ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া করিনা মাচাদোকে শান্তি পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে নোবেল ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে সুইডেনে একটি ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেছেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। একইসঙ্গে পুরস্কারের অর্থ হিসেবে মাচাদোর কাছে স্থানান্তরিত হওয়া ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার (১.১৮ মিলিয়ন ডলার) জব্দ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
অ্যাসাঞ্জ বলেছেন, এ বছর মাচাদোকে পুরস্কার প্রদান সুইডিশ আইনের অধীনে তহবিলের ‘মোটামুটি অপব্যবহার’ এবং ‘যুদ্ধাপরাধের সহায়তা’ হিসেবে বিবেচিত।
বিজ্ঞাপন
নোবেল কমিটির তথ্যমতে, গণতান্ত্রের প্রচার এবং একনায়কতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ রূপান্তর অর্জনের সংগ্রামের জন্য মাচাদোকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
তবে অ্যাসাঞ্জের দাবি, ১৮৯৫ সালে নোবেল পুরস্কারের প্রতিষ্ঠাতা আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছাকে লঙ্ঘন করেছে। সেখানে বলা হয়েছিল, নোবেল পুরস্কারটি সেই ব্যক্তিকে দেওয়া উচিত, যিনি ‘জাতিগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধের জন্য, স্থায়ী সেনাবাহিনীর বিলুপ্তি বা হ্রাসের জন্য এবং শান্তি প্রচারের জন্য সর্বাধিক বা সর্বোত্তম কাজ করেছেন।’
অপরদিকে মাচাদোকে পুরষ্কার প্রদানের মাধ্যমে ‘শান্তির হাতিয়ারকে যুদ্ধের হাতিয়ারে’ রূপান্তরিত করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন অ্যাসাঞ্জ। তিনি বলেন, ‘মাচাদো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটনকে উস্কে দিয়েছেন।’
বিজ্ঞাপন
বুধবার দায়ের করা অ্যাসাঞ্জের ফৌজদারি অভিযোগে নোবেল ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যুক্ত ৩০ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে তহবিলের অপব্যবহার, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে সহায়তা এবং আগ্রাসনমূলক অপরাধে অর্থায়নের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সুইডিশ পুলিশ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে, তারা অভিযোগটি পেয়েছে। এটি সুইডিশ অর্থনৈতিক অপরাধ কর্তৃপক্ষের কাছেও জমা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক হৈচৈ ফেলে দেয় জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ প্রতিষ্ঠিত ওয়েবসাইট উইকিলিকস। এরপর তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে শুরু হয় গ্রেফতার তৎপরতা। গ্রেফতার এড়াতে এক পর্যায়ে অ্যাসাঞ্জ লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয়ে নেন এবং সেখানেই প্রায় সাত বছর কাটান।
২০১৯ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর গত পাঁচ বছর যুক্তরাজ্যের কারাগারে ছিলেন অ্যাসাঞ্জ। সেখান থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিষয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে আসছিলেন। পরে মার্কিন বিচার বিভাগের একটি আবেদন চুক্তির অংশ হিসেবে, গুপ্তচরবৃত্তি আইন লঙ্ঘনের একটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর অ্যাসাঞ্জ ২০২৪ সালে যুক্তরাজ্যের কারাগার থেকে মুক্তি পান এবং তার জন্মভূমি অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসেন।
সূত্র: আলজাজিরা
এমএইচআর

