আফ্রিকার দেশ সুদানের কাদুগলিতে ড্রোন হামলায় ছয় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে দেশটি।
সোমবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই হামলায় জাতিসংঘের অন্তর্বর্তীকালীন নিরাপত্তা বাহিনী ফর অ্যাবিয়েই (ইউএনআইএসএফএ)-তে কর্মরত বাংলাদেশের ছয়জন শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন এবং আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন, যা অত্যন্ত মর্মান্তিক।
বিবৃতিতে বলা হয়, নিহত শান্তিরক্ষীদের মৃত্যুতে পাকিস্তান বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে এবং এই শোকাবহ সময়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর পাশে সংহতি প্রকাশ করছে।
বিজ্ঞাপন

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, আন্তর্জাতিক পরিসরে সংঘাত প্রতিরোধ, বেসামরিক জনগণকে সুরক্ষা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীরা অগ্রভাগে থেকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। শান্তি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য কর্তব্যরত অবস্থায় ‘ব্লু হেলমেট’ শান্তিরক্ষীদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এই কাপুরুষোচিত হামলার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে দ্রুত তদন্ত ও দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান। পাশাপাশি, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে সব জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে দেশটি।
এরআগে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সুদানের আবেই জেলার কাদুগ্লিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর বাংলাদেশি কন্টিনজেন্টের ঘাঁটিতে ভয়াবহ ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী। হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৮ জন শান্তিরক্ষী।
নিহতরা হলেন— কর্পোরাল মো. মাসুদ রানা, সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম, সৈনিক শামীম রেজা, সৈনিক শান্ত মণ্ডল, মেস ওয়েটার জাহাঙ্গীর আলম এবং লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া।
বিজ্ঞাপন
এদিকে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত সুদানের সেনা-সরকার এ নিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে এ হামলা চালানোর জন্য সুদানের আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)-কে দায়ী করা হয়েছে। দেশটির সেনা ও সরকারপ্রধান জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহান শান্তিরক্ষীদের ওপর এ হামলাকে ‘বিপজ্জজনক উত্তেজনা বৃদ্ধি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিবৃতিতে।
তবে এখন পর্যন্ত আরএসএফ এ ঘটনায় কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের এপ্রিলে উত্তরপূর্ব আফ্রিকার সোনা ও জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ দেশ সুদানে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে সেনাবাহিনী ও আরএসএফ। সেই সংঘাত এখনও চলছে এবং গত আড়াই বছরে সুদানের রাজধানী খার্তুম, দারফুর প্রদেশসহ দেশজুড়ে নিহত হয়েছেন হাজার হাজার সুদানি নাগরিক এবং বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন আরও কয়েক লাখ। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ অন্যতম বৃহৎ অবদানকারী এবং বাংলাদেশি সৈন্যরা দীর্ঘদিন ধরে দেশটির অস্থিতিশীল অঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে।
সূত্র: ডন
এমএইচআর

