ইউরোপিয়ান নেতাদের ‘দুর্বল’ বলে সমালোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে ইউক্রেনকে দেওয়া সমর্থন কমিয়ে দিতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি বিষয়ক পত্রিকা পলিটিকোর সঙ্গে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ‘ক্ষয়িষ্ণু’ ইউরোপীয় দেশগুলো অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করতে অথবা রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ইউরোপীয় দেশগুলো কিয়েভকে ‘পতন না হওয়া পর্যন্ত’ যুদ্ধ করতে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘যুদ্ধের অবসানে যুক্তরাষ্ট্র যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেখানে নিজেদের ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছেন ইউরোপিয় নেতারা। তারা আশঙ্কা করছেন, দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে গৃহীত এসব পদক্ষেপ এই মহাদেশের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।’

ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইয়েভেট কুপার বলেছেন, ইউরোপে তিনি দুর্বলতা নয়, বরং শক্তিই দেখতে পান। সেই সঙ্গে ইউরোপের দেশগুলোর প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা এবং কিয়েভকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া তার উদাহরণ বলে বর্ণনা করেছেন।
ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কথা উল্লেখ করে কুপার আরও বলেন, এই দুই প্রেসিডেন্ট শান্তির জন্য কাজ করছেন। তবে আরেকজন প্রেসিডেন্ট, প্রেসিডেন্ট পুতিন বারবার ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত কেবল এই সংঘাতকে আরো বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছেন।
বিজ্ঞাপন
মূলত, শান্তি চুক্তিতে রাজী হওয়ার জন্য জেলেনস্কির ওপর চাপ বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছেন ট্রাম্প এবং মস্কোর কাছে কিছু ভূখণ্ড বা অঞ্চল ছেড়ে দিয়ে সহযোগিতা করতে আহ্বান জানিয়েছেন।
পরে মঙ্গলবার ভলোদিমির জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স- এ লিখেছেন, ইউক্রেন এবং ইউরোপ ‘যুদ্ধ অবসানের সম্ভাব্য পদক্ষেপের সব উপাদান’ নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। একই সঙ্গে পরিকল্পনার ইউক্রেনের এবং ইউরোপের অংশগুলো এখন আরো পরিপক্ক হয়েছে।
এরপরে সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, পরিকল্পনাগুলো বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে জমা দেওয়া হবে বলে তার ধারণা।
এদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের জন্য যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার বিষয়ে আলোচনা করতে ইউরোপিয়ান নেতারা লন্ডনে যেদিন একত্রিত হয়েছিলেন, তার ঠিক একদিন পর ইউরোপ সম্পর্কে প্রকাশ্যে সর্বশেষ সমালোচনা করলেন ট্রাম্প।
যুদ্ধের অবসানে ইউরোপ সাহায্য করতে পারে কিনা এমন প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, ‘তারা কথা বলে কিন্তু কোনো ফলাফল আসে না এবং এই যুদ্ধ কেবল চলছেই এবং চলছেই।’
গত কয়েক সপ্তাহে মার্কিন কর্মকর্তারা যুদ্ধের ইতি টানতে ইউক্রেনীয় ও রাশিয়ান কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি। তবে জেলেনস্কি ইউরোপিয়ান এবং ন্যাটো নেতাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভের আশঙ্কা অনুযায়ী ভবিষ্যতে ঝুঁকিতে পড়তে পারে, এমন কোনো চুক্তিতে সমর্থন করা থেকে বিরত থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই রোববার ট্রাম্প বলেছিলেন, জেলেনস্কিই শান্তির পথে প্রধান বাধা।
পলিটিকোর সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইউক্রেনের আলোচক বা সমঝোতাকারীরা যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত প্রস্তাবকে 'পছন্দ করেছে'। কিন্তু জেলেনস্কি এখনো সেটি পড়েও দেখেননি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
এদিকে ন্যাটো মহাসচিবের এক মন্তব্যের জেরে ট্রাম্প বলেন, ‘ন্যাটো আমাকে ড্যাডি বলে ডাকে। তবে তারা কথা বলে কিন্তু কাজ করে না। আর যুদ্ধ কেবল চলতেই থাকে।’
প্রসঙ্গত, প্রায় চার বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্র যে পরিকল্পনা করছে তা নিয়ে ইউরোপের বহু দেশে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে ইউক্রেনের কিছু ভূখন্ড রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে হতে পারে এবং ভবিষ্যতে ইউক্রেন আবার রাশিয়ার হামলার ঝুঁকিতে থাকবে।
সূত্র: বিবিসি
এমএইচআর

