বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

হাজার বছরের সি’আন মসজিদ, চীনের মুসলিম ঐতিহ্যের স্মারক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ আগস্ট ২০২২, ০৪:৩৩ পিএম

শেয়ার করুন:

হাজার বছরের সি’আন মসজিদ, চীনের মুসলিম ঐতিহ্যের স্মারক

সি’আন গ্রেট মসজিদ হলো চীনের বৃহত্তম প্রাক-আধুনিক মসজিদগুলোর একটি। দাবি করা হয় যে মসজিদটি ৭৪২ খৃষ্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল। তবে এর বর্তমান রূপটি মূলত ১৩৮৪ খ্রিস্টাব্দে মিং রাজবংশের সম্রাট হংউয়ের শাসনামলে নির্মিত হয়। সি’আন মিউনিসিপ্যালিটির রেকর্ডে এমন তথ্য রয়েছে।

সি’আন মুসলিম কোয়ার্টারের মধ্যে এর অবস্থান। এই মসজিদ কমপ্লেক্সটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে পাঁচটি ভাগ রয়েছে। সেখানে রয়েছে বিশটিরও বেশি ভবন। প্রায় ১২ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে মসজিদ কমপ্লেক্সটি অবস্থিত। 


বিজ্ঞাপন


great mosque of xi'an

মসজিদটি ৩০ হুয়াজু লেনে অবস্থানের জন্য হুয়াজু জিয়াং মসজিদ নামেও পরিচিত। এটিকে কখনও কখনও গ্রেট ইস্টার্ন মসজিদও বলা হয়, কারণ এটি সি’আন মুসলিম কোয়ার্টারের পূর্ব অংশে অবস্থিত।

চীনের তাং রাজবংশের মহাজাগতিক রাজধানী হিসেবে চ্যাংআন-এ প্রচুর অ-হান বণিক এবং কারিগর সম্প্রদায় ছিল যারা সেখানে বাস করতেন। তাদের অনেকেই আজকের মধ্যপ্রাচ্য থেকে চীনে পাড়ি জমান। ৭৪২ খ্রিস্টাব্দের দিকে সম্রাট জুয়ানজং আদেশ দেন যে, শহরে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি উপাসনালয় নির্মাণ করা হবে। 

great mosque of xi'an


বিজ্ঞাপন


প্রায় একই সময়ে কোয়ানঝো এবং গুয়াংজুতে অভিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য মসজিদ তৈরি করা হচ্ছিল। সং সরকার কর্তৃক জারি করা মসজিদে স্থাপিত একটি সাম্রাজ্যিক ফলকের উপস্থিতির কারণে প্রাথমিক মসজিদটি সং রাজবংশের সময় ব্যবহৃত হয়েছিল বলে প্রমাণ রয়েছে।

তাং রাজবংশ এবং পরবর্তীতে সং রাজবংশের পতনের কারণে তাং রাজবংশে নির্মিত মূল মসজিদের বেশিরভাগ অংশ নষ্ট হয়ে যায়। মসজিদটি আধুনিক আকার নেওয়ার আগে অন্তত চারবার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল। ১২৬০ এর দশকে তৎকালীন ক্ষয়প্রাপ্ত মসজিদটি হুইহুই ওয়ানশানসি নামে ইউয়ান সরকার পুনর্নির্মাণ করে।

great mosque of xi'an

মঙ্গল বিজয়ের পর মুসলমানদের বড় একটি অংশ চীনে বাস করতে শুরু করে। অনেককে মঙ্গল ইউয়ান শাসকরা চীনে আমলা ও বণিক হিসেবে কাজ করার জন্য স্থানান্তরিত করেছিল। মঙ্গল শাসকদের দ্বারা চীনে আনা বিদেশি (যাদের বেশিরভাগই ছিল মুসলিম) জনসংখ্যাকে চীনা ভাষায় পিপল উইথ কালারড আইস নামে ডাকা হতো। 

চীনে চলে যাওয়া এবং স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করা সত্ত্বেও অনেক মুসলিম অভিবাসী এবং তাদের বংশধররা তাদের ধর্ম বা বিদেশি পরিচয় ত্যাগ করেনি। এই নতুন চীনা বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকেই স্থানীয় হান জনসংখ্যার সাথে আন্তঃবিবাহ করেছিলেন। এদের দ্বারাই চীনে জিনগতভাবে-বৈচিত্র্যময় জাতিগত হুই জনসংখ্যার ভিত্তি তৈরি হয়।

great mosque of xi'an

বর্তমানে মসজিদটিতে নামাজ আদা করেন মুসলিমরা। এদের বেশিরভাগই হুই জনগোষ্ঠী। সি’আনের বেশিরভাগ মুসলিম হানাফি মাজহাব মেনে চলেন। মসজিদটিতে একসঙ্গে এক হাজারের বেশি মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। এটি পর্যটনস্থল হলেও অমুসলিমদের মূল মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয় না। 

বর্তমানে দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদটি শহরের মুসলমানদের কাছে কেবল একটি ধর্মীয় স্থানই নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থানও। এটি অতীতে শহরের জাতিগত এবং ধর্মীয় বৈচিত্র্যের প্রতিনিধিত্ব করে।

great mosque of xi'an

চীনা সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে মসজিদ স্থাপত্যের উদাহরণ হলো সি’আনের গ্রেট মসজিদ। মসজিদটিতে এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সারা বিশ্বের মসজিদে সাধারণত থাকে। যেমন কিবলা এবং মিহরাব। তবে এটিতে চীনা স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য এবং সাংস্কৃতিক প্রতীকও রয়েছে।

সূত্র: চায়না হাইলাইট, উইকিপিডিয়া

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর