বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘বাংলাদেশ সীমান্তে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি হচ্ছে’, বিএসএফকে মমতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৪২ পিএম

শেয়ার করুন:

‘ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি হচ্ছে’

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) প্রতি পরোক্ষ ইঙ্গিত করে ‘ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে ভারতীয় নাগরিকদের প্রতিবেশী বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে নিন্দাও জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলায় প্রশাসনিক এক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, ‘ভারতের নাগরিকদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি রাজ্য পুলিশকে বলবো, ভয় পাবেন না। একটু সক্রিয় হবেন। নাকা (তল্লাশি) অভিযানে জোর দিতে হবে।’


বিজ্ঞাপন


বাসিন্দাদের হয়রানির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘কোচবিহার সীমান্ত জেলা। সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। কোন ধরনের বাড়াবাড়ি বরদাশত করা হবে না। কেউ বাংলা বললেই সে বাংলাদেশি নয়। বাংলাদেশ একটি দেশ, আর পশ্চিমবঙ্গ একটি রাজ্য। উত্তর প্রদেশে অনেকে উর্দু বলেন। পাকিস্তানিরাও উর্দু বলেন। পাকিস্তানে পাঞ্জাব আছে, ভারতে পাঞ্জাব আছে—দুই জায়গাতেই মানুষ পাঞ্জাবি বলেন। তবে শুধু বাংলার বাসিন্দাদের হয়রানি করা হচ্ছে।’

image

সম্প্রতি সোনালি বিবি নামে এক ভারতীয় নারীকে দেশে প্রত্যাবর্তের প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ‘সোনালি বিবিকে আমরা জেল থেকে ছাড়িয়ে এনেছি। খাবার টাকা পাঠিয়েছি। আরও চারজন এখনও আটকে রয়েছে। তাদেরও ছাড়িয়ে আনব।’ 

এর আগে লোকসাভায় বন্দে মাতরম আলোচনার সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রখ্যাত বাংলা সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে ‘বঙ্কিমদা’ বলে সম্বোধন করার তীব্র সমালোচনা করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। 


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, ‘আপনারা (বিজেপি) যা ভাবছেন, তাই করছেন। এর আগেও রাজ্যসভায় ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল ‘জয় হিন্দ’, ‘বন্দে মাতরম’ চলবে না। শুনলাম তারা নেতাজি, গান্ধীজি, রামমোহনকেও পছন্দ করেন না! দেশের ইতিহাস জানেন? বাংলার অবদান তারা (বিজেপি) জানে?’

তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘যেন মনে হচ্ছে হরি দা, শ্যাম দা- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়- যিনি জাতীয় গান রচনা করেছিলেন, তাঁকে এটুকু সম্মান দেবেন না? আপনাদের তো মাথানীচু করে নাকখত দেওয়া উচিত জনগণের কাছে। তাতেও ক্ষমা হবে না। আপনারা অসম্মান করেছেন দেশের ইতিহাসকে, দেশের সংস্কৃতিকে, দেশের আন্দোলনকে। স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলা পথ দেখিয়েছে। কোথায় ছিলেন আপনারা? রামমোহন থেকে ক্ষুদিরাম বাংলার মনীষীদের ইচ্ছাকৃত অপমান করা হচ্ছে। বাংলাকে খাটো করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাংলেন, বাংলার মানুষ আপনাদের ক্ষমা করে না।’ 

মমতা আরও বলেন, অন্য কোনও রাজ্যের সংস্থা সঠিক প্রক্রিয়া না মেনে পশ্চিমবঙ্গে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে না। কোনও মামলায় কেউ অভিযুক্ত হলে তদন্ত হবে। আসাম থেকে কিছু লোককে নাকি বিদেশি আইনে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ ভ্যান টহল কমে গেছে। আগে এক এলাকায় তিন-চারবার পুলিশ ভ্যান টহল দিত। এখন দেখা যায় না। এটা ঠিক নয়। রাত-দিন টহল হওয়া উচিত।

রাজ্যের সব দফতরকে ভোটার তালিকা নিবিড় সংশোধনী (এসআইআর) চলাকালীন বুথ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের (বিএলও) সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসকদের ভোটার তালিকায় যথাযথ নাম অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতেও বলেন তিনি। মমতা বলেন, অনেক নাম ঠিকমতো অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। অনেকে বাইরে (বাংলার বাইরে) বিয়ে করেছে। অভিবাসী শ্রমিকদেরও সমস্যা আছে।

তিনি বাসিন্দাদের এসআইআর শুনানিতে প্রয়োজনীয় নথি সঙ্গে রাখার পরামর্শ দিয়ে মমতা বলেন, রাজ্যে ইতোমধ্যে ৪১ জন মারা গেছেন, যাদের মধ্যে তিনজন বিএলও। মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, কেরালাতেও এসআইআর চলাকালে মানুষ মারা গেছেন। আগে এসআইআর শেষ হতে দুই বছর লাগত, এখন দুই মাসে শেষ করা হচ্ছে। কীভাবে সম্ভব? তারা (বিজেপি) যা ইচ্ছা তাই করছে।

বিজেপিকে নিশানা করে মমতা আরও বলেন, ‘বিজেপি এজেন্সি গুলোকে হাতের পুতুল বানিয়ে রেখেছে। আমি আজ এখানে ভোট চাইতে আসিনি। বুকে শক্তি নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। কেউ আপনাদের বাংলা থেকে বিতাড়িত করতে পারবেন না। কেন্দ্রীয় সরকার অত্যাচারী, স্বৈরাচারীর সরকার। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। এরা সংবিধান গণতন্ত্র বিচার ব্যাবস্থাকে শেষ করতে চাইছে।’

সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

এমএইচআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর