রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কূটনৈতিক আলোচনা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
রোববার ফ্লোরিডায় নিজের মার-এ-লাগো রিসোর্টে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে স্বাগত জানানোর সময় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। সূত্র: আল জাজিরা।
বিজ্ঞাপন
আলোচনায় বসার আগে মার-এ-লাগো রিসোর্টের বাইরে দাঁড়িয়ে দুই নেতা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রায় চার বছর ধরে চলা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসানে নতুন একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতেই এই বৈঠক।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয় আমরা আলোচনার একেবারে শেষ পর্যায়ে আছি। এখন দেখার বিষয় কী হয়। নইলে এই যুদ্ধ আরও দীর্ঘ হবে এবং আরো লাখো মানুষ মারা যাবে।’ তবে তিনি আলোচনার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করেননি।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এমন একটি চুক্তির ভিত্তি তৈরি হয়েছে, যা ইউক্রেনের জন্য ভালো, সবার জন্য ভালো।’
তিনি জানান, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে একটি ‘শক্তিশালী চুক্তি’ হবে, যেখানে ইউরোপীয় দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের হাতে দুটি আগ্রহী পক্ষ আছে। দুটি দেশই চায় যুদ্ধ শেষ হোক। ইউক্রেনের জনগণ যুদ্ধের অবসান চায়, রাশিয়ার জনগণও চায়, আর দুই দেশের নেতারাও চান।’
এদিকে ফ্লোরিডায় বৈঠকের আগের কয়েক দিনে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে হামলা জোরদার করে রাশিয়া।
ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, বৈঠকে আঞ্চলিক ছাড় নিয়ে আলোচনা হবে, যা এতদিন ইউক্রেনের জন্য ছিল ‘রেড লাইন’। তিনি জানান, তার আলোচক দল ও ট্রাম্পের উপদেষ্টারা ‘ধাপে ধাপে কীভাবে শান্তির পথে এগোনো যায়’ তা নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং রোববারের বৈঠকেও তা চলবে।
সাম্প্রতিক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মতো কিছু নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। জেলেনস্কি জানান, ভবিষ্যতে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে ন্যাটো-সদৃশ নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেলে ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আবেদন প্রত্যাহার করতেও প্রস্তুত।
তবে এসব আলোচনা নিয়ে ইউক্রেনের জনগণের মধ্যে গভীর সন্দেহ রয়েছে বলে মনে করেন ইউক্রেনিয়ান প্রিজম থিঙ্কট্যাংকের বিশ্লেষক ওলেকসান্দ্র ক্রাইয়েভ। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালেও আমরা এমন চেষ্টা করেছি। প্রতিবারই রাশিয়া যুদ্ধবিরতি ভেঙেছে। শান্তি প্রক্রিয়ার কথা তো বাদই দিলাম।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা শান্তিচুক্তির ওপর খুব বেশি আস্থা রাখছি না। আপাতত যুদ্ধবিরতিকে আলোচনার পূর্বশর্ত হিসেবে দেখছি। রাশিয়ার ওপর বিশ্বাস করা যায় না, তবে যুদ্ধবিরতি সম্ভব-সেই লক্ষ্যেই কাজ চলছে।’
আবারো অপ্রস্তুত ইউক্রেন
ট্রাম্পের আশাবাদী বক্তব্যের বিপরীতে ইউরোপজুড়ে পুতিনের উদ্দেশ্য নিয়ে তীব্র সন্দেহ রয়েছে। বিশেষ করে জেলেনস্কির ফ্লোরিডা সফরের ঠিক আগে কিয়েভে রাশিয়ার বড় ধরনের বোমাবর্ষণ সেই সন্দেহ আরো বাড়িয়েছে।
জেলেনস্কি আসার আগেই ট্রাম্প এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং বৈঠকের পর আবারো কথা বলার পরিকল্পনার কথা জানান।
এদিকে ইউক্রেনের কাছ থেকে ভূমি ছাড়ের আলোচনা হলেও তা জেলেনস্কির কাঙ্ক্ষিত কাঠামোর বাইরে। ক্রেমলিন ট্রাম্প–পুতিন ফোনালাপ নিয়ে আরো কঠোর অবস্থান জানিয়ে বলেছে, কেবল যুদ্ধবিরতি ‘সংঘাত দীর্ঘায়িত করবে’ এবং ইউক্রেনকে অবশ্যই ভূখণ্ড ছাড় দিতে হবে।
জেলেনস্কি গত সপ্তাহে বলেন, যুদ্ধ শেষের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্পাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারে তিনি রাজি, যদি রাশিয়াও সেনা সরিয়ে নেয় এবং এলাকাটি আন্তর্জাতিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে একটি নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চলে পরিণত হয়।
তবে পুতিন প্রকাশ্যে দাবি করেছেন, রুশ বাহিনীর দখলে থাকা চারটি অঞ্চলের পুরোটা এবং ২০১৪ সালে অবৈধভাবে দখল করা ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এমনকি রুশ বাহিনী যেসব এলাকা এখনো দখল করতে পারেনি, সেখান থেকেও ইউক্রেনকে সেনা সরিয়ে নিতে হবে বলে দাবি করেছেন তিনি। কিয়েভ এসব দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।
তবে ট্রাম্প আংশিকভাবে পুতিনের শর্তে সাড়া দিয়েছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, ডনবাস অঞ্চলের কিছু এলাকা ছাড় দিতে রাজি হলে এবং পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে আবার বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ফিরিয়ে আনতে অর্থনৈতিক প্রণোদনা দিলে পুতিনকে যুদ্ধ বন্ধে রাজি করানো সম্ভব।
এমআর

