুঝতে পারছেন না, পরের পদক্ষেপ কী নেবেন। পরিস্থিতি তাকে হতবাক করে দিয়েছে।’

২০০২ সালে দাঙ্গার সময় বিলকিসের তিন বছরের মেয়েসহ তার পরিবারের সাত জনকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটে বিলকিসের সামনে। তখন বিলকিসের বয়স ছিলো ২১। পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস ওই সময় গণধর্ষণের শিকার হন। বিলকিস বলেন, তার আরও সাত স্বজন ছিলেন। তাদের হত্যার পর নিখোঁজ ঘোষণা করা হয়।

সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা মুক্তি পাওয়ার দু’দিন পর গতকাল বুধবার প্রথমবারের মতো প্রতিক্রিয়া জানান বিলকিস। তিনি বলেন, তিনি প্রচণ্ড আহত হয়েছেন। এটি বিশ্বাসঘাতকতা। এ ঘটনায় তিনি অসাড় ও নির্বাক হয়ে গেছেন।

বিলকিসের আইনজীবী শোভা গুপ্তা 

১৮ বছর ধরে ন্যায়বিচার পেতে লড়াই করেছেন বিলকিস বানু। তিনি বলেন, ‘কোনো নারী নির্যাতনের ঘটনায় এভাবে বিচারকাজ শেষ হতে পারে? আমি আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতের ওপর বিশ্বাস করেছিলাম। আমি বিচার ব্যবস্থায় বিশ্বাস করেছিলাম। ধীরে ধীরে আমি ভয়ংকর অভিজ্ঞতা নিয়ে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হচ্ছিলাম। কিন্তু আমার দুঃখ, আমার বিশ্বাসে ধাক্কা খাওয়া কেবল আমার নিজের জন্য নয়। এটা সব নারীদের জন্য, যারা আদালতে ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করছেন।’

সংক্ষিপ্ত ওই বিবৃতিতে বিলকিস বানু তার সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে দোষীদের মুক্তি দেওয়ায় গুজরাট সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এত অন্যায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কেউ আমার নিরাপত্তার কথা ভাবেনি। আমার খোঁজ নেয়নি।’

গুজরাট সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বিলকিস বলেন, ‘কোনো ধরনের ভয় ছাড়া শান্তিতে জীবনযাপনের জন্য আমার অধিকার আমায় ফিরিয়ে দিন। আমি ও আমার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’

২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মুম্বাইয়ে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (সিবিআই) একটি বিশেষ আদালত ২০০২ সালে দাঙ্গার সময় বিলকিস বানুকে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও তার পরিবারের সাত সদস্যকে হত্যার দায়ে ১১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। পরে হাইকোর্টে এ রায় বহাল থাকে। দণ্ডিত ব্যক্তিরা ১৫ বছরের বেশি কারাভোগ করেন। এরপর তাদের একজন সাজা শেষ হওয়ার আগেই কারামুক্তি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। সম্প্রতি তাদের এক জন সুপ্রিম কোর্টে মুক্তির আবেদন করে। তার ভিত্তিতে গুজরাত সরকারকে বিষয়টি বিবেচনা করতে বলে শীর্ষ আদালত। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ পেয়েই একটি কমিটি গঠন করা হয় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। ওই কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন পঞ্চমহলের জেলাশাসক সুজল মায়াত্রা। সোমবার সুজল বলেন বলেন, ‘ওই কমিটি ১১ জনের মুক্তির সুপারিশ করেছিল। তারই ভিত্তিতে গুজরাট সরকারের পক্ষ থেকে তাদের মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়।’

কয়েক মাস আগে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছিল ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ উদ্‌যাপন উপলক্ষ্যে দোষী সাব্যস্ত বন্দীদের সাজার মেয়াদ কমানোর জন্য একটি বিশেষ ‘মুক্তি নীতি’ কার্যকর করা হবে। কিন্তু ওই নীতিতে ধর্ষণের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তি দেওয়া যাবে না বলেও তারা জানিয়েছিল। ওই পরিস্থিতিতে তাদের মুক্তি নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রশ্ন উঠছে।

সূত্র : এনডিটিভি

এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর