যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠকের ঠিক আগমুহূর্তে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এসব হামলায় অন্তত দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩২ জন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। একই সঙ্গে রাজধানীর এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় তাপ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
শনিবার ভোর থেকে প্রায় ১০ ঘণ্টা কিয়েভে বিমান হামলার সতর্কতা জারি ছিল। এ সময় রাশিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় শহরজুড়ে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সূত্র: আল জাজিরা।
বিজ্ঞাপন
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাশিয়ার হামলায় কিয়েভের দিনিপ্রোভস্কি জেলায় ৭১ বছর বয়সী এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ছাড়া রাজধানীর কাছের শহর বিলাসের্কায় আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, হামলার সময় প্রায় ৫০০টি ড্রোন ও ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এগুলোর লক্ষ্য ছিল জ্বালানি অবকাঠামো ও বেসামরিক স্থাপনা।
দেশটির বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ডিটিইকের তথ্যমতে, হামলার কারণে কিয়েভ ও আশপাশের এলাকায় ১০ লাখের বেশি ঘর বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা বলেন, রাজধানীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় কোনো তাপ সরবরাহ নেই। এ সময় কিয়েভে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ছিল।
বিজ্ঞাপন
কিয়েভভিত্তিক সাংবাদিক ক্রিস্টিনা জেলেনিউক বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করে দেশটির জনগণকে চরম ভোগান্তিতে ফেলতে চাইছে।
শান্তি আলোচনা সামনে
কিয়েভে এমন সময় রাশিয়া এই হামলা করল, যখন রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেনস্কি। প্রায় চার বছর ধরে চলা যুদ্ধ কীভাবে শেষ করা যায়—সে বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে ওই বৈঠকে।
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, আলোচনায় নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও ভবিষ্যৎ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।
ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আগে শনিবার কানাডার হ্যালিফ্যাক্সে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জেলেনস্কি। বৈঠক শেষে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে যৌথ টেলিফোন আলোচনাও হয়।
এ সময় কানাডার প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেনের জন্য অতিরিক্ত ২৫০ কোটি কানাডীয় ডলার (প্রায় ১৮২ কোটি মার্কিন ডলার) অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠা নির্ভর করছে রাশিয়ার সদিচ্ছার ওপর।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ এক বিবৃতিতে বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার আগে ইউক্রেনের প্রতি ইউরোপীয় দেশগুলো ও কানাডার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারাও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে ইউক্রেনে ন্যায়সংগত ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করবেন বলে জানান তিনি।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েন বলেন, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় রেখে শান্তি প্রতিষ্ঠার সব উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানান।
রাশিয়া দাবি করছে, ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে গঠিত ডনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তাদের লক্ষ্য। সে কারণে ডোনেৎস্ক অঞ্চলের যেসব এলাকা এখনো পুরোপুরি দখল করতে পারেনি, সেখান থেকে ইউক্রেনকে সরে যেতে বলছে মস্কো।
যুদ্ধ স্থগিত চায় ইউক্রেন
যুক্তরাষ্ট্র সমঝোতার অংশ হিসেবে প্রস্তাব দিয়েছে, ইউক্রেন যদি ডোনেৎস্ক অঞ্চলের কিছু এলাকা ছাড়ে, তবে সেখানে একটি মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করা হতে পারে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, প্রয়োজনে এই প্রস্তাব গণভোটে তোলা হতে পারে।
তবে শনিবারের হামলার পর এক বিবৃতিতে জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া যুদ্ধ শেষ করতে আগ্রহী নয়। তিনি বলেন, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলাই তাদের প্রকৃত অবস্থান স্পষ্ট করে।
এদিকে রাশিয়া দাবি করেছে, তারা ডোনেৎস্ক অঞ্চলের মিরনোহরাদ ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলের হুলিয়াইপোলে দখল করেছে। তবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলছে, ওই এলাকাগুলোতে রুশ বাহিনীর অগ্রযাত্রা প্রতিহত করা হয়েছে।
এমআর

