রোববার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ভেনেজুয়েলার উপকূলে দ্বিতীয় তেলবাহী জাহাজ জব্দ করল যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৫০ এএম

শেয়ার করুন:

ভেনেজুয়েলার উপকূলে দ্বিতীয় তেলবাহী জাহাজ জব্দ করল যুক্তরাষ্ট্র
ক্যারিবীয় সাগরে বার্বাডোসের পূর্বে পানামার পতাকাবাহী ‘সেঞ্চুরিজ’ জাহাজের ওপর দিয়ে উড়ছে একটি মার্কিন সামরিক হেলিকপ্টার।

ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে দ্বিতীয়বারের মতো একটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে জারি করা তথাকথিত ‘সম্পূর্ণ অবরোধ’ কার্যকরের অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনাকে ‘চুরি ও জলদস্যুতা’ বলে অভিহিত করেছে ভেনেজুয়েলা সরকার।

শনিবার সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম জাহাজটি আটকানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, পেন্টাগনের সহায়তায় মার্কিন কোস্ট গার্ড এই অভিযান চালায়। খবর আল জাজিরার।


বিজ্ঞাপন


নোয়েম বলেন, নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলের অবৈধ পরিবহন বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র তৎপর থাকবে। তার ভাষায়, এই তেল ‘এই অঞ্চলে মাদকসন্ত্রাসে অর্থ জোগাতে ব্যবহৃত হচ্ছে’।

ভোররাতে চালানো এই অভিযান সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দ্বিতীয়বারের মতো ভেনেজুয়েলার আশপাশে কোনো তেলবাহী জাহাজ জব্দের ঘটনা। এ ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল, যখন অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে।

এর আগে গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপের নির্দেশ দেন।

ভেনেজুয়েলা সরকার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুতার গুরুতর উদাহরণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।


বিজ্ঞাপন


দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেলসি রদ্রিগেজ বলেন, আন্তর্জাতিক জলসীমায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী একটি বেসরকারি তেলবাহী জাহাজ দখল করেছে এবং এর নাবিকদের জোরপূর্বক আটক করা হয়েছে।

তিনি জানান, এ ঘটনায় ভেনেজুয়েলা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদসহ বিভিন্ন বহুপক্ষীয় সংস্থা এবং বিশ্বের বিভিন্ন সরকারের কাছে অভিযোগ দায়ের করবে।

ব্রিটিশ সামুদ্রিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ভ্যানগার্ড জানিয়েছে, জব্দ হওয়া জাহাজটি পানামার পতাকাবাহী সেঞ্চুরিজ বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্যারিবীয় সাগরে বার্বাডোসের পূর্বদিকে জাহাজটি আটক করা হয়।

ওয়াশিংটনভিত্তিক আইন সংস্থা হিউজেস হাবার্ডের অংশীদার জেরেমি প্যানার রয়টার্সকে বলেন, জাহাজটি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ছিল না। তার মতে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় না থাকা কোনো জাহাজ জব্দ করা ট্রাম্প প্রশাসনের ভেনেজুয়েলার ওপর চাপ আরো বাড়ানোর ইঙ্গিত দেয়।

রয়টার্স জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি পিডিভিএসএর অভ্যন্তরীণ নথি অনুযায়ী, সেঞ্চুরিজ জাহাজে প্রায় ১৮ লাখ ব্যারেল ভেনেজুয়েলার মেরেই অপরিশোধিত তেল ছিল, যা চীনে পাঠানো হচ্ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, জাহাজটি ‘ক্র্যাগ’ নামে ভুয়া পরিচয়ে ভেনেজুয়েলায় তেল বোঝাই করেছিল এবং এটি এমন এক ‘ছায়া বহর’-এর অংশ, যারা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে নিজেদের অবস্থান গোপন করে তেল পরিবহন করে।

যুক্তরাষ্ট্রের এসব পদক্ষেপে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রফতানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। গত সপ্তাহে প্রথম জাহাজ জব্দের পর কার্যত একটি অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। ফলে কয়েক মিলিয়ন ব্যারেল তেলবোঝাই জাহাজ জব্দের ঝুঁকি এড়াতে ভেনেজুয়েলার জলসীমাতেই অবস্থান করছে।

যদিও ভেনেজুয়েলা থেকে তেল পরিবহনকারী অনেক জাহাজ নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে, তবে ইরান ও রাশিয়া থেকে তেল বহনকারী কিছু জাহাজ এখনো নিষেধাজ্ঞামুক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরনের মতো কিছু কোম্পানি অনুমোদিত নিজস্ব জাহাজে ভেনেজুয়েলার তেল পরিবহন করছে।

মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র অঞ্চলটিতে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রশান্ত মহাসাগর ও ক্যারিবীয় সাগরে ভেনেজুয়েলার কাছাকাছি এলাকায় সন্দেহভাজন মাদক পাচারকারী নৌযানের ওপর একাধিক সামরিক হামলা চালানো হয়েছে। এসব হামলায় অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। মানবাধিকার সংগঠন ও আইন বিশেষজ্ঞরা এসব হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় স্থলভিত্তিক সামরিক অভিযানের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন।

এদিকে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রস্তুতির লক্ষ্য তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।

এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর